জামালপুর শহরের ফৌজদারি এলাকার উত্তর পাশে নাওভাঙা চর। ব্রহ্মপুত্র নদবেষ্টিত এই চরে দেড় শতাধিক পরিবার বসবাস করে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়া অব্যাহত থাকায় এই চরের সব ঘরবাড়িতে টিনের চাল পর্যন্ত পানি। এখানকার সব বাসিন্দা দিনমজুর, রিকশাচালক ও কৃষক। তাঁরা প্রায় সবাই হতদরিদ্র। তাঁদের হাতে কোনো টাকাপয়সাও নেই। দুই দফায় টানা ২২ দিন ধরে ঘরবাড়িতে পানি। ফলে এসব মানুষ বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও জামালপুর শহর রক্ষা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন।
শহরের ফৌজদারি থেকে নাওভাঙা চরের উদ্দেশে নৌকায় যাত্রা শুরু। চরে প্রবেশ করতেই দেখা গেল, টিনের চাল পর্যন্ত পানি। অনেক ঘরের টিনও ভেঙে গেছে। অনেকের ঘরের ভেতর গলাসমান পানি। অনেক ঘরে বুকসমান। অনেকের খড়ের স্তূপ ডুবে রয়েছে। কোথাও লোকজন নেই। সবখানে পানি আর পানি। নৌকা নিয়ে হাসনা বেগম ও ঈমান আলী ঘরবাড়ি দেখতে এসেছিলেন। এই দম্পতি জানালেন, তাঁরা টানা ২২ দিন ঘরবাড়িছাড়া। কোনো কাজকর্ম নেই। হাতে কোনো টাকাও নেই। শহর রক্ষা বাঁধের ওপর কোনো রকম আশ্রয় নিয়েছেন। শাক-ভাত খেয়ে কোনো রকম জীবন চলছে। তাঁরা গত রোববার ত্রাণের ৭ কেজি চাল পেয়েছিলেন। কিন্তু সেই চাল খাওয়া ভাগ্যে জোটেনি। চালগুলো পচা ছিল। ছিল পোকায় ভর্তি। ওই পচা চাল ছাড়া আর কোনো সহযোগিতা পাননি।
সোমবার বেলা একটার দিকে বন্যাদুর্গত জামালপুর সদর উপজেলার নাওভাঙা চরের বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওপর বিলকিস বেগমের সঙ্গে দেখা হয়। বিলকিস বেগম বলেন, ‘ছাওয়াল-পাওয়ালেরা কষ্টে আছে, কোনো কামকাজ নাই। খুব কষ্টে আছি গো বাবা। কোনোমতে দুই-এক বেলা শাক-ভাত খাইয়া বাঁচি আছি। বান্ধে কেউ খোঁজ নিবার আহে নাই। আমগরে কপালে কোন্ডাই জোটে নাই। সব হানেই বান। কোঠাও ঘাস নাই। গরু-বাছুরেরও কষ্ট।’
মধ্যবয়সী শিল্পি বেগম বলেন, ‘ছাওয়াল-পাওয়াল ও গরু-বাছুর নিয়া খুব দুর্ভোগে আছি। এত কষ্ট কইরা আছি। খেতে পাট আছিল, এডাও নষ্ট হয়ে গেছে। গরু-বাছুর আমাগোর সম্পত্তি। এডাও বাঁচাতে পারুম কি না? সব হানে পানি। কোঠাও খেড় ও ঘাস নাই। নিজেরাই বাঁচুম কেমনে, গরু-বাছুরই বাঁচামু কেমনে। ২২ দিন ধরে এই বান্ধে আছি। কিছুই পাইলাম না।’
বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ থেকে ফেরার পথে দেখা গেল জামালপুর শহর রক্ষা বাঁধে শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। সবাই শহর রক্ষা বাঁধের ওপর ছাপরা তুলে আশ্রয় নিয়েছে।
জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোকলেছুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, শহর রক্ষা বাঁধে আশ্রয় নেওয়া পরিবারের মধ্যে চাল বিতরণ করা হয়েছে। তবে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে দ্রুত সময়ের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হবে।