ঢাকা , সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
৩ এপ্রিল ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি বাংলাদেশ সাবমেরিন কেব্‌ল কোম্পানির সব ধরনের ইন্টারনেটের দাম কমছে ১০ শতাংশ। রমজানে মাধ্যমিক স্কুল খোলা থাকবে ১৫ দিন, প্রাথমিক স্কুল ১০ দিন খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে টেকনাফ সীমান্তের হোয়াইক্যং এলাকা দিয়ে আজ অস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে মিয়ানমারের সেনা সাদ সাহেব রুজু করার পর দেওবন্দের মাসআলা খতম হয়ে গেছে : মাওলানা আরশাদ মাদানী চলছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিনের বয়ান পুলিশ সদস্যসহ বিশ্ব ইজতেমায় ৭ জনের মৃত্যু বর্তমান সরকারের সঙ্গে সব দেশ কাজ করতে চায়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়পুরহাটে স্কুলছাত্র হত্যায় ১১ জনের মৃত্যুদণ্ড

উদ্বিগ্ন মন করোনামুক্ত ভোরের প্রত্যাশায়

  • নিউজ ডেস্ক
  • প্রকাশিত : ০৯:১৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ জুন ২০২০
  • ৭৫৬ পঠিত

তিন মাস হয়ে গেছে বাড়িতে বসে দিন কাটাচ্ছি। ঘরবন্দী দিন যখন শুরু হয়, তখনো বাড়ির পাশে বিলে বোরো ধানের শিষ বের হয়নি। সৌভাগ্যক্রমে বাড়ির পাশে দশ শতকের একটা জমি খালি পড়ে ছিল। সময় কাটানোর জন্য সেখানে শসা, ঢ্যাঁড়স, বরবটি, বেগুন, লালশাক, পাটশাকসহ খুব অল্প অল্প নানা রকম খেত করেছিলাম। ছাদবাগানেও নানা রকম শাকসবজি রোপণ করেছিলাম। ছাদের পাশাপাশি রোজ সকাল–বিকেল–দুপুর যখন ইচ্ছা বাড়ির পাশে খেতে গিয়ে সময় কাটিয়েছি। সেখানে যেতে যেতে চোখের সামনে বোরো ধানে শিষ এল, ধান ধরল, ধান পাকল, অতঃপর কৃষক ধান কেটে ঘরে তুলেছেন। গ্রীষ্মকাল পেরিয়ে এখন ঝুম বর্ষা। মাসখানেক জমি খালি থাকার পরে আবার আউশ ধান রোপণ করা শেষ হয়েছে কৃষকের। আমাদের শখের খেতও যায় যায় অবস্থা। মাঝে এক মাস রমজান ও নিরানন্দের ঘরবন্দী ঈদ উদ্‌যাপনও হয়ে গেল। চোখের সামনে ২০২০ সালের অর্ধেক শেষ হতে চলেছে। তিন মাস পেরিয়ে গেছে। গ্রাম থেকে শহরে যাই না করোনার ভয়ে; মহামারি করোনাভাইরাস থেকে নিজেকে, পরিবারকে, সমাজকে রক্ষা করার জন্য। দেশে এবং প্রবাসে বিনা আয়ে তিন মাস পেরিয়ে চার মাস চলছে।
সেই ঘরবন্দী সময়ের শুরু থেকে অপেক্ষায় দিন গুনছি সুসময় ফিরে আসার। এই মহামারি থেকে পৃথিবী মুক্তি পেয়ে মানুষ আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে, সে প্রত্যাশায় কাটছে প্রহর। প্রতিটি সকাল, প্রতিটি দুপুর, প্রতিটি বিকেল, প্রতিটি গোধূলিবেলা, প্রতিটি সন্ধ্যা, প্রতিটি রাত কাটে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার প্রত্যাশায়। কিছু কিছু দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব কমে আসার খবরে সামান্য ভালো লাগা কাজ করে। কিন্তু সেই ভালো লাগা উধাও হয়ে হতাশা বাড়ে রোজ বেলা আড়াইটায় যখন স্বদেশে করোনার প্রাদুর্ভাব বাড়ার খবর শুনি। ৮ মার্চ এক দিনে সেই তিনজন করোনা রোগী শনাক্ত থেকে এখন এক দিনে শনাক্তের সংখ্যা চার হাজার পেরিয়েছে। দুঃখ হয়, যখন মিডিয়ায় দেখি-পড়ি সাধারণ মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে, যখন এই মহামারিকালেও কিছু কিছু জনপ্রতিনিধির ত্রাণ মেরে খাওয়ার খবর দেখি, নিজ উপজেলাতেই করোনার সময়ে খুনখারাবির খবর শুনি, দেশে ধর্ষণের খবর পড়ি এবং করোনাকালে বড় বড় তারকা রাজনীতিবিদের পৃথিবী থেকে চিরবিদায়ের খবরে ব্যথিত হই। হতাশা বাড়ে যখন দেখি, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রামের মানুষ যথেষ্ট চিকিৎসাসেবা না পাওয়ার কারণে হাহাকার করে।

