ঢাকা , রবিবার, ০৪ মে ২০২৫, ২১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
৩ এপ্রিল ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি বাংলাদেশ সাবমেরিন কেব্‌ল কোম্পানির সব ধরনের ইন্টারনেটের দাম কমছে ১০ শতাংশ। রমজানে মাধ্যমিক স্কুল খোলা থাকবে ১৫ দিন, প্রাথমিক স্কুল ১০ দিন খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে টেকনাফ সীমান্তের হোয়াইক্যং এলাকা দিয়ে আজ অস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে মিয়ানমারের সেনা সাদ সাহেব রুজু করার পর দেওবন্দের মাসআলা খতম হয়ে গেছে : মাওলানা আরশাদ মাদানী চলছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিনের বয়ান পুলিশ সদস্যসহ বিশ্ব ইজতেমায় ৭ জনের মৃত্যু বর্তমান সরকারের সঙ্গে সব দেশ কাজ করতে চায়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়পুরহাটে স্কুলছাত্র হত্যায় ১১ জনের মৃত্যুদণ্ড

দুটি লঞ্চের চালকই ষাটোর্ধ্ব

  • নিউজ ডেস্ক
  • প্রকাশিত : ১১:৫৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ জুলাই ২০২০
  • ৮৩১ পঠিত

কোনো মাস্টার কিংবা চালকের বয়স ৫৮ বছর পার হলে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া লঞ্চ বা জাহাজ চালাতে পারবেন না। আর বয়স ৬৫ বছর হলে চালক হিসেবে অনুমতিও দেওয়া যাবে না। অথচ বুড়িগঙ্গায় ডুবে যাওয়া লঞ্চ মর্নিং বার্ডের মাস্টারের বয়স ৭০ বছর। আর ধাক্কা দেওয়া এমভি ময়ূর-২–এর মাস্টারের বয়স ৬৫ বছর।

নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মুখ্য পরিদর্শক শফিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, লঞ্চ বা জাহাজের মাস্টার ও চালকের বয়স যখন ৫৮ বছর পূর্ণ হবে, তখন তাঁকে লঞ্চ চালাতে হলে অবশ্যই নৌপরিবহন অধিদপ্তরের অনুমোদন নিতে হবে। সিভিল সার্জনের দেওয়া স্বাস্থ্যগত ফিটনেস সনদ, চক্ষু পরীক্ষাসহ সব পরীক্ষা-নিরীক্ষায় পাস করলেই কেবল ওই ব্যক্তির লঞ্চ চালানোর অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে বয়স ৬৫ বছরের বেশি হলে অধিদপ্তরের বিধি অনুযায়ী কাউকে লঞ্চ চালানোর অনুমতি দেওয়াই যাবে না।

গত সোমবার সকাল আটটার দিকে মুন্সিগঞ্জের কাঠপট্টি থেকে মর্নিং বার্ড নামের একটি লঞ্চ ঢাকার সদরঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। লঞ্চটি টার্মিনালের কাছাকাছি এলে এমভি ময়ূর-২ নামের একটি লঞ্চ মর্নিং বার্ডকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। মুহূর্তের মধ্যে মর্নিং বার্ড ডুবে যায়। এতে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। মারা গেছেন মর্নিং বার্ডের মাস্টার আমির আলীও। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী, তাঁর বয়স এখন ৭০। ১৯৫০ সালের ১০ মে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি দোহারের বানাঘাটা গ্রামে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক প্রথম আলোকে বলেন, বয়স পেরিয়ে গেলেও কীভাবে লঞ্চ চালাচ্ছিলেন, তিনি তা গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখবেন। এ জন্য দায়ী বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেবেন।

৬৫ বছরের বেশি বয়স্ক কোনো ব্যক্তি লঞ্চ চালাতে পারবেন না বলে জানান নৌপরিবহন অধিদপ্তরের চিফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেন কে এম জসিমউদ্দিন সরকার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘অধিক বয়সে লঞ্চ চালানো সম্পূর্ণ বেআইনি। এসব বিষয় দেখভাল করার দায়িত্ব নৌ–পুলিশের, বিআইডব্লিউটিএর এবং নৌপরিবহন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের।’

