ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
রমজানে মাধ্যমিক স্কুল খোলা থাকবে ১৫ দিন, প্রাথমিক স্কুল ১০ দিন খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে টেকনাফ সীমান্তের হোয়াইক্যং এলাকা দিয়ে আজ অস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে মিয়ানমারের সেনা সাদ সাহেব রুজু করার পর দেওবন্দের মাসআলা খতম হয়ে গেছে : মাওলানা আরশাদ মাদানী চলছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিনের বয়ান পুলিশ সদস্যসহ বিশ্ব ইজতেমায় ৭ জনের মৃত্যু বর্তমান সরকারের সঙ্গে সব দেশ কাজ করতে চায়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়পুরহাটে স্কুলছাত্র হত্যায় ১১ জনের মৃত্যুদণ্ড দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু ‘শরীফ থেকে শরীফা’ গল্প পর্যালোচনায় কমিটি গঠন করলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়

‘বাবা, ঈদে আমাদের কিচ্ছু লাগবে না, তুমি সুস্থ হয়ে বাড়ি আসো’

  • নিউজ ডেস্ক
  • প্রকাশিত : ১১:১৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ জুলাই ২০২০
  • ১৪০৪ পঠিত

করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী আরিফুর রহমান। এবারের ঈদ তাঁকে হাসপাতালেই কাটাতে হবে। প্রতি বছরের মতো এবার ঈদ ঘিরে ব্যস্ততা নেই, নেই আনন্দ আয়োজন। আগামীকাল শনিবার পবিত্র ঈদুল আজহা। তবে তিনি মনে করেন, করোনায় বেঁচে ফেরাটাই এখন পরিবারের কাছে ঈদের আনন্দের মতো।

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার নবীগঞ্জের বাসিন্দা এই ব্যবসায়ী গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ২৭ জুলাই শ্বাসকষ্টসহ করোনাভাইরাসে সংক্রমণের উপসর্গ নিয়ে শিমরাইল সাজেদা হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। পরিবার ছেড়ে কখনো ঈদ করেননি। তিনি ও তাঁর চাচা মিলে কোরবানির পশু কিনতে হাটে যান। এবারই প্রথম তিনি হাটে যেতে পারছেন না। ঈদের দিন পরিবার থেকে দূরে হাসপাতালে থাকতে হবে ভেবেই খুব মন খারাপ হচ্ছে তাঁর।

আরিফুরের স্ত্রী নাদিয়া আক্তার বলেন, ‘বাড়িতে কারো মুখে হাসি নেই। স্বামী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে না আসা পর্যন্ত আমরা সবাই চিন্তায় আছি। বড় মেয়ে দিঘি রাতে ঘুমাতে গিয়ে বিছানায় এপাশ-ওপাশ করে, বাবাকে খোঁজে।’ আরিফুর বলেন, তাঁর দুই মেয়ে। বড়টার বয়স ৯ বছর, ছোটটার বয়স সাত মাস। বড় মেয়ে তাঁকে ফোন করে কান্নাকাটি করে আর বলে, ‘বাবা ঈদে আমাদের কিচ্ছু লাগবে না। তুমি সুস্থ হয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসো।’

এদিকে প্রতি বছর পবিত্র ঈদুল আজহা পরিবারের সঙ্গে কাটান যশোর কালেক্টরেট স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক ইসমাঈল হোসেন। তবে এবার তিনি নারায়ণগঞ্জের হাসপাতালে ভর্তি। ২৭ জুলাই করোনাভাইরাসে সংক্রমণের উপসর্গ নিয়ে নারায়ণগঞ্জের সাজেদা হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। তাঁর সঙ্গে হাসপাতালে আছেন তাঁর স্ত্রী গৃহিণী সুমাইয়া সুলতানা। তাদের ঈদ কাটবে হাসপাতালেই।

ইসমাইল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই হাসপাতালে। তাদের দুই সন্তান যশোরে। এ কারণে এবার কোরবানি দিতে পারছেন না। গত কোরবানির ঈদ পরিবারের সবার সঙ্গে উদযাপন করলেও এবারের পরিস্থিতিটা একবারে অন্যরকম। পরিবারের সবাই উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় আছে। তিনি বলেন, ‘আমার ছাত্র এই হাসপাতালের চিকিৎসক। এ কারণে যশোর থেকে চিকিৎসার জন্য এখানে ভর্তি হয়েছি।’

