ঢাকা , রবিবার, ০৪ মে ২০২৫, ২১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
৩ এপ্রিল ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি বাংলাদেশ সাবমেরিন কেব্‌ল কোম্পানির সব ধরনের ইন্টারনেটের দাম কমছে ১০ শতাংশ। রমজানে মাধ্যমিক স্কুল খোলা থাকবে ১৫ দিন, প্রাথমিক স্কুল ১০ দিন খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে টেকনাফ সীমান্তের হোয়াইক্যং এলাকা দিয়ে আজ অস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে মিয়ানমারের সেনা সাদ সাহেব রুজু করার পর দেওবন্দের মাসআলা খতম হয়ে গেছে : মাওলানা আরশাদ মাদানী চলছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিনের বয়ান পুলিশ সদস্যসহ বিশ্ব ইজতেমায় ৭ জনের মৃত্যু বর্তমান সরকারের সঙ্গে সব দেশ কাজ করতে চায়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়পুরহাটে স্কুলছাত্র হত্যায় ১১ জনের মৃত্যুদণ্ড

মুম্বাই বস্তির এত মানুষ করোনার লাগাম টানল কীভাবে

  • নিউজ ডেস্ক
  • প্রকাশিত : ১১:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ জুলাই ২০২০
  • ৮৫৮ পঠিত

ভারতের মুম্বাইয়ের ধারাবি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও ঘিঞ্জি বস্তিগুলোর একটি। ভারতের এই বৃহত্তম বস্তিতে গত এপ্রিল মাসে প্রথম যখন করোনার সংক্রমণ শুরু হয়, তখন অনেকে আশঙ্কা করেছিলেন এটি কবরস্থানে রূপ নেবে। সরু গলি, জঞ্জালে ভরা এ বস্তিতে যেখানে গায়ে গা লাগিয়ে চলাফেরা করতে হয়, সেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বা সংক্রমিত ব্যক্তিকে নজরদারিতে রাখা অসম্ভব বলেই মনে হয়েছিল। তিন মাস পর বস্তিতে করোনার সংক্রমণ কমে আসায় এ সংকট থেকে উতরে করোনা জয়ে আশার আলো দেখা যাচ্ছে। আজ বুধবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

শহরের কর্মকর্তা কিরণ দিবাকরের মতে, ধ্বংসের অপেক্ষার বদলে ভাইরাসকে তাড়া করার কঠোর কৌশল নেওয়ার বিষয়টিকে ধন্যবাদ দিতে হয়।

প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর্মীরা বস্তির বিভিন্ন অংশে ‘ফিভার ক্যাম্প’ নামে জ্বর মাপার ক্যাম্প শুরু করে। এতে সেখানকার বাসিন্দারা কোনো উপসর্গ দেখা দিলে প্রয়োজনে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করাতে সক্ষম হন। স্কুল, বিয়ের অনুষ্ঠানের স্থান, খেলাধুলার বিভিন্ন কমপ্লেক্সকে কোয়ারেন্টিনের জায়গা হিসেবে তৈরি করা হয়। সেখানে বিনা মূল্যে খাবার, ভিটামিন ও যোগব্যায়াম শিক্ষা দেওয়া হয়। ভাইরাস হটস্পটগুলোয় কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া হয়। সেখানে ড্রোন দিয়ে তাদের কার্যক্রম নজরদারি ও পুলিশকে সতর্ক করার ব্যবস্থা করা হয়। স্বেচ্ছাসেবী গ্রুপ তৈরি করে তাদের কাজে লাগানো এবং তারা যাতে ক্ষুধার্ত না থাকে, সে জন্য রেশন ব্যবস্থা চালু করা হয়। বলিউড তারকা ও ব্যবসায়ীদের সহায়তায় ধারাবি পার্কে দ্রুত ২০০ শয্যার হাসপাতাল তৈরি করে ফেলা হয়।

