ঢাকা , মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
রমজানে মাধ্যমিক স্কুল খোলা থাকবে ১৫ দিন, প্রাথমিক স্কুল ১০ দিন খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে টেকনাফ সীমান্তের হোয়াইক্যং এলাকা দিয়ে আজ অস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে মিয়ানমারের সেনা সাদ সাহেব রুজু করার পর দেওবন্দের মাসআলা খতম হয়ে গেছে : মাওলানা আরশাদ মাদানী চলছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিনের বয়ান পুলিশ সদস্যসহ বিশ্ব ইজতেমায় ৭ জনের মৃত্যু বর্তমান সরকারের সঙ্গে সব দেশ কাজ করতে চায়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়পুরহাটে স্কুলছাত্র হত্যায় ১১ জনের মৃত্যুদণ্ড দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু ‘শরীফ থেকে শরীফা’ গল্প পর্যালোচনায় কমিটি গঠন করলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়

বেশির ভাগ ঘরে বুকসমান পানি, জনশূন্য নাওভাঙা চর

  • নিউজ ডেস্ক
  • প্রকাশিত : ০৬:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ জুলাই ২০২০
  • ১২১১ পঠিত

জামালপুর শহরের ফৌজদারি এলাকার উত্তর পাশে নাওভাঙা চর। ব্রহ্মপুত্র নদবেষ্টিত এই চরে দেড় শতাধিক পরিবার বসবাস করে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়া অব্যাহত থাকায় এই চরের সব ঘরবাড়িতে টিনের চাল পর্যন্ত পানি। এখানকার সব বাসিন্দা দিনমজুর, রিকশাচালক ও কৃষক। তাঁরা প্রায় সবাই হতদরিদ্র। তাঁদের হাতে কোনো টাকাপয়সাও নেই। দুই দফায় টানা ২২ দিন ধরে ঘরবাড়িতে পানি। ফলে এসব মানুষ বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও জামালপুর শহর রক্ষা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন।

শহরের ফৌজদারি থেকে নাওভাঙা চরের উদ্দেশে নৌকায় যাত্রা শুরু। চরে প্রবেশ করতেই দেখা গেল, টিনের চাল পর্যন্ত পানি। অনেক ঘরের টিনও ভেঙে গেছে। অনেকের ঘরের ভেতর গলাসমান পানি। অনেক ঘরে বুকসমান। অনেকের খড়ের স্তূপ ডুবে রয়েছে। কোথাও লোকজন নেই। সবখানে পানি আর পানি। নৌকা নিয়ে হাসনা বেগম ও ঈমান আলী ঘরবাড়ি দেখতে এসেছিলেন। এই দম্পতি জানালেন, তাঁরা টানা ২২ দিন ঘরবাড়িছাড়া। কোনো কাজকর্ম নেই। হাতে কোনো টাকাও নেই। শহর রক্ষা বাঁধের ওপর কোনো রকম আশ্রয় নিয়েছেন। শাক-ভাত খেয়ে কোনো রকম জীবন চলছে। তাঁরা গত রোববার ত্রাণের ৭ কেজি চাল পেয়েছিলেন। কিন্তু সেই চাল খাওয়া ভাগ্যে জোটেনি। চালগুলো পচা ছিল। ছিল পোকায় ভর্তি। ওই পচা চাল ছাড়া আর কোনো সহযোগিতা পাননি।

সোমবার বেলা একটার দিকে বন্যাদুর্গত জামালপুর সদর উপজেলার নাওভাঙা চরের বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওপর বিলকিস বেগমের সঙ্গে দেখা হয়। বিলকিস বেগম বলেন, ‘ছাওয়াল-পাওয়ালেরা কষ্টে আছে, কোনো কামকাজ নাই। খুব কষ্টে আছি গো বাবা। কোনোমতে দুই-এক বেলা শাক-ভাত খাইয়া বাঁচি আছি। বান্ধে কেউ খোঁজ নিবার আহে নাই। আমগরে কপালে কোন্ডাই জোটে নাই। সব হানেই বান। কোঠাও ঘাস নাই। গরু-বাছুরেরও কষ্ট।’

মধ্যবয়সী শিল্পি বেগম বলেন, ‘ছাওয়াল-পাওয়াল ও গরু-বাছুর নিয়া খুব দুর্ভোগে আছি। এত কষ্ট কইরা আছি। খেতে পাট আছিল, এডাও নষ্ট হয়ে গেছে। গরু-বাছুর আমাগোর সম্পত্তি। এডাও বাঁচাতে পারুম কি না? সব হানে পানি। কোঠাও খেড় ও ঘাস নাই। নিজেরাই বাঁচুম কেমনে, গরু-বাছুরই বাঁচামু কেমনে। ২২ দিন ধরে এই বান্ধে আছি। কিছুই পাইলাম না।’

বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ থেকে ফেরার পথে দেখা গেল জামালপুর শহর রক্ষা বাঁধে শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। সবাই শহর রক্ষা বাঁধের ওপর ছাপরা তুলে আশ্রয় নিয়েছে।

জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোকলেছুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, শহর রক্ষা বাঁধে আশ্রয় নেওয়া পরিবারের মধ্যে চাল বিতরণ করা হয়েছে। তবে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে দ্রুত সময়ের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হবে।

Tag :
জনপ্রিয়

রমজানে মাধ্যমিক স্কুল খোলা থাকবে ১৫ দিন, প্রাথমিক স্কুল ১০ দিন

বেশির ভাগ ঘরে বুকসমান পানি, জনশূন্য নাওভাঙা চর

প্রকাশিত : ০৬:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ জুলাই ২০২০

জামালপুর শহরের ফৌজদারি এলাকার উত্তর পাশে নাওভাঙা চর। ব্রহ্মপুত্র নদবেষ্টিত এই চরে দেড় শতাধিক পরিবার বসবাস করে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়া অব্যাহত থাকায় এই চরের সব ঘরবাড়িতে টিনের চাল পর্যন্ত পানি। এখানকার সব বাসিন্দা দিনমজুর, রিকশাচালক ও কৃষক। তাঁরা প্রায় সবাই হতদরিদ্র। তাঁদের হাতে কোনো টাকাপয়সাও নেই। দুই দফায় টানা ২২ দিন ধরে ঘরবাড়িতে পানি। ফলে এসব মানুষ বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও জামালপুর শহর রক্ষা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন।

শহরের ফৌজদারি থেকে নাওভাঙা চরের উদ্দেশে নৌকায় যাত্রা শুরু। চরে প্রবেশ করতেই দেখা গেল, টিনের চাল পর্যন্ত পানি। অনেক ঘরের টিনও ভেঙে গেছে। অনেকের ঘরের ভেতর গলাসমান পানি। অনেক ঘরে বুকসমান। অনেকের খড়ের স্তূপ ডুবে রয়েছে। কোথাও লোকজন নেই। সবখানে পানি আর পানি। নৌকা নিয়ে হাসনা বেগম ও ঈমান আলী ঘরবাড়ি দেখতে এসেছিলেন। এই দম্পতি জানালেন, তাঁরা টানা ২২ দিন ঘরবাড়িছাড়া। কোনো কাজকর্ম নেই। হাতে কোনো টাকাও নেই। শহর রক্ষা বাঁধের ওপর কোনো রকম আশ্রয় নিয়েছেন। শাক-ভাত খেয়ে কোনো রকম জীবন চলছে। তাঁরা গত রোববার ত্রাণের ৭ কেজি চাল পেয়েছিলেন। কিন্তু সেই চাল খাওয়া ভাগ্যে জোটেনি। চালগুলো পচা ছিল। ছিল পোকায় ভর্তি। ওই পচা চাল ছাড়া আর কোনো সহযোগিতা পাননি।

সোমবার বেলা একটার দিকে বন্যাদুর্গত জামালপুর সদর উপজেলার নাওভাঙা চরের বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওপর বিলকিস বেগমের সঙ্গে দেখা হয়। বিলকিস বেগম বলেন, ‘ছাওয়াল-পাওয়ালেরা কষ্টে আছে, কোনো কামকাজ নাই। খুব কষ্টে আছি গো বাবা। কোনোমতে দুই-এক বেলা শাক-ভাত খাইয়া বাঁচি আছি। বান্ধে কেউ খোঁজ নিবার আহে নাই। আমগরে কপালে কোন্ডাই জোটে নাই। সব হানেই বান। কোঠাও ঘাস নাই। গরু-বাছুরেরও কষ্ট।’

মধ্যবয়সী শিল্পি বেগম বলেন, ‘ছাওয়াল-পাওয়াল ও গরু-বাছুর নিয়া খুব দুর্ভোগে আছি। এত কষ্ট কইরা আছি। খেতে পাট আছিল, এডাও নষ্ট হয়ে গেছে। গরু-বাছুর আমাগোর সম্পত্তি। এডাও বাঁচাতে পারুম কি না? সব হানে পানি। কোঠাও খেড় ও ঘাস নাই। নিজেরাই বাঁচুম কেমনে, গরু-বাছুরই বাঁচামু কেমনে। ২২ দিন ধরে এই বান্ধে আছি। কিছুই পাইলাম না।’

বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ থেকে ফেরার পথে দেখা গেল জামালপুর শহর রক্ষা বাঁধে শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। সবাই শহর রক্ষা বাঁধের ওপর ছাপরা তুলে আশ্রয় নিয়েছে।

জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোকলেছুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, শহর রক্ষা বাঁধে আশ্রয় নেওয়া পরিবারের মধ্যে চাল বিতরণ করা হয়েছে। তবে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে দ্রুত সময়ের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হবে।