গতকাল বৃহস্পতিবার জনতা ব্যাংক ঢাকার প্রধান কার্যালয়ের সহকারী প্রিন্সিপাল অফিসার মাকসুদুল আলম করোনা পজিটিভ হয়ে সাজেদা আইসোলেশন হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনি বলেন, এই প্রথম ঈদের সময় তিনি পরিবার থেকে দূরে। যৌথভাবে তাঁরা কোরবানি দেন। পরিবারে স্ত্রী নাজিয়া আফরিন, সাড়ে ৪ বছর বয়সী মেয়ে আদিশা ও ২ বছর বয়সী মেয়ে আফসিন আছে।

নারায়ণগঞ্জ শহরের নাগবাড়ি এলাকার শেরে বাংলা শিশু একাডেমীর অধ্যক্ষ মাহমুদুল আলম শ্বাসকষ্ট নিয়ে ২৩ জুলাই হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনি বলেন, ‘ঈদ করার মতো পরিস্থিতি নেই। পরিবারের সবাই দুশ্চিন্তায় আছে। তাদের যতই আনন্দ ও হাসি–খুশি থাকতে বলি, তাদের মনে আনন্দ নেই।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে অবস্থিত ৫০ শয্যার সাজেদা আইসোলেশন হাসপাতালে ২৪ জন কোভিড–১৯ রোগীসহ ভর্তি আছেন ৫০ জন। আইসিইউতে আছেন ৪ জন। শহরের খানপুরে অবস্থিত ৩০০ শয্যা করোনা সরকারি হাসপাতালে আইসিইউতে সাতজনসহ ২১ জন রোগী ভর্তি আছেন। এ পর্যন্ত জেলায় দুই চিকিৎসকসহ ১২৬ জন কোভিড–১৯ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন ৫ হাজার ৮৮০ জন। আইসোলেশনে সুস্থ হয়েছেন ৫ হাজার ৪৯৫ জন।

এ বিষয়ে সাজেদা হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল ইনচার্জ ইউশা ইবনে নাকিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঈদে কোভিড–১৯ রোগীদের চিকিৎসা বিঘ্নিত হবে না। আমরা রোগীদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেব। তাদের জন্য ঈদের দিন বিশেষ খাবারের আয়োজন থাকবে।’

জেলা করোনা–বিষয়ক ফোকাল পারসন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনা মহামারি চলাকালে এটা আমাদের দ্বিতীয় ঈদ। যাঁরা আমাদের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি আছেন, তাঁরা যাতে মানসিকভাবে ভেঙে না পড়েন; সেদিক আমরা নজর রাখছি। ঈদের দিন আমাদের বিশেষ কিছু আয়োজনও থাকবে।’

Tag :
জনপ্রিয়

রমজানে মাধ্যমিক স্কুল খোলা থাকবে ১৫ দিন, প্রাথমিক স্কুল ১০ দিন

‘বাবা, ঈদে আমাদের কিচ্ছু লাগবে না, তুমি সুস্থ হয়ে বাড়ি আসো’

প্রকাশিত : ১১:১৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ জুলাই ২০২০

করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী আরিফুর রহমান। এবারের ঈদ তাঁকে হাসপাতালেই কাটাতে হবে। প্রতি বছরের মতো এবার ঈদ ঘিরে ব্যস্ততা নেই, নেই আনন্দ আয়োজন। আগামীকাল শনিবার পবিত্র ঈদুল আজহা। তবে তিনি মনে করেন, করোনায় বেঁচে ফেরাটাই এখন পরিবারের কাছে ঈদের আনন্দের মতো।

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার নবীগঞ্জের বাসিন্দা এই ব্যবসায়ী গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ২৭ জুলাই শ্বাসকষ্টসহ করোনাভাইরাসে সংক্রমণের উপসর্গ নিয়ে শিমরাইল সাজেদা হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। পরিবার ছেড়ে কখনো ঈদ করেননি। তিনি ও তাঁর চাচা মিলে কোরবানির পশু কিনতে হাটে যান। এবারই প্রথম তিনি হাটে যেতে পারছেন না। ঈদের দিন পরিবার থেকে দূরে হাসপাতালে থাকতে হবে ভেবেই খুব মন খারাপ হচ্ছে তাঁর।

