ঢাকা , রবিবার, ০৪ মে ২০২৫, ২১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
৩ এপ্রিল ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি বাংলাদেশ সাবমেরিন কেব্‌ল কোম্পানির সব ধরনের ইন্টারনেটের দাম কমছে ১০ শতাংশ। রমজানে মাধ্যমিক স্কুল খোলা থাকবে ১৫ দিন, প্রাথমিক স্কুল ১০ দিন খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে টেকনাফ সীমান্তের হোয়াইক্যং এলাকা দিয়ে আজ অস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে মিয়ানমারের সেনা সাদ সাহেব রুজু করার পর দেওবন্দের মাসআলা খতম হয়ে গেছে : মাওলানা আরশাদ মাদানী চলছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিনের বয়ান পুলিশ সদস্যসহ বিশ্ব ইজতেমায় ৭ জনের মৃত্যু বর্তমান সরকারের সঙ্গে সব দেশ কাজ করতে চায়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়পুরহাটে স্কুলছাত্র হত্যায় ১১ জনের মৃত্যুদণ্ড

কর্মীদের ঘাড়ে দোষ চাপাতে চেয়েছিলেন সাহেদ

  • নিউজ ডেস্ক
  • প্রকাশিত : ১২:০০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ জুলাই ২০২০
  • ৭৭২ পঠিত

র‌্যাবের অনুসন্ধানের খবর আগেই জেনে গিয়েছিলেন মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম। কারণ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে তাঁর সখ্য পুরোনো। বিপদ আঁচ করতে পেরে তিনি কর্মচারীদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে পার পেতে চেয়েছিলেন। র‌্যাবের অভিযানের দিন দুপুরেও সাহেদ তাঁর তিন কর্মীকে পেছনের তারিখে ছাঁটাইয়ের চেষ্টা করেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।

পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে করোনাভাইরাসের ভুয়া প্রতিবেদন দেওয়া একটি চক্রকে র‌্যাব গ্রেপ্তার করেছিল জুনের মাঝামাঝি। কিন্তু এই জালিয়াতি যে সরকার অনুমোদিত হাসপাতালে হচ্ছিল, তা ছিল অকল্পনীয়। রিজেন্ট–কাণ্ডের পর সারা দুনিয়া এখন জেনে গেছে, বাংলাদেশে করোনা পরীক্ষা ছাড়াই সনদ দেওয়া হয়।

নিউইয়র্ক টাইমস লিখেছে, ‍ছদ্মবেশে পালানোর সময় একজন হাসপাতাল মালিক গ্রেপ্তার। পরীক্ষা না করেই অভিবাসী শ্রমিকদের কাছে তিনি সনদ বিক্রি করেছেন। সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে ইতালি থেকে বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের বহনকারী বিমান ফেরত পাঠানোর কথা উল্লেখ আছে।

প্রতিদিন নতুন নতুন আক্রান্তের যে খবর প্রচার করা হচ্ছে, সেখানে রিজেন্টের ভুয়া সনদের তথ্যও যুক্ত আছে কি না, এমন প্রশ্নে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা বলেছেন, এ সম্পর্কে এখনো তাঁরা নিশ্চিত নন। কাগজপত্র হাতে পেলে মিলিয়ে দেখে বলতে পারবেন।

রিজেন্ট ও জেকেজির সংগ্রহ করা নমুনা ও তাদের জাল রিপোর্টের কারণে বাংলাদেশের করোনাভাইরাস–সংক্রান্ত তথ্যে গরমিলের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত ২১ মার্চ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে রিজেন্ট হাসপাতালের চুক্তি হয়। এরপর থেকেই প্রতিষ্ঠানটি নমুনা সংগ্রহ করছিল। দিনে ৫০টি নমুনা সংগ্রহ করে জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে (নিপসম) পাঠানোর কথা ছিল প্রতিষ্ঠানটির। তবে তারা কয়েক গুণ বেশি নমুনা সংগ্রহ করেছিল বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

কর্মচারীর ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা

সড়ক বিভাগের একজন কর্মকর্তা জুনের শেষে রিজেন্ট হাসপাতালের করোনা সনদ হাতে পেয়ে সেটি চ্যালেঞ্জ করেন। তিনি বুঝতে পারেন যে এই সনদ ভুয়া। তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ করবেন বলে রিজেন্ট কর্তৃপক্ষকে জানান।

