ঢাকা , সোমবার, ০৫ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
৩ এপ্রিল ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি বাংলাদেশ সাবমেরিন কেব্‌ল কোম্পানির সব ধরনের ইন্টারনেটের দাম কমছে ১০ শতাংশ। রমজানে মাধ্যমিক স্কুল খোলা থাকবে ১৫ দিন, প্রাথমিক স্কুল ১০ দিন খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে টেকনাফ সীমান্তের হোয়াইক্যং এলাকা দিয়ে আজ অস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে মিয়ানমারের সেনা সাদ সাহেব রুজু করার পর দেওবন্দের মাসআলা খতম হয়ে গেছে : মাওলানা আরশাদ মাদানী চলছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিনের বয়ান পুলিশ সদস্যসহ বিশ্ব ইজতেমায় ৭ জনের মৃত্যু বর্তমান সরকারের সঙ্গে সব দেশ কাজ করতে চায়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়পুরহাটে স্কুলছাত্র হত্যায় ১১ জনের মৃত্যুদণ্ড

পানির সঙ্গে যুদ্ধ, জীবন নিয়ে ছুট

  • নিউজ ডেস্ক
  • প্রকাশিত : ০৯:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জুলাই ২০২০
  • ৭২৯ পঠিত

‘হামার কষ্টোর কতা কী আর কমগো। ঘরোত এক বুক পানি। থাকা যায় না। উলিপুর আত্মীয়র বাড়ীত যাবার নাগছি।’

চিলমারী উপজেলা সদরে কোমরসমান পানি ভেঙে আসার সময় কথাগুলো বলছিলেন ৮০ বছরের মালেক বেওয়া। দুই নাতি-নাতনিকে ধরে প্রায় এক কিলোমিটার পথ পানি ভেঙে মাটিকাটা এলাকায় আসেন তিনি।

আজ মঙ্গলবার সকালে চিলমারী উপজেলায় যাওয়ার পথে দেখা যায়, উলিপুর উপজেলার আরডিআরএস কার্যালয়ের পাশ থেকে চিলমারী পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে বন্যার পানি ঢুকে প্লাবিত হয়ে পড়েছে। বন্যার্ত মানুষ চিলমারী সড়ক, রেললাইন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ, রেলওয়ে স্টেশন ও ইটভাটায় আশ্রয় নিয়েছেন।

চিলমারী কিশামত বানু বান্দার ঘাট এলাকায় দেখা যায়, সেতুর ওপর ২৫টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। ৭৯ বছরের এমদাদুল হক বলেন, ‘এক সপ্তাহ থাকি সড়োকোত আছি কাইয়ো খোঁজ নেয় না। বাড়ীত এক মাথা পানি।’ একই এলাকার হামিদা বেওয়া বলেন, ‘হামার কষ্টের শ্যাষ নাই গো। ১৯৯৮ সালে স্বামী ছাড়ি চলি যায়। সেই থাকি দুকনা ছাওয়া ধরি আছি। আস্তাত পলিথিন দিয়া আছি। বৃষ্টিত থাকা যায় না।’

এই এলাকা থেকে কিছুদূর এগিয়ে বালাবাড়ী স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, পাঁচটি পরিবার সেখানে ঠাঁই নিয়েছে। পাশেই মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ। সেখানেও পাঁচটি পরিবার। তাদের মধ্যে আবদুল জলিল দেয়ালে পলিথিন সেঁটে পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। সঙ্গে ছেলে ও স্ত্রী আমিনা বেগম। এ সময় প্রচণ্ড বৃষ্টি শুরু হয়। পলিথিন দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে থাকে। আবদুল জলিল বলেন, ‘আমার বাড়ি শিকারপাড়া গ্রামে। করোনার সময় থাকি বসি। হাওলাদ করি চলবার নাগছি। এল্যা পানি বাড়ি ঘরে পানি এটোই আসি উঠছি। কেই কোনো সাহায্য দেয় নাই।’

চিলমারী মাটিকাটা মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, দলে দলে লোকজন উপজেলা সদর থেকে হেঁটে, রিকশা ও ঘোড়ার গাড়িতে করে আসছেন। কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। চারদিকে পানি। আবদুল কুদ্দুস ও পারভিন বেগম দম্পতির বাড়ি এখান থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে রানীগঞ্জ ইউনিয়নে। আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘পানির মধ্যে বাড়ি থেকে নৌকায় আসি এক বুক পানি পার হয়া উপজেলা মহিলা ও শিশুবিষয়ক অফিসে গেলাম। যায়া দেখি আফিস বন্ধ। ঘুরি যাবার নাগছি।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ ডব্লিউ এম রায়হান শাহ জানান, সর্বত্র পানি। বন্যাকবলিত মানুষ ৮২টি আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। তাঁরা সংখ্যায় প্রায় সাড়ে আট হাজার। এ ছাড়া সড়ক, রেলপথসহ বিভিন্ন স্থানে মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, অনন্তপুর সেতু দিয়ে পানি ঢুকে প্লাবিত করছে। এ এলাকায় একটি ১০০ মিটার বাঁধ ও রেগুলেটর নির্মাণের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। পাস হলে কাজ করা যাবে। তখন আর পানি ঢুকবে না।

