জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) জালিয়াতি মামলার তদন্ত থেমে আছে। গত সাত মাসে নতুন কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। উল্টো গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের মধ্যে পাঁচজন জামিনে বেরিয়ে গেছেন।
মামলাটির তদন্ত ও পাঁচ কর্মচারীর ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে ৩৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম এসেছে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ১১ কর্মীসহ গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৫ জন। গত বছরের ১২ ডিসেম্বর ইসি চট্টগ্রামের অফিস সহকারী ঋষিকেশ দাশকে গ্রেপ্তারের পর নতুন কেউ ধরা পড়েননি।
মামলার তদন্তে ধীরগতির বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের ভোটার বানানো চক্রটির সঙ্গে পলাতক আসামিরা যুক্ত বলে ইতিমধ্যে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। আর তাঁদের গ্রেপ্তার করতে না পারলে ইসির ঊর্ধ্বতন যাঁরা জড়িত, তাঁরাও আড়ালে থেকে যাবেন।
মামলার প্রেক্ষাপট
সপ্তাহখানেকের মধ্যে পুলিশ সদর দপ্তরের মাধ্যমে গ্রেপ্তারের অনুমতি চেয়ে ইসির কাছে চিঠি দেওয়া হতে পারে বলে তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।
গত বছরের ২২ আগস্ট লাকী নামের এক নারী চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে এনআইডির স্মার্ট কার্ড তুলতে গেলে কর্মকর্তাদের সন্দেহ হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে, ওই নারী রোহিঙ্গা এবং টাকা দিয়ে এনআইডি করিয়েছেন। ওই ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় হওয়া মামলাটি পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট তদন্ত শুরু করে।
আদালত সূত্র জানায়, এনআইডি জালিয়াতির মামলায় গ্রেপ্তার ১৫ জনের মধ্যে ১১ জন ইসির কর্মী, যাঁদের চারজন স্থায়ী ও সাতজন অস্থায়ী। বাকিরা তাঁদের সহযোগী। পাঁচজন আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁরা হলেন ইসির চট্টগ্রাম কার্যালয়ের অফিস সহায়ক নাজিম উদ্দিন, অফিস সহকারী আনোয়ার হোসেন, জয়নাল আবেদীন, অস্থায়ী ডেটা এন্ট্রি অপারেটর মোস্তফা ফারুক ও ইসি ঢাকা কার্যালয়ের অস্থায়ী কর্মচারী শাহনুর মিয়া। তাঁদের জবানবন্দিতে ইসির ল্যাপটপসহ অন্যান্য সরঞ্জাম বাসায় নিয়ে রোহিঙ্গাদের ভোটার করা এবং কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তা ইসির সার্ভারে আপলোড করার বর্ণনা উঠে আসে। এ নিয়ে গত ১৩ জানুয়ারি ‘পাঁচ বছর ধরে রোহিঙ্গাদের ভোটার বানাচ্ছে চক্রটি’ শিরোনামে প্রথম আলোয় প্রধান প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
জামিনে আসামিরা
গত মে মাসে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান এ মামলায় গ্রেপ্তার পাঁচ আসামি। তাঁদের মধ্যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়া একজন রয়েছেন। তাঁরা হলেন চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের অফিস উচ্চমান সহকারী আবুল খায়ের ভূঁইয়া, অফিস সহকারী আনোয়ার হোসেন, কোতোয়ালি থানার ডেটা এন্ট্রি অপারেটর মো. শাহীন, বন্দর থানার ডেটা এন্ট্রি অপারেটর মো. জাহিদ ও ডবলমুরিং থানার ডেটা এন্ট্রি অপারেটর পাভেল বড়ুয়া।
চট্টগ্রাম মহানগর সরকারি কৌঁসুলি মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, করোনায় ভার্চ্যুয়াল আদালতের কার্যক্রম চলছে। স্বাভাবিকভাবে আদালতের কার্যক্রম চললে রাষ্ট্রপক্ষ অবশ্যই জামিনের বিরোধিতা করত।