সাহেদ বিপদ আঁচ করতে পেরে তিন কর্মীর ওপর দোষ চাপিয়ে পার পেতে চান। সতর্কতার অংশ হিসেবে তিনি উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে জানান, তাঁকে কেউ ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। এ জন্য তিনি পেছনের তারিখে তাঁর তিন কর্মী তারিক, সুমন ও পলাশকে ছাঁটাই করতে চিঠি তৈরি করেন। মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তাকে জানান, ওই তিনজন বাইরের কিছু লোকের যোগসাজশে নমুনা সংগ্রহ করে ভুয়া প্রতিবেদন দিচ্ছেন।

ওই কর্মীরা তাঁদের ইন-চার্জের কাছে বিষয়টি জানতে চান। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার জন্য এমন অনেক কিছুই করতে হয়। আসলে তাঁদের ছাঁটাই করা হয়নি। একটা ঝামেলা হয়েছে, মিটে গেলেই সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে। সাহেদের নির্দেশে দুটি হাজিরা খাতা খোলে হাসপাতাল। ছাঁটাই হওয়া তিনজন একটিতে ও বাকিরা দুটিতে সই করছিলেন।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও সাহেদ প্রসঙ্গ র‌্যাবের হটলাইন নম্বর ও মেইলে ৯২টি অভিযোগ

২ জুলাই আইপিএইচ ও নিপসম জানায়, রিজেন্ট থেকে রোগীদের যে সিরিয়াল দিয়েছে, সেই সিরিয়ালে কোনো নমুনা আসেনি। এরপর সাদাপোশাকে র‌্যাবের লোকজনও নমুনা দিতে রিজেন্টে যান। সাড়ে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে তাঁরা রিজেন্টে পরীক্ষা করান। যে টাকা তাঁরা রিজেন্টকে দেন, সেগুলোর ফটোকপি নিজেদের কাছে রেখে দেন। এভাবে তাঁরা জালিয়াতি সম্পর্কে নিশ্চিত হন।

৬ জুলাই বিকেলে র‌্যাব উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায়। ওই দিন দুপুরেও সাহেদ রিজেন্ট গ্রুপের মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের একজন কর্মকর্তার কাছে জানতে চান, তিনজনের শোকজের চিঠি তৈরি আছে কি না।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, বিতর্কিত ও প্রভাবশালী একজন পুলিশ কর্মকর্তা কোণঠাসা হয়ে পড়ায় ভালো জায়গায় বদলির জন্য কয়েক লাখ টাকা দেন সাহেদকে। এ ছাড়া পুলিশের ঊর্ধ্বতন একজন র্কমর্কতা রিজেন্টের শেয়ারের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা দেন।

সাহেদ চট্টগ্রামে সাইফুদ্দীন মহসীন নামের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৯১ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন অটোরিকশার লাইসেন্স নিয়ে দেবেন বলে। র‌্যাব জানায়, ওই সময় লাইসেন্স ছাড়া রাস্তায় নামলে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ ২০টি অটোরিকশা জব্দ করে। সাহেদ তখন চট্টগ্রামে যান। থানায় গিয়ে বলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা। তাঁকে অটোরিকশার ঝামেলা মেটাতে চট্টগ্রামে আসতে হয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক। তিনি এক ব্যবসায়ীকে দিয়ে অটোরিকশা জব্দ করা পুলিশের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করান সদর দপ্তরে।

মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, রিজেন্ট খুব দ্রুত ব্যবসা বাড়ানোর চেষ্টা করছিল। তিনি চাকরি করতে রাজি ছিলেন না। জোরাজুরিতে যোগ দেন। বিপণন বিভাগে বেশ কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়োগ দেন তাড়াহুড়ো করে। সাহেদ বলেছিলেন, তাঁরা পিপিই ও মাস্ক বিক্রি করবেন। তা ছাড়া উবার বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে। তিনি এ ব্যবসা ধরবেন।

আসছে নতুন অভিযোগ

৬ জুলাই উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে র‌্যাবের অভিযানের পর মো. সাহেদের প্রতারণার নানা খবর বেরিয়ে আসছে। শুক্রবার সাহেদ সম্পর্কে প্রতারণার তথ্য দিতে র‌্যাব যে হটলাইন নম্বর দিয়েছে, সেখানে ৭২ জন ও ই-মেইলে ২০ জন অভিযোগ জানিয়েছেন বলে জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ।

ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) কাছে রিমান্ডে থাকা সাহেদ সম্পর্কে গতকাল ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন নতুন জালিয়াতির তথ্য দিয়েছেন। তিনি জানান, আলবার্ট গ্লোবাল গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে নিম্নমানের পিপিই ও মাস্ক সরবরাহ করছিলেন সাহেদ। আদতে তাঁর কোনো পোশাক কারখানা নেই। তিনি ফেসবুক পেজ খুলে এ প্রতারণা শুরু করেন।