গত জুন মাসের শেষ নাগাদ বস্তির অর্ধেক মানুষের উপসর্গ পরীক্ষা করা হয়েছে এবং ১২ হাজার জনের করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ধারাবি বস্তিতে ৮২ জন মারা গেছে, যা মুম্বাইয়ে মোট ৪ হাজার ৫০০ মৃত্যুর সামান্য অংশ।

ধারাবি বস্তিতে ছোট্ট এক ক্লিনিকে দৈনিক ১০০ রোগী দেখেন চিকিৎসক অভয় তাওরে। তিনি বলেন, ‘আমরা জয়ের দ্বারপ্রান্তে। আমি গর্বিত। তবে রোগ থেকে সেরে ওঠা মানেই এর সমাপ্তি নয়।’

৪৪ বছর বয়সী কোভিড থেকে সেরা ওঠা এক ব্যক্তি বলেছেন, তিনি কাজে ফেরার আশা করছেন। তবে আশাবাদের পাশাপাশি উদ্বেগও রয়েছে। ২৫ দিন হাসপাতালে ও ১৪ দিন আইসোলেশনে থাকা সুশীল বলেন, ‘তিনি এখন করোনাভাইরাসের চিকিৎসা নেওয়ার পর সামাজিক বৈষম্যের শিকার হওয়ার ভয়ে রয়েছেন।’ ২৪ বছর বয়সী এক যুবক এ এলাকায় আবার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও করছেন। তিনি বলেছেন, ‘মানুষকে আরও বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সংখ্যা এখন কিছুটা কমতে পারে, আবার দ্রুত বেড়েও যেতে পারে।’

করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় মুম্বাই ও দিল্লি লড়াই করছে এবং দেশে সংক্রমণ ৫ লাখ পার হয়ে গেছে। দিবাকর বলেন, ‘এটা যুদ্ধ। সবকিছুই চলমান। আমরা এখন পরিস্থিতির চূড়ায় রয়েছি। এখন চ্যালেঞ্জ হচ্ছে কারখানা আবার চালু করা।’

ধারাবির গাড়ি বিক্রেতা বিনোদ কাম্বলি গত এপ্রিল মাসে মুম্বাইয়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর ভীতি ছড়ানো নিয়ে স্মৃতিচারণা করেন। তিনি বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম, আমরা শেষ হয়ে যাব। কিছুই হয়তো টিকবে না।’

বস্তিতে সংক্রমণ ঠেকানোর কোনো সম্ভাবনা ছিল না বলে বর্ণনা করে বিনোদ বলেন, ‘আমাদের উন্নত অবকাঠামো প্রয়োজন। তা না হলে এ ধরনের রোগ যখন পরে আসবে, ধারাবি তা থেকে রক্ষা পাবে না।’

Tag :
জনপ্রিয়

৩ এপ্রিল ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি

মুম্বাই বস্তির এত মানুষ করোনার লাগাম টানল কীভাবে

প্রকাশিত : ১১:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ জুলাই ২০২০

ভারতের মুম্বাইয়ের ধারাবি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও ঘিঞ্জি বস্তিগুলোর একটি। ভারতের এই বৃহত্তম বস্তিতে গত এপ্রিল মাসে প্রথম যখন করোনার সংক্রমণ শুরু হয়, তখন অনেকে আশঙ্কা করেছিলেন এটি কবরস্থানে রূপ নেবে। সরু গলি, জঞ্জালে ভরা এ বস্তিতে যেখানে গায়ে গা লাগিয়ে চলাফেরা করতে হয়, সেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বা সংক্রমিত ব্যক্তিকে নজরদারিতে রাখা অসম্ভব বলেই মনে হয়েছিল। তিন মাস পর বস্তিতে করোনার সংক্রমণ কমে আসায় এ সংকট থেকে উতরে করোনা জয়ে আশার আলো দেখা যাচ্ছে। আজ বুধবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

শহরের কর্মকর্তা কিরণ দিবাকরের মতে, ধ্বংসের অপেক্ষার বদলে ভাইরাসকে তাড়া করার কঠোর কৌশল নেওয়ার বিষয়টিকে ধন্যবাদ দিতে হয়।

