জেকেজি হেলথ কেয়ারের বিরুদ্ধে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার ভুয়া সনদ দেওয়ার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। সংশ্লিষ্ট পরীক্ষাগার বলছে, প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয় এবং সাবেক এক কর্মচারীর বাসা থেকে জব্দ করা ৩৪টি সনদে দেওয়া পরিচয় নম্বরটি সঠিক নয়।
এদিকে গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গতকাল রোববার প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল হক চৌধুরী ও তাঁর ভগ্নিপতি সাঈদ চৌধুরীকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। সাঈদ চৌধুরী জেকেজির সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিলেন। আজ সোমবার জিজ্ঞাসাবাদ শেষে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান সাবরিনা চৌধুরীকে আদালতে হাজির করা হবে।
মামলাটির প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা তেজগাঁও থানার উপপরিদর্শক (এসআই) দেওয়ান মো. সবুর প্রথম আলোকে বলেন, হুমায়ুন কবীরের বাসা থেকে জব্দ করা ১৯টি এবং জেকেজির কার্যালয়ে থেকে জব্দ করা ১৫টি করোনা সনদের আইডি নম্বর তিনি যাচাই করার জন্য তিনি ইনস্টিটিউট ফর ডেভেলপিং সায়েন্স অ্যান্ড হেলথ ইনিশিয়েটিভ অ্যান্ড হেলথ সার্ভিসেসে (আইডিইএসএইচআই) পাঠিয়েছিলেন। সনদে সেখান থেকে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে বলে উল্লেখ ছিল। কিন্তু ৩৪টি নমুনা তাদের ওখানে পরীক্ষা করানো হয়নি বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
আইডিইএসএইচআইয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কাইসার মান্নুর প্রথম আলোকে বলেন, ১৫ এপ্রিল থেকে ১৫ মে পর্যন্ত জেকেজি তাঁদের পরীক্ষাগারে নমুনা পাঠিয়েছে। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে যে ৩৪টি সনদের আইডি পাঠানো হয়েছিল, সেগুলো তাঁদের এখানে পরীক্ষা করানো হয়নি।
জেকেজি তাহলে কতটি সনদ জালিয়াতি করেছে, এমন প্রশ্নের সঠিক কোনো উত্তর মেলেনি। মামলাটির প্রথম দিকের তদন্ত তদারক কর্মকর্তা তেজগাঁও বিভাগের সহকারী উপকমিশনার মাহমুদ খান প্রথম আলোকে বলেন, জেকেজির সাবেক কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীরের বাসা থেকে তাঁরা ৪৩টি সনদ জব্দ করেছিলেন। এ ছাড়া জেকেজির গুলশানের কার্যালয় থেকে তাঁরা পাঁচটি ল্যাপটপ জব্দ করেন। এর মধ্যে একটি ল্যাপটপে দেড় হাজারের মতো সনদ পাওয়া যায়। এই সনদগুলো ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টার এবং আইডিইএসএইচআইয়ের বলে উল্লেখ করা ছিল। সব সনদ যাচাইয়ের আগেই তদন্তভার ডিবি পুলিশে চলে যায়।
মাহমুদ খান বলেন, জেকেজি বুথগুলো থেকে যে নমুনা সংগ্রহ করেছিল, সেগুলোতে কোনো জালিয়াতি হয়নি। ওই নমুনাগুলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে সরকারের নির্ধারিত পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে ফলাফল দেওয়া হয়েছে। জালিয়াতি হয়েছে তারা বাসা থেকে যে নমুনাগুলো সংগ্রহ করেছিল, সেগুলোতে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের পরিচালক এ কে এম শামছুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, জেকেজি ৩৮ দিনে তাঁদের কাছে ৮ হাজার ৪০০টি নমুনা পাঠিয়েছিল। তাঁরা সেগুলো পরীক্ষা করে পাঠিয়ে দিয়েছেন। প্রতিটি নমুনা পরীক্ষার বিষয়ে বিস্তারিত তাঁরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠিয়ে দিয়েছেন। তাঁদের প্রতিষ্ঠানের নামে জেকেজি কোনো সনদ জালিয়াতি করেছে কি না, সে বিষয়ে তাঁদের কাছে এখনো কেউ জানতে চায়নি।

নিউজ ডেস্ক 