কিন্তু সাহেদের পৃষ্ঠপোষক কারা, সে সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনো তথ্য দেয়নি। র‌্যাবের কর্মকর্তারা বলছেন, সাহেদকে তাঁরা খুব অল্প সময়ের জন্য পেয়েছিলেন। তিনি কয়েকজন পৃষ্ঠপোষকের নাম বলেছেন। যাচাই-বাছাই ছাড়া প্রকাশ করা ঠিক হবে না।

Tag :
জনপ্রিয়

৩ এপ্রিল ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি

কর্মীদের ঘাড়ে দোষ চাপাতে চেয়েছিলেন সাহেদ

প্রকাশিত : ১২:০০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ জুলাই ২০২০

র‌্যাবের অনুসন্ধানের খবর আগেই জেনে গিয়েছিলেন মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম। কারণ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে তাঁর সখ্য পুরোনো। বিপদ আঁচ করতে পেরে তিনি কর্মচারীদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে পার পেতে চেয়েছিলেন। র‌্যাবের অভিযানের দিন দুপুরেও সাহেদ তাঁর তিন কর্মীকে পেছনের তারিখে ছাঁটাইয়ের চেষ্টা করেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।

পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে করোনাভাইরাসের ভুয়া প্রতিবেদন দেওয়া একটি চক্রকে র‌্যাব গ্রেপ্তার করেছিল জুনের মাঝামাঝি। কিন্তু এই জালিয়াতি যে সরকার অনুমোদিত হাসপাতালে হচ্ছিল, তা ছিল অকল্পনীয়। রিজেন্ট–কাণ্ডের পর সারা দুনিয়া এখন জেনে গেছে, বাংলাদেশে করোনা পরীক্ষা ছাড়াই সনদ দেওয়া হয়।

নিউইয়র্ক টাইমস লিখেছে, ‍ছদ্মবেশে পালানোর সময় একজন হাসপাতাল মালিক গ্রেপ্তার। পরীক্ষা না করেই অভিবাসী শ্রমিকদের কাছে তিনি সনদ বিক্রি করেছেন। সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে ইতালি থেকে বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের বহনকারী বিমান ফেরত পাঠানোর কথা উল্লেখ আছে।

প্রতিদিন নতুন নতুন আক্রান্তের যে খবর প্রচার করা হচ্ছে, সেখানে রিজেন্টের ভুয়া সনদের তথ্যও যুক্ত আছে কি না, এমন প্রশ্নে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা বলেছেন, এ সম্পর্কে এখনো তাঁরা নিশ্চিত নন। কাগজপত্র হাতে পেলে মিলিয়ে দেখে বলতে পারবেন।

রিজেন্ট ও জেকেজির সংগ্রহ করা নমুনা ও তাদের জাল রিপোর্টের কারণে বাংলাদেশের করোনাভাইরাস–সংক্রান্ত তথ্যে গরমিলের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত ২১ মার্চ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে রিজেন্ট হাসপাতালের চুক্তি হয়। এরপর থেকেই প্রতিষ্ঠানটি নমুনা সংগ্রহ করছিল। দিনে ৫০টি নমুনা সংগ্রহ করে জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে (নিপসম) পাঠানোর কথা ছিল প্রতিষ্ঠানটির। তবে তারা কয়েক গুণ বেশি নমুনা সংগ্রহ করেছিল বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

কর্মচারীর ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা

সড়ক বিভাগের একজন কর্মকর্তা জুনের শেষে রিজেন্ট হাসপাতালের করোনা সনদ হাতে পেয়ে সেটি চ্যালেঞ্জ করেন। তিনি বুঝতে পারেন যে এই সনদ ভুয়া। তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ করবেন বলে রিজেন্ট কর্তৃপক্ষকে জানান।

সাহেদ বিপদ আঁচ করতে পেরে তিন কর্মীর ওপর দোষ চাপিয়ে পার পেতে চান। সতর্কতার অংশ হিসেবে তিনি উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে জানান, তাঁকে কেউ ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। এ জন্য তিনি পেছনের তারিখে তাঁর তিন কর্মী তারিক, সুমন ও পলাশকে ছাঁটাই করতে চিঠি তৈরি করেন। মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তাকে জানান, ওই তিনজন বাইরের কিছু লোকের যোগসাজশে নমুনা সংগ্রহ করে ভুয়া প্রতিবেদন দিচ্ছেন।

