চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে পদ্মার মাঝনদীতে ভাসা নবনির্মিত রাজরাজেশ্বর ওমর আলী উচ্চবিদ্যালয় মাল্টিপারপাস সাইক্লোন শেল্টারটি হেলে পড়েছে। যেকোনো মুহূর্তে এটি নদীতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় ব্যক্তিরা। এ কারণে নতুন ভবনের শ্রেণিকক্ষে বসে লেখাপড়ার স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে ওই এলাকার প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থীর।
স্থানীয় লোকজন জানান, আজ বৃহস্পতিবার ভোরে উজান থেকে নেমে আসা বন্যার পানির প্রবল স্রোতে এই বিদ্যালয় কাম ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রটির চারপাশ নদীতে আস্তে আস্তে হেলে পড়ে। ক্রমে এটি প্রায় ডুবে যায়। তবে এরপরও শেষ চিহ্ন হিসেবে অবশিষ্ট ওই ভবনের কিছু অংশ নদীর বুকে উঁকি দিয়ে রয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে ততটুকুও নদীগর্ভে চিরতরে হারিয়ে যাবে।
রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের লক্ষ্মীর চরে যেখানে নবনির্মিত ভবনটি দাঁড়িয়ে আছে, ১৯৮৮ সালে সেখানেই প্রথম স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত করা হয়। কিন্তু ২০০০ সাল থেকে এটি ১১ বার ভাঙনের শিকার হওয়ায় স্কুলের কার্যক্রম এখান থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে এই স্কুলের কার্যক্রম পাশের বলিয়ার চরে একটি টিনের ঘরে চলছে।
ইউপি সদস্য পারভেজ গাজী রনি বলেন, ইউনিয়নবাসীর দাবির মুখে চাঁদপুর-৩ আসনের সাংসদ ও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ২০১৯ সালে প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নেন। কাজ শুরুর এক বছরের মাথায় প্রায় ২ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে লক্ষ্মীর চরেই তিনতলা এই বিদ্যালয় কাম ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রটি তৈরি করা হয়। তখন নদী এই ভবন থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে ছিল।
রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হযরত আলী ব্যাপারী বলেন, ‘আমার ইউনিয়নটি পদ্ম ও মেঘনার নদীর মাঝখানে। এ কারণে প্রতিবছর বর্ষার সময় তীব্র ভাঙন দেখা দেয়। তবে ওমর আলী উচ্চবিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টারটি জন্য যে জায়গাটি নির্ধারণ করা হয়েছে, আমি সেখানে এটি না করার জন্য বলেছিলাম। স্থানীয় জেলা প্রশাসনও সেখানে এটি করার ব্যাপারে রাজি ছিল না। কিন্তু এরপরও এটি সেখানে করায় আমি আপত্তি জানিয়েছি। শেষ পর্যন্ত আমার আশঙ্কা সত্যি প্রমাণিত হয়েছে।’
চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কানিজ ফাতেমা বলেন, ২০১৪ সালে এটি করার প্রস্তাব হয়। তখন ভবনটির সাইট সিলেকশনের সময় নদী ছিল তিন কিলোমিটার দূরে। পরবর্তী সময়ে ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় এটির জায়গা নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন করে।
চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. বাবুল আক্তার বলেন, উজান থেকে নেমে আসা বন্যার পানি বৃদ্ধি পেয়ে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় বিপৎসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ কারণে তীব্র স্রোতের তোরে এই ভবনটিও নদীগর্ভে দ্রুত বিলীন হয়ে যাচ্ছে।