প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর্মীরা বস্তির বিভিন্ন অংশে ‘ফিভার ক্যাম্প’ নামে জ্বর মাপার ক্যাম্প শুরু করে। এতে সেখানকার বাসিন্দারা কোনো উপসর্গ দেখা দিলে প্রয়োজনে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করাতে সক্ষম হন। স্কুল, বিয়ের অনুষ্ঠানের স্থান, খেলাধুলার বিভিন্ন কমপ্লেক্সকে কোয়ারেন্টিনের জায়গা হিসেবে তৈরি করা হয়। সেখানে বিনা মূল্যে খাবার, ভিটামিন ও যোগব্যায়াম শিক্ষা দেওয়া হয়। ভাইরাস হটস্পটগুলোয় কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া হয়। সেখানে ড্রোন দিয়ে তাদের কার্যক্রম নজরদারি ও পুলিশকে সতর্ক করার ব্যবস্থা করা হয়। স্বেচ্ছাসেবী গ্রুপ তৈরি করে তাদের কাজে লাগানো এবং তারা যাতে ক্ষুধার্ত না থাকে, সে জন্য রেশন ব্যবস্থা চালু করা হয়। বলিউড তারকা ও ব্যবসায়ীদের সহায়তায় ধারাবি পার্কে দ্রুত ২০০ শয্যার হাসপাতাল তৈরি করে ফেলা হয়।

গত জুন মাসের শেষ নাগাদ বস্তির অর্ধেক মানুষের উপসর্গ পরীক্ষা করা হয়েছে এবং ১২ হাজার জনের করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ধারাবি বস্তিতে ৮২ জন মারা গেছে, যা মুম্বাইয়ে মোট ৪ হাজার ৫০০ মৃত্যুর সামান্য অংশ।

ধারাবি বস্তিতে ছোট্ট এক ক্লিনিকে দৈনিক ১০০ রোগী দেখেন চিকিৎসক অভয় তাওরে। তিনি বলেন, ‘আমরা জয়ের দ্বারপ্রান্তে। আমি গর্বিত। তবে রোগ থেকে সেরে ওঠা মানেই এর সমাপ্তি নয়।’

৪৪ বছর বয়সী কোভিড থেকে সেরা ওঠা এক ব্যক্তি বলেছেন, তিনি কাজে ফেরার আশা করছেন। তবে আশাবাদের পাশাপাশি উদ্বেগও রয়েছে। ২৫ দিন হাসপাতালে ও ১৪ দিন আইসোলেশনে থাকা সুশীল বলেন, ‘তিনি এখন করোনাভাইরাসের চিকিৎসা নেওয়ার পর সামাজিক বৈষম্যের শিকার হওয়ার ভয়ে রয়েছেন।’ ২৪ বছর বয়সী এক যুবক এ এলাকায় আবার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও করছেন। তিনি বলেছেন, ‘মানুষকে আরও বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সংখ্যা এখন কিছুটা কমতে পারে, আবার দ্রুত বেড়েও যেতে পারে।’

করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় মুম্বাই ও দিল্লি লড়াই করছে এবং দেশে সংক্রমণ ৫ লাখ পার হয়ে গেছে। দিবাকর বলেন, ‘এটা যুদ্ধ। সবকিছুই চলমান। আমরা এখন পরিস্থিতির চূড়ায় রয়েছি। এখন চ্যালেঞ্জ হচ্ছে কারখানা আবার চালু করা।’

ধারাবির গাড়ি বিক্রেতা বিনোদ কাম্বলি গত এপ্রিল মাসে মুম্বাইয়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর ভীতি ছড়ানো নিয়ে স্মৃতিচারণা করেন। তিনি বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম, আমরা শেষ হয়ে যাব। কিছুই হয়তো টিকবে না।’

বস্তিতে সংক্রমণ ঠেকানোর কোনো সম্ভাবনা ছিল না বলে বর্ণনা করে বিনোদ বলেন, ‘আমাদের উন্নত অবকাঠামো প্রয়োজন। তা না হলে এ ধরনের রোগ যখন পরে আসবে, ধারাবি তা থেকে রক্ষা পাবে না।’