ডুবে যাওয়া মর্নিং বার্ডের মাস্টারের বয়স ৭০। ধাক্কা দেওয়া ময়ূর-২–এর মাস্টারের বয়স ৬৫।

নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমোডর সৈয়দ আরিফুল ইসলাম জানান, তিনি বয়সের বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।

এখনো গ্রেপ্তার নেই

ময়ূর-২ লঞ্চের মালিকসহ সাতজনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি তদন্ত করছে নৌ–পুলিশ। ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা পরও গতকাল পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি নৌ-পুলিশ। মামলার তদারক কর্মকর্তা ও ঢাকা জেলা নৌ-পুলিশের প্রধান খন্দকার ফরিদুল ইসলাম জানান, আসামিদের পাওয়া যাচ্ছে না, ফোন বন্ধ রেখেছেন। গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের আশপাশের একাধিক লোকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘটনার দিন ময়ূর-২ নামের লঞ্চটি মর্নিং বার্ডকে ধাক্কা দিয়ে লালকুঠির ঘাটে আসে। তখনো লঞ্চটির মাস্টারসহ অন্যরা সেখানে ছিলেন। লালকুঠি ঘাটে কর্মরত বিআইডব্লিউটিএ এবং নৌ-পুলিশের সদস্যরা তৎপর হলে লঞ্চটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হতো। বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তাদের অবহেলার সুযোগ নিয়ে আসামিরা এলাকা ছেড়ে যান।

মামলার এজাহারভুক্ত সাত আসামি হলেন ময়ূর-২–এর মালিক মোসাদ্দেক হানিফ ও লঞ্চের মাস্টার আবুল বাশার মোল্লা। অন্যরা হলেন জাকির হোসেন, শিপন হাওলাদার, শাকিল হোসেন, নাসির মৃধা ও হৃদয়। বাশার দ্বিতীয় শ্রেণির এবং জাকির হোসেন তৃতীয় শ্রেণির মাস্টার।

বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক বলেন, লালকুঠির ঘাটে সেদিন বিআইডব্লিউটিএর যেসব কর্মকর্তা ছিলেন, তাঁরা আন্তরিক হলে ময়ূর-২–এর মাস্টারসহ অন্যদের ধরা সম্ভব হতো। একই সঙ্গে ঘাটে থাকেন নৌ-পুলিশের সদস্য, আনসার বাহিনীর সদস্য। সবাই যদি তখন তৎপর হতেন, তাহলে আসামিরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতে পারতেন না।

জনপ্রিয়

৩ এপ্রিল ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি

দুটি লঞ্চের চালকই ষাটোর্ধ্ব

প্রকাশিত : ১১:৫৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ জুলাই ২০২০

কোনো মাস্টার কিংবা চালকের বয়স ৫৮ বছর পার হলে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া লঞ্চ বা জাহাজ চালাতে পারবেন না। আর বয়স ৬৫ বছর হলে চালক হিসেবে অনুমতিও দেওয়া যাবে না। অথচ বুড়িগঙ্গায় ডুবে যাওয়া লঞ্চ মর্নিং বার্ডের মাস্টারের বয়স ৭০ বছর। আর ধাক্কা দেওয়া এমভি ময়ূর-২–এর মাস্টারের বয়স ৬৫ বছর।

নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মুখ্য পরিদর্শক শফিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, লঞ্চ বা জাহাজের মাস্টার ও চালকের বয়স যখন ৫৮ বছর পূর্ণ হবে, তখন তাঁকে লঞ্চ চালাতে হলে অবশ্যই নৌপরিবহন অধিদপ্তরের অনুমোদন নিতে হবে। সিভিল সার্জনের দেওয়া স্বাস্থ্যগত ফিটনেস সনদ, চক্ষু পরীক্ষাসহ সব পরীক্ষা-নিরীক্ষায় পাস করলেই কেবল ওই ব্যক্তির লঞ্চ চালানোর অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে বয়স ৬৫ বছরের বেশি হলে অধিদপ্তরের বিধি অনুযায়ী কাউকে লঞ্চ চালানোর অনুমতি দেওয়াই যাবে না।

