সিলেটের লোভাছড়ায় পাথর ব্যবসায়ী এক আওয়ামী লীগ নেতার অবৈধ পাথরভান্ডার থেকে জব্দ করা ১ কোটি ঘনফুট পাথরের নিলামে সর্বোচ্চ দর উঠেছে ৩০ কোটি টাকা। আজ মঙ্গলবার বিকেলে পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ে নিলাম ডাক সম্পন্ন হয়। এতে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়।
নিলাম ডাক তদারককারী প্রতিষ্ঠান পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। তবে সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছে পাথরগুলো বিক্রি করা হবে, না আরও মূল্য পেতে পুনরায় নিলাম ডাক হবে—এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
নিলাম ডাক প্রক্রিয়া সমন্বয়ে থাকা জেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘জব্দ করা পাথর ১ কোটি ঘনফুট—এ বিষয়টি অনুমাননির্ভর। কম অথবা বেশিও হতে পারে। বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী (প্রতি ঘনফুট ৪৮ টাকা) নিলামের সর্বোচ্চ দরদাতার ডাকা মূল্য কম হতে পারে, এ ধারণায় তাদের কাছে পাথর বিক্রির বিষয়টি আরেক দফা বিবেচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার লোভাছড়া পাথর কোয়ারির অবস্থান বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী লোভা নদীর অববাহিকা এলাকায়। ৪০২ দশমিক ৮৯ একর আয়তনের এই পাথর কোয়ারির ইজারার মেয়াদ শেষ হয় গত ১৩ এপ্রিল। পাথর কোয়ারির ইজারাদার ছিলেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক উপপ্রচার সম্পাদক মস্তাক আহমদ।
উপজেলা প্রশাসন জানায়, ইজারার মেয়াদ পার হওয়ার পরও অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করে কোয়ারি এলাকাসহ লোভা নদীর তীরে পাথর মজুত করা হয়েছিল। সাম্প্রতিক পাহাড়ি ঢলে নদীর পানি বাড়ার সুযোগে পাথরগুলো পরিবহনের প্রস্তুতিও নেওয়া হয়। বিষয়টি জানার পর গত শনিবার (১৮ জুলাই) জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও কানাইঘাট উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা অভিযানে নামেন। এ সময় লোভাছড়া পাথর কোয়ারিসহ লোভা নদীর তীরে অবৈধভাবে মজুত করা সব পাথর জব্দ হয়। অভিযানে অবৈধ পাথর উত্তোলনে ব্যবহার করা প্রায় আড়াই কোটি টাকার অবৈধ যন্ত্রাংশও ধ্বংস করা হয়।
জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে জব্দ পাথরগুলো বিক্রি করে টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে নিলাম ডাক আহ্বান করা হয়। আজ বেলা দুইটা পর্যন্ত দরপত্র গ্রহণ করা হয়। পরিবেশ অধিদপ্তরের তদারকিতে নিলাম ডাক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, সিলেটে নদ-নদীতে পাহাড়ি ঢল নামার সুযোগে একশ্রেণির পাথর কারবারি নানা অজুহাতে অবৈধভাবে পাথর মজুত করে যত্রতত্রভাবে বিক্রি করেন। এতে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকির ঘটনা ঘটে। এবার অবৈধ এই তৎপরতা বন্ধ করতে পাহাড়ি ঢল নামার শুরু থেকে তৎপর ছিল প্রশাসন। প্রথম অভিযান ছিল গত ৯ জুলাই কোম্পানীগঞ্জের ধলাই নদের তীরে। সেখানে অবৈধভাবে মজুত করা ৯ লাখ টাকার পাথর জব্দ করে উপজেলা প্রশাসন। পরে বিএমডির প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে প্রকাশ্যে নিলামের মাধ্যমে জব্দ করা পাথর বিক্রি করে টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়া হয়।
এরপর ১৪ জুলাই জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে অপর এক অভিযানে সুরমা নদীর তীরে অবৈধভাবে মজুত করা পাথর জব্দ করা হয়। পরে প্রকাশ্যে নিলামের মাধ্যমে সেই পাথর ৯৪ লাখ ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়।
বর্ষাকালে অবৈধ পাথর বিপণন বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে তৃতীয় অভিযানের পদক্ষেপ হিসেবে ১৮ জুলাই লোভাছড়ায় ১ কোটি ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়। এত পরিমাণ অবৈধ পাথর একসঙ্গে জব্দ করে নিলাম ডাকে বিক্রির ঘটনা সিলেটে এই প্রথম বলে জানিয়েছেন অভিযান–সংশ্লিষ্টরা।