আরিফুরের স্ত্রী নাদিয়া আক্তার বলেন, ‘বাড়িতে কারো মুখে হাসি নেই। স্বামী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে না আসা পর্যন্ত আমরা সবাই চিন্তায় আছি। বড় মেয়ে দিঘি রাতে ঘুমাতে গিয়ে বিছানায় এপাশ-ওপাশ করে, বাবাকে খোঁজে।’ আরিফুর বলেন, তাঁর দুই মেয়ে। বড়টার বয়স ৯ বছর, ছোটটার বয়স সাত মাস। বড় মেয়ে তাঁকে ফোন করে কান্নাকাটি করে আর বলে, ‘বাবা ঈদে আমাদের কিচ্ছু লাগবে না। তুমি সুস্থ হয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসো।’

এদিকে প্রতি বছর পবিত্র ঈদুল আজহা পরিবারের সঙ্গে কাটান যশোর কালেক্টরেট স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক ইসমাঈল হোসেন। তবে এবার তিনি নারায়ণগঞ্জের হাসপাতালে ভর্তি। ২৭ জুলাই করোনাভাইরাসে সংক্রমণের উপসর্গ নিয়ে নারায়ণগঞ্জের সাজেদা হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। তাঁর সঙ্গে হাসপাতালে আছেন তাঁর স্ত্রী গৃহিণী সুমাইয়া সুলতানা। তাদের ঈদ কাটবে হাসপাতালেই।

ইসমাইল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই হাসপাতালে। তাদের দুই সন্তান যশোরে। এ কারণে এবার কোরবানি দিতে পারছেন না। গত কোরবানির ঈদ পরিবারের সবার সঙ্গে উদযাপন করলেও এবারের পরিস্থিতিটা একবারে অন্যরকম। পরিবারের সবাই উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় আছে। তিনি বলেন, ‘আমার ছাত্র এই হাসপাতালের চিকিৎসক। এ কারণে যশোর থেকে চিকিৎসার জন্য এখানে ভর্তি হয়েছি।’

গতকাল বৃহস্পতিবার জনতা ব্যাংক ঢাকার প্রধান কার্যালয়ের সহকারী প্রিন্সিপাল অফিসার মাকসুদুল আলম করোনা পজিটিভ হয়ে সাজেদা আইসোলেশন হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনি বলেন, এই প্রথম ঈদের সময় তিনি পরিবার থেকে দূরে। যৌথভাবে তাঁরা কোরবানি দেন। পরিবারে স্ত্রী নাজিয়া আফরিন, সাড়ে ৪ বছর বয়সী মেয়ে আদিশা ও ২ বছর বয়সী মেয়ে আফসিন আছে।

নারায়ণগঞ্জ শহরের নাগবাড়ি এলাকার শেরে বাংলা শিশু একাডেমীর অধ্যক্ষ মাহমুদুল আলম শ্বাসকষ্ট নিয়ে ২৩ জুলাই হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনি বলেন, ‘ঈদ করার মতো পরিস্থিতি নেই। পরিবারের সবাই দুশ্চিন্তায় আছে। তাদের যতই আনন্দ ও হাসি–খুশি থাকতে বলি, তাদের মনে আনন্দ নেই।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে অবস্থিত ৫০ শয্যার সাজেদা আইসোলেশন হাসপাতালে ২৪ জন কোভিড–১৯ রোগীসহ ভর্তি আছেন ৫০ জন। আইসিইউতে আছেন ৪ জন। শহরের খানপুরে অবস্থিত ৩০০ শয্যা করোনা সরকারি হাসপাতালে আইসিইউতে সাতজনসহ ২১ জন রোগী ভর্তি আছেন। এ পর্যন্ত জেলায় দুই চিকিৎসকসহ ১২৬ জন কোভিড–১৯ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন ৫ হাজার ৮৮০ জন। আইসোলেশনে সুস্থ হয়েছেন ৫ হাজার ৪৯৫ জন।

এ বিষয়ে সাজেদা হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল ইনচার্জ ইউশা ইবনে নাকিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঈদে কোভিড–১৯ রোগীদের চিকিৎসা বিঘ্নিত হবে না। আমরা রোগীদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেব। তাদের জন্য ঈদের দিন বিশেষ খাবারের আয়োজন থাকবে।’

জেলা করোনা–বিষয়ক ফোকাল পারসন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনা মহামারি চলাকালে এটা আমাদের দ্বিতীয় ঈদ। যাঁরা আমাদের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি আছেন, তাঁরা যাতে মানসিকভাবে ভেঙে না পড়েন; সেদিক আমরা নজর রাখছি। ঈদের দিন আমাদের বিশেষ কিছু আয়োজনও থাকবে।’