Tag :
জনপ্রিয়

৩ এপ্রিল ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি

পানির সঙ্গে যুদ্ধ, জীবন নিয়ে ছুট

প্রকাশিত : ০৯:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জুলাই ২০২০

‘হামার কষ্টোর কতা কী আর কমগো। ঘরোত এক বুক পানি। থাকা যায় না। উলিপুর আত্মীয়র বাড়ীত যাবার নাগছি।’

চিলমারী উপজেলা সদরে কোমরসমান পানি ভেঙে আসার সময় কথাগুলো বলছিলেন ৮০ বছরের মালেক বেওয়া। দুই নাতি-নাতনিকে ধরে প্রায় এক কিলোমিটার পথ পানি ভেঙে মাটিকাটা এলাকায় আসেন তিনি।

আজ মঙ্গলবার সকালে চিলমারী উপজেলায় যাওয়ার পথে দেখা যায়, উলিপুর উপজেলার আরডিআরএস কার্যালয়ের পাশ থেকে চিলমারী পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে বন্যার পানি ঢুকে প্লাবিত হয়ে পড়েছে। বন্যার্ত মানুষ চিলমারী সড়ক, রেললাইন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ, রেলওয়ে স্টেশন ও ইটভাটায় আশ্রয় নিয়েছেন।

চিলমারী কিশামত বানু বান্দার ঘাট এলাকায় দেখা যায়, সেতুর ওপর ২৫টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। ৭৯ বছরের এমদাদুল হক বলেন, ‘এক সপ্তাহ থাকি সড়োকোত আছি কাইয়ো খোঁজ নেয় না। বাড়ীত এক মাথা পানি।’ একই এলাকার হামিদা বেওয়া বলেন, ‘হামার কষ্টের শ্যাষ নাই গো। ১৯৯৮ সালে স্বামী ছাড়ি চলি যায়। সেই থাকি দুকনা ছাওয়া ধরি আছি। আস্তাত পলিথিন দিয়া আছি। বৃষ্টিত থাকা যায় না।’

এই এলাকা থেকে কিছুদূর এগিয়ে বালাবাড়ী স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, পাঁচটি পরিবার সেখানে ঠাঁই নিয়েছে। পাশেই মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ। সেখানেও পাঁচটি পরিবার। তাদের মধ্যে আবদুল জলিল দেয়ালে পলিথিন সেঁটে পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। সঙ্গে ছেলে ও স্ত্রী আমিনা বেগম। এ সময় প্রচণ্ড বৃষ্টি শুরু হয়। পলিথিন দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে থাকে। আবদুল জলিল বলেন, ‘আমার বাড়ি শিকারপাড়া গ্রামে। করোনার সময় থাকি বসি। হাওলাদ করি চলবার নাগছি। এল্যা পানি বাড়ি ঘরে পানি এটোই আসি উঠছি। কেই কোনো সাহায্য দেয় নাই।’

চিলমারী মাটিকাটা মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, দলে দলে লোকজন উপজেলা সদর থেকে হেঁটে, রিকশা ও ঘোড়ার গাড়িতে করে আসছেন। কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। চারদিকে পানি। আবদুল কুদ্দুস ও পারভিন বেগম দম্পতির বাড়ি এখান থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে রানীগঞ্জ ইউনিয়নে। আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘পানির মধ্যে বাড়ি থেকে নৌকায় আসি এক বুক পানি পার হয়া উপজেলা মহিলা ও শিশুবিষয়ক অফিসে গেলাম। যায়া দেখি আফিস বন্ধ। ঘুরি যাবার নাগছি।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ ডব্লিউ এম রায়হান শাহ জানান, সর্বত্র পানি। বন্যাকবলিত মানুষ ৮২টি আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। তাঁরা সংখ্যায় প্রায় সাড়ে আট হাজার। এ ছাড়া সড়ক, রেলপথসহ বিভিন্ন স্থানে মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, অনন্তপুর সেতু দিয়ে পানি ঢুকে প্লাবিত করছে। এ এলাকায় একটি ১০০ মিটার বাঁধ ও রেগুলেটর নির্মাণের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। পাস হলে কাজ করা যাবে। তখন আর পানি ঢুকবে না।