নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার ঘোরলাজ গ্রামের আমচাষী মমতাজ উদ্দিন। এবার তার ২৫ বিঘা জমির বাগানে রয়েছে ফজলি এবং আশ্বিনা জাতের আম। প্রতিটি আম বিশেষ ধরনের কাগজের ব্যাগে মোড়ানো।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোমরেজ আলী ও কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান তার আম বাগান পরিদর্শন করেন।
এ সময় মমতাজ উদ্দিন নিরাপদ আম সংরক্ষণের ফ্রুট ব্যাগ প্রযুক্তির বিষয়টি তুলে ধরে মজা করে বলেন, পোশাক পরেছে তার বাগানের আম।
জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীর পর আম উৎপাদনকারী জেলা হিসেবে পরিচিতি রয়েছে নাটোরের। এক সময় কীটনাশক ছাড়া গ্রীষ্মকালীন ফল উৎপাদনের চিন্তা করতে পারতেন না মৌসুমী চাষীরা। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রথাগত পরিবর্তন এসেছে ফল উৎপাদনে। উৎপাদিত ফল রফতানির চিন্তা মাথায় রেখে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিষমুক্ত ও নিরাপদ ফল উৎপাদনের লক্ষ্যে চিরাচরিত কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে চাষীরা বেছে নিচ্ছেন ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি।
২০১৮ সালে উপজেলা পরিষদের এডিপি অর্থায়নে উপজেলা কৃষি অফিসের সার্বিক পরামর্শ ও তত্ত্বাবধায়নে বাগাতিপাড়া উপজেলায় শুরু হয় ফলের ব্যাগিং প্রযুক্তির ব্যবহার। এরপর থেকে উপজেলায় এ পদ্ধতিতে আম চাষ করা হয়। কীটনাশকের বিরুদ্ধে মানবদেহ ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করায় জনপ্রিয় হচ্ছে দিন দিন।
নাটোরের বাগাতিপাড়ায় চলতি মৌসুমে রফতানির উদ্দেশে ৭০ বিঘা জমিতে আম গাছে বিশেষ ধরনের কাগজের ব্যাগ দিয়ে মোড়ানো ফ্রুট ব্যাগিং করা হয়েছে।
চাষী মমতাজ উদ্দিনের বাগান ঘুরে সরেজমিন দেখা যায়, বাবুই পাখির বাসার মতো গাছে গাছে বাদামী রংয়ের কাগজের ব্যাগ ঝুলছে। প্রতিটি গাছের আম কাগজের ব্যাগ দিয়ে মোড়ানো রয়েছে। এক-একটা ব্যাগ খুলে দেখান। সতেজ সবুজ ও পরিষ্কার আম। আমের গায়ে দাগ নেই। ধুলা ও পোকামাকড় নেই। নেই রোগবালাই।
মমতাজ উদ্দিন বলেন, ‘গত বছরে উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শক্রমে বিভিন্ন জাতের আম ফ্রুট ব্যাগিং করে বেশ সফলতা পেয়েছি। সেই অভিজ্ঞতায় এ বছর ২৫ বিঘা জমিতে ফজলি ও আশ্বিনা জাতের আম ফ্রুট ব্যাগিং করছি। এই পদ্ধতি ব্যবহার করায় আম বাগানে বর্তমানে আমাকে কোনো বাড়তি কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়নি। ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে উৎপাদিত আমের চাহিদা বেশি থাকায় দেশ ও দেশের বাইরে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে রফতানির লক্ষ্য রয়েছে। এ বছর করোনার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। তবে সামনে এ প্রক্রিয়ায় অব্যাহত রাখা হবে।
তার দাবি, আমগুলো ব্যাগের ভিতরে থাকায় কীটনাশক প্রয়োগ ছাড়াই পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাবে। এই পদ্ধতিতে আম নষ্টও কম হয় এবং উৎপাদিত আম ফলনও বৃদ্ধি পায়। স্বল্প খরচে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতির মাধ্যমে মানসম্পন্ন আম উৎপাদন করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার প্রত্যাশা করেন তিনি।
মমতাজ উদ্দিনের মতো এখন উপজেলার বেশকিছু আমচাষী ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে আম সংরক্ষণ করছেন। নিরাপদ আম উৎপাদনে উপজেলার জামনগরের গোলাম মওলা, রব্বানী, গোলজার মেম্বার, আজগর মোড়ের রওশনসহ বেশকিছু আমচাষী এবার আমে ফ্রুট ব্যাগিং করেছেন।
বাগাতিপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোমরেজ আলী বলেন, উপজেলায় দিন দিন এ পদ্ধতিতে আম চাষে জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এই পদ্ধতির ফলে মাছি-পোকা আম নষ্ট করতে পারে না। তাছাড়া এ পোকা দমনে কীটনাশক স্প্রে করার প্রয়োজন হয় না। বিষমুক্ত নিরাপদ ফল উৎপাদনে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতির প্রসার ঘটাতে উপজেলা কৃষি বিভাগ হতে কৃষকদের সব রকম পরামর্শ ও সহায়তা দেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।