গত সোমবার সকাল আটটার দিকে মুন্সিগঞ্জের কাঠপট্টি থেকে মর্নিং বার্ড নামের একটি লঞ্চ ঢাকার সদরঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। লঞ্চটি টার্মিনালের কাছাকাছি এলে এমভি ময়ূর-২ নামের একটি লঞ্চ মর্নিং বার্ডকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। মুহূর্তের মধ্যে মর্নিং বার্ড ডুবে যায়। এতে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। মারা গেছেন মর্নিং বার্ডের মাস্টার আমির আলীও। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী, তাঁর বয়স এখন ৭০। ১৯৫০ সালের ১০ মে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি দোহারের বানাঘাটা গ্রামে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক প্রথম আলোকে বলেন, বয়স পেরিয়ে গেলেও কীভাবে লঞ্চ চালাচ্ছিলেন, তিনি তা গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখবেন। এ জন্য দায়ী বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেবেন।

৬৫ বছরের বেশি বয়স্ক কোনো ব্যক্তি লঞ্চ চালাতে পারবেন না বলে জানান নৌপরিবহন অধিদপ্তরের চিফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেন কে এম জসিমউদ্দিন সরকার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘অধিক বয়সে লঞ্চ চালানো সম্পূর্ণ বেআইনি। এসব বিষয় দেখভাল করার দায়িত্ব নৌ–পুলিশের, বিআইডব্লিউটিএর এবং নৌপরিবহন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের।’

ডুবে যাওয়া মর্নিং বার্ডের মাস্টারের বয়স ৭০। ধাক্কা দেওয়া ময়ূর-২–এর মাস্টারের বয়স ৬৫।

নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমোডর সৈয়দ আরিফুল ইসলাম জানান, তিনি বয়সের বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।

এখনো গ্রেপ্তার নেই

ময়ূর-২ লঞ্চের মালিকসহ সাতজনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি তদন্ত করছে নৌ–পুলিশ। ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা পরও গতকাল পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি নৌ-পুলিশ। মামলার তদারক কর্মকর্তা ও ঢাকা জেলা নৌ-পুলিশের প্রধান খন্দকার ফরিদুল ইসলাম জানান, আসামিদের পাওয়া যাচ্ছে না, ফোন বন্ধ রেখেছেন। গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের আশপাশের একাধিক লোকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘটনার দিন ময়ূর-২ নামের লঞ্চটি মর্নিং বার্ডকে ধাক্কা দিয়ে লালকুঠির ঘাটে আসে। তখনো লঞ্চটির মাস্টারসহ অন্যরা সেখানে ছিলেন। লালকুঠি ঘাটে কর্মরত বিআইডব্লিউটিএ এবং নৌ-পুলিশের সদস্যরা তৎপর হলে লঞ্চটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হতো। বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তাদের অবহেলার সুযোগ নিয়ে আসামিরা এলাকা ছেড়ে যান।

মামলার এজাহারভুক্ত সাত আসামি হলেন ময়ূর-২–এর মালিক মোসাদ্দেক হানিফ ও লঞ্চের মাস্টার আবুল বাশার মোল্লা। অন্যরা হলেন জাকির হোসেন, শিপন হাওলাদার, শাকিল হোসেন, নাসির মৃধা ও হৃদয়। বাশার দ্বিতীয় শ্রেণির এবং জাকির হোসেন তৃতীয় শ্রেণির মাস্টার।

বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক বলেন, লালকুঠির ঘাটে সেদিন বিআইডব্লিউটিএর যেসব কর্মকর্তা ছিলেন, তাঁরা আন্তরিক হলে ময়ূর-২–এর মাস্টারসহ অন্যদের ধরা সম্ভব হতো। একই সঙ্গে ঘাটে থাকেন নৌ-পুলিশের সদস্য, আনসার বাহিনীর সদস্য। সবাই যদি তখন তৎপর হতেন, তাহলে আসামিরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতে পারতেন না।