এত হতাশার মধ্যেও আশাবাদী হই, যখন প্রবাসজীবনের প্রথম দিকের কথা মনে পড়ে। প্রবাসে গিয়ে প্রথম এক বছর এত বেশি হতাশার মধ্যে ছিলাম; নিজেকে মনে হতো সমুদ্রের মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছি। চারদিকে শুধু পানি আর পানি, ঢেউ আর ঢেউ, কিনারা দেখা যাচ্ছে না। সেই সময় নিজেকে নিজে বোঝানোর জন্য মনে মনে বলতাম, ‘নিশ্চয়ই প্রতিটি সাগরের উপকূল আছে, কিনারা আছে, ভাসতে ভাসতে একদিন সেই কিনারা পেয়ে যাব, সময়ের ব্যাপার মাত্র।’ ঠিকই একটা সময়ে প্রবাসজীবন আর সাগরের মাঝখানে হাবুডুবু খাওয়া মনে হয়নি, কারণ, কিনারা পেয়ে গিয়েছিলাম। তাই তো সেখানেই কাটিয়ে দিয়েছি দেড় দশকের বেশি সময়।
এই মহামারি করোনাকালেও আশাবাদী হয়ে আছি হঠাৎ করে বাংলাদেশ থেকে করোনার প্রাদুর্ভাব কমতে শুরু করবে। হয়তো সেদিন খুব বেশি দূরে নয়। করোনা নামক যে সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছি এখন, এই সাগরেরও কূলকিনারা আছে নিশ্চয়ই। একদিন এই হাবুডুবু খাওয়া অন্ধকার সময় কেটে যাবেই। স্বস্তির দিন, স্বাভাবিক জীবন, শিশু-কিশোরদের স্কুলে যাওয়ার সময়, হই-হুল্লোড়, উৎসব, উল্লাসে ছোটাছুটি, দৌড়াদৌড়ি দিন আসবেই। অবসরে দূরে হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্নিল দিন আসবেই। বেঁচে থাকা প্রতিটি মানুষের জন্য সোনালি দিন আসবেই। সৃষ্টিকর্তার করুণায় আমরা করোনা থেকে পরিত্রাণ পাব। করোনা মহামারিতে উদ্বিগ্ন মন করোনামুক্ত ভোরের প্রত্যাশায় আশাবাদী।

