ছোট পর্দার তারকাদের কক্ষপথে পরিবর্তন এসেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কয়েকজন তরুণ জ্বলজ্বলে তারকা দর্শকদের নজর কেড়েছেন। হঠাৎ ব্যস্ততা আসার পরপরই তাঁদের জীবনে নেমে আসে অনাকাঙ্ক্ষিত অবসর। জেনে নেওয়া যাক তাঁদের গল্প।
সেরা হওয়ার দৌড়ে তৌসিফ
প্রায় ৩০ দিন কাজ করতেন তৌসিফ মাহবুব। ঈদের চার-পাঁচ দিন কেবল ছুটি। লকডাউনে হঠাৎ সেই বিরামহীন ছুটে চলার ছন্দপতন হলো। এল অখণ্ড অবসর। প্রথমে ভালোই লাগছিল। তারপর মনে হলো, ‘এত ছুটি তো চাইনি!’ একসময় ছুটি ফুরায়। করোনার মধ্যেই শুরু হয় শুটিং। এবার ক্যামেরার সামনে আসার আগেই তিনি নিয়ে ফেলেন নতুন সিদ্ধান্ত। এখন থেকে টানা কাজের পর মাসখানেকের জন্য হারিয়ে যাবেন।
ঘরবন্দী তৌসিফের মনে হয়েছে, দিনের পর দিন কাজ করার কোনো অর্থ নেই। মাঝেমধ্যে বিরতি নেওয়া দরকার। চলতি বছরের শেষে সিনেমায় কাজ শুরু করবেন, প্রস্তুতি ছিল সে রকমই। কিন্তু সিদ্ধান্ত বদলে নাটকেই পূর্ণ মনোযোগ দেবেন বলে ঠিক করেছেন। এখানেই তিনি হতে চান ‘সেরা’।
ইতিমধ্যে চার শতাধিক নাটকে কাজ করে ফেলেছেন তৌসিফ। নিজের প্রথম নাটক অলটাইম দৌড়ের ওপর তাঁর ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট। ‘সত্যি বলতে, বিয়েটাই আমার টার্নিং পয়েন্ট। বিয়ের পর যতগুলো কাজ করেছি, সবই আমাকে সাফল্য এনে দিয়েছে।’ ২০১৭ সাল থেকে তুমুল ব্যস্ত তৌসিফ। প্রতিদিনই তাঁকে কাজে যেতে হয়েছে। করোনাকালে প্রথম একটু দীর্ঘ অবসরের স্বাদ নিলেন তৌসিফ।
নিজেকে বড় জায়গায় দেখতে চান ফারিণ
মাসে ৩০ দিন শুটিং করতেন ফারিণ। চলতি বছরের শুরুতে সেই সময় কমিয়ে ২০ দিনে নেমেছিলেন। মার্চে লকডাউন শুরু হলে ব্যস্ততা রূপান্তরিত হলো অবসরে।
ক্যাম্পাসজীবনেও ফারিণের ব্যস্ততার কমতি ছিল না। শোবিজের ব্যস্ততাকে তাই চাপ মনে হয়নি তাঁর। লকডাউনের শুরুতে ব্যস্ততা থেকে মুক্তি পেয়ে ভালোই লাগছিল। তবে শেষ ১০ বছরে এত অবসর কোনো দিন পাননি। লকডাউনে তাঁর শিডিউল হয়ে গেল এলোমেলো। ঘুমের সময় ঘুম হয় না, খাওয়ার সময় হয় না খাওয়া। দুই মাস পর রীতিমতো অসুস্থ হয়ে পড়লেন তিনি। তখন সময়ের সঙ্গে বোঝাপড়ায় আসতে হলো। খাওয়া, ঘুম, বিনোদন সবকিছুকে ঘড়ির সঙ্গে বন্ধুত্ব করিয়ে দিলেন।
আউট অব দ্য বক্স ভাবতে চান ফারিণ। করোনাকালে একটা সহজ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে তাঁর মনে। বাইরে ঘুরতে যাওয়া, রেস্টুরেন্টে খেতে যাওয়ার মতো ব্যাপারগুলো কি জীবনকে মসৃণ করে? সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এখন থেকে কাজের রাশ টেনে ধরবেন। সমাজে প্রভাব ফেলতে পারে, এমন কাজগুলো অগ্রাধিকার দেবেন। পাঁচ বছরের মধ্যে নিজেকে তিনি দেখতে চান আরেকটু বড় জায়গায়। আন্তর্জাতিক কোনো প্ল্যাটফর্মে।
গত বছরের ভালোবাসা দিবসে এক্স বয়ফ্রেন্ড প্রচারের পর নজরে আসেন ফারিণ। ফাস্ট ইয়ার ড্যাম কেয়ার, আদম, রোদের অপেক্ষা, আগুনের দিন শেষ হবে একদিন নাটকগুলো তাঁকে পরিচিতি এনে দেয়। অভিনীত নাটকের সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়েছে তাঁর।
সময়কে মুঠোয় রাখেন সাবাহ
পরিবারের সঙ্গে আনন্দঘন সময় কাটাতে শুরু করলেন সাবাহ। বই পড়ছেন, বাগান করছেন, রান্না করছেন। ব্যস্ততা না থাকলেও চিন্তা ছিল, কী হবে? এসব কাজে এখন স্বস্তি খুঁজে নিয়েছেন ফ্যামিলি ক্রাইসিস নাটকের জনপ্রিয় চরিত্র ঝুমুর।
২০১৯ সালে কথা নেই বার্তা নেই তাঁকে পেয়ে বসে কাজের চাপ। এমন জনপ্রিয়তা পেলেন সারিকা সাবাহ যে মাসে ২০ থেকে ২৫ দিন শুটিং করতে হতো। লকডাউনে সেই প্রচণ্ড গতি হঠাৎ করে গেল থেমে। এল অফুরন্ত অবসর। কাজ বন্ধ হয়ে গেলে তাঁর মনে হয়েছে, তিনি তাঁর স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন। খুব কি ধাক্কা খেয়েছিলেন? ‘ব্যস্ততাটাই ছিল অস্বাভাবিক’, মন্তব্য সাবাহর।
ঈদুল আজহায় কাজ তেমন নেই সাবাহর। অথচ বছরখানেকের মধ্যে ৩০টির মতো একক নাটকে অভিনয় করে ফেলেছেন তিনি। অনেকে তাঁকে ‘ঝুমুর’ নামে ডাকেন। ও ডাক্তার, মিশন বরিশাল, ব্যাচেলর থ্রি নাটকগুলো থেকে ভালো সাড়া পেলেও তাঁর ক্যারিয়ারের বাঁক বদলে দিয়েছে ফ্যামিলি ক্রাইসিস। পরিচিতি ও ব্যস্ততাকে ছাপিয়ে আসলে শোবিজে কত দূর যেতে চান সাবাহ? তিনি বলেন, ‘যত দিন ক্রিয়েটিভিটি থাকবে, তত দিন কাজ করে যাব।’ সাবাহ মনে করেন, এ দেশের অভিনয়শিল্পীরা পরিশ্রমী। স্বল্প বাজেটের নাটকেও তাঁরা নিজেদের পুরোটা ঢেলে দেন। আর সাবাহর বাড়তি কী আছে? ‘টাইম ম্যানেজমেন্ট’ তাঁকে আলাদা