ওই কর্মীরা তাঁদের ইন-চার্জের কাছে বিষয়টি জানতে চান। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার জন্য এমন অনেক কিছুই করতে হয়। আসলে তাঁদের ছাঁটাই করা হয়নি। একটা ঝামেলা হয়েছে, মিটে গেলেই সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে। সাহেদের নির্দেশে দুটি হাজিরা খাতা খোলে হাসপাতাল। ছাঁটাই হওয়া তিনজন একটিতে ও বাকিরা দুটিতে সই করছিলেন।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও সাহেদ প্রসঙ্গ র‌্যাবের হটলাইন নম্বর ও মেইলে ৯২টি অভিযোগ

২ জুলাই আইপিএইচ ও নিপসম জানায়, রিজেন্ট থেকে রোগীদের যে সিরিয়াল দিয়েছে, সেই সিরিয়ালে কোনো নমুনা আসেনি। এরপর সাদাপোশাকে র‌্যাবের লোকজনও নমুনা দিতে রিজেন্টে যান। সাড়ে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে তাঁরা রিজেন্টে পরীক্ষা করান। যে টাকা তাঁরা রিজেন্টকে দেন, সেগুলোর ফটোকপি নিজেদের কাছে রেখে দেন। এভাবে তাঁরা জালিয়াতি সম্পর্কে নিশ্চিত হন।

৬ জুলাই বিকেলে র‌্যাব উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায়। ওই দিন দুপুরেও সাহেদ রিজেন্ট গ্রুপের মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের একজন কর্মকর্তার কাছে জানতে চান, তিনজনের শোকজের চিঠি তৈরি আছে কি না।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, বিতর্কিত ও প্রভাবশালী একজন পুলিশ কর্মকর্তা কোণঠাসা হয়ে পড়ায় ভালো জায়গায় বদলির জন্য কয়েক লাখ টাকা দেন সাহেদকে। এ ছাড়া পুলিশের ঊর্ধ্বতন একজন র্কমর্কতা রিজেন্টের শেয়ারের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা দেন।

সাহেদ চট্টগ্রামে সাইফুদ্দীন মহসীন নামের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৯১ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন অটোরিকশার লাইসেন্স নিয়ে দেবেন বলে। র‌্যাব জানায়, ওই সময় লাইসেন্স ছাড়া রাস্তায় নামলে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ ২০টি অটোরিকশা জব্দ করে। সাহেদ তখন চট্টগ্রামে যান। থানায় গিয়ে বলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা। তাঁকে অটোরিকশার ঝামেলা মেটাতে চট্টগ্রামে আসতে হয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক। তিনি এক ব্যবসায়ীকে দিয়ে অটোরিকশা জব্দ করা পুলিশের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করান সদর দপ্তরে।

মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, রিজেন্ট খুব দ্রুত ব্যবসা বাড়ানোর চেষ্টা করছিল। তিনি চাকরি করতে রাজি ছিলেন না। জোরাজুরিতে যোগ দেন। বিপণন বিভাগে বেশ কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়োগ দেন তাড়াহুড়ো করে। সাহেদ বলেছিলেন, তাঁরা পিপিই ও মাস্ক বিক্রি করবেন। তা ছাড়া উবার বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে। তিনি এ ব্যবসা ধরবেন।

আসছে নতুন অভিযোগ

৬ জুলাই উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে র‌্যাবের অভিযানের পর মো. সাহেদের প্রতারণার নানা খবর বেরিয়ে আসছে। শুক্রবার সাহেদ সম্পর্কে প্রতারণার তথ্য দিতে র‌্যাব যে হটলাইন নম্বর দিয়েছে, সেখানে ৭২ জন ও ই-মেইলে ২০ জন অভিযোগ জানিয়েছেন বলে জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ।

ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) কাছে রিমান্ডে থাকা সাহেদ সম্পর্কে গতকাল ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন নতুন জালিয়াতির তথ্য দিয়েছেন। তিনি জানান, আলবার্ট গ্লোবাল গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে নিম্নমানের পিপিই ও মাস্ক সরবরাহ করছিলেন সাহেদ। আদতে তাঁর কোনো পোশাক কারখানা নেই। তিনি ফেসবুক পেজ খুলে এ প্রতারণা শুরু করেন।

কিন্তু সাহেদের পৃষ্ঠপোষক কারা, সে সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনো তথ্য দেয়নি। র‌্যাবের কর্মকর্তারা বলছেন, সাহেদকে তাঁরা খুব অল্প সময়ের জন্য পেয়েছিলেন। তিনি কয়েকজন পৃষ্ঠপোষকের নাম বলেছেন। যাচাই-বাছাই ছাড়া প্রকাশ করা ঠিক হবে না।