Tag :
জনপ্রিয়

৩ এপ্রিল ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি

উদ্বিগ্ন মন করোনামুক্ত ভোরের প্রত্যাশায়

প্রকাশিত : ০৯:১৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ জুন ২০২০

তিন মাস হয়ে গেছে বাড়িতে বসে দিন কাটাচ্ছি। ঘরবন্দী দিন যখন শুরু হয়, তখনো বাড়ির পাশে বিলে বোরো ধানের শিষ বের হয়নি। সৌভাগ্যক্রমে বাড়ির পাশে দশ শতকের একটা জমি খালি পড়ে ছিল। সময় কাটানোর জন্য সেখানে শসা, ঢ্যাঁড়স, বরবটি, বেগুন, লালশাক, পাটশাকসহ খুব অল্প অল্প নানা রকম খেত করেছিলাম। ছাদবাগানেও নানা রকম শাকসবজি রোপণ করেছিলাম। ছাদের পাশাপাশি রোজ সকাল–বিকেল–দুপুর যখন ইচ্ছা বাড়ির পাশে খেতে গিয়ে সময় কাটিয়েছি। সেখানে যেতে যেতে চোখের সামনে বোরো ধানে শিষ এল, ধান ধরল, ধান পাকল, অতঃপর কৃষক ধান কেটে ঘরে তুলেছেন। গ্রীষ্মকাল পেরিয়ে এখন ঝুম বর্ষা। মাসখানেক জমি খালি থাকার পরে আবার আউশ ধান রোপণ করা শেষ হয়েছে কৃষকের। আমাদের শখের খেতও যায় যায় অবস্থা। মাঝে এক মাস রমজান ও নিরানন্দের ঘরবন্দী ঈদ উদ্‌যাপনও হয়ে গেল। চোখের সামনে ২০২০ সালের অর্ধেক শেষ হতে চলেছে। তিন মাস পেরিয়ে গেছে। গ্রাম থেকে শহরে যাই না করোনার ভয়ে; মহামারি করোনাভাইরাস থেকে নিজেকে, পরিবারকে, সমাজকে রক্ষা করার জন্য। দেশে এবং প্রবাসে বিনা আয়ে তিন মাস পেরিয়ে চার মাস চলছে।
সেই ঘরবন্দী সময়ের শুরু থেকে অপেক্ষায় দিন গুনছি সুসময় ফিরে আসার। এই মহামারি থেকে পৃথিবী মুক্তি পেয়ে মানুষ আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে, সে প্রত্যাশায় কাটছে প্রহর। প্রতিটি সকাল, প্রতিটি দুপুর, প্রতিটি বিকেল, প্রতিটি গোধূলিবেলা, প্রতিটি সন্ধ্যা, প্রতিটি রাত কাটে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার প্রত্যাশায়। কিছু কিছু দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব কমে আসার খবরে সামান্য ভালো লাগা কাজ করে। কিন্তু সেই ভালো লাগা উধাও হয়ে হতাশা বাড়ে রোজ বেলা আড়াইটায় যখন স্বদেশে করোনার প্রাদুর্ভাব বাড়ার খবর শুনি। ৮ মার্চ এক দিনে সেই তিনজন করোনা রোগী শনাক্ত থেকে এখন এক দিনে শনাক্তের সংখ্যা চার হাজার পেরিয়েছে। দুঃখ হয়, যখন মিডিয়ায় দেখি-পড়ি সাধারণ মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে, যখন এই মহামারিকালেও কিছু কিছু জনপ্রতিনিধির ত্রাণ মেরে খাওয়ার খবর দেখি, নিজ উপজেলাতেই করোনার সময়ে খুনখারাবির খবর শুনি, দেশে ধর্ষণের খবর পড়ি এবং করোনাকালে বড় বড় তারকা রাজনীতিবিদের পৃথিবী থেকে চিরবিদায়ের খবরে ব্যথিত হই। হতাশা বাড়ে যখন দেখি, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রামের মানুষ যথেষ্ট চিকিৎসাসেবা না পাওয়ার কারণে হাহাকার করে।

এত হতাশার মধ্যেও আশাবাদী হই, যখন প্রবাসজীবনের প্রথম দিকের কথা মনে পড়ে। প্রবাসে গিয়ে প্রথম এক বছর এত বেশি হতাশার মধ্যে ছিলাম; নিজেকে মনে হতো সমুদ্রের মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছি। চারদিকে শুধু পানি আর পানি, ঢেউ আর ঢেউ, কিনারা দেখা যাচ্ছে না। সেই সময় নিজেকে নিজে বোঝানোর জন্য মনে মনে বলতাম, ‘নিশ্চয়ই প্রতিটি সাগরের উপকূল আছে, কিনারা আছে, ভাসতে ভাসতে একদিন সেই কিনারা পেয়ে যাব, সময়ের ব্যাপার মাত্র।’ ঠিকই একটা সময়ে প্রবাসজীবন আর সাগরের মাঝখানে হাবুডুবু খাওয়া মনে হয়নি, কারণ, কিনারা পেয়ে গিয়েছিলাম। তাই তো সেখানেই কাটিয়ে দিয়েছি দেড় দশকের বেশি সময়।
এই মহামারি করোনাকালেও আশাবাদী হয়ে আছি হঠাৎ করে বাংলাদেশ থেকে করোনার প্রাদুর্ভাব কমতে শুরু করবে। হয়তো সেদিন খুব বেশি দূরে নয়। করোনা নামক যে সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছি এখন, এই সাগরেরও কূলকিনারা আছে নিশ্চয়ই। একদিন এই হাবুডুবু খাওয়া অন্ধকার সময় কেটে যাবেই। স্বস্তির দিন, স্বাভাবিক জীবন, শিশু-কিশোরদের স্কুলে যাওয়ার সময়, হই-হুল্লোড়, উৎসব, উল্লাসে ছোটাছুটি, দৌড়াদৌড়ি দিন আসবেই। অবসরে দূরে হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্নিল দিন আসবেই। বেঁচে থাকা প্রতিটি মানুষের জন্য সোনালি দিন আসবেই। সৃষ্টিকর্তার করুণায় আমরা করোনা থেকে পরিত্রাণ পাব। করোনা মহামারিতে উদ্বিগ্ন মন করোনামুক্ত ভোরের প্রত্যাশায় আশাবাদী।