ঢাকা , বুধবার, ০৭ মে ২০২৫, ২৪ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
৩ এপ্রিল ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি বাংলাদেশ সাবমেরিন কেব্‌ল কোম্পানির সব ধরনের ইন্টারনেটের দাম কমছে ১০ শতাংশ। রমজানে মাধ্যমিক স্কুল খোলা থাকবে ১৫ দিন, প্রাথমিক স্কুল ১০ দিন খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে টেকনাফ সীমান্তের হোয়াইক্যং এলাকা দিয়ে আজ অস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে মিয়ানমারের সেনা সাদ সাহেব রুজু করার পর দেওবন্দের মাসআলা খতম হয়ে গেছে : মাওলানা আরশাদ মাদানী চলছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিনের বয়ান পুলিশ সদস্যসহ বিশ্ব ইজতেমায় ৭ জনের মৃত্যু বর্তমান সরকারের সঙ্গে সব দেশ কাজ করতে চায়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়পুরহাটে স্কুলছাত্র হত্যায় ১১ জনের মৃত্যুদণ্ড

হোয়াট আ শেম, বললেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী

  • নিউজ ডেস্ক
  • প্রকাশিত : ০১:২৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ জুন ২০২০
  • ৭১১ পঠিত

সাতবার বেজে ফোনটা থেমে গেল রাত ১১টা ৩৬ সেকেন্ডে। কার ফোন, দেখে অবাকই হলাম। ফোন করেছেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ৭৯ বছর বয়সী এই মুক্তিযোদ্ধা চিকিৎসক একত্রে নিজের, স্ত্রী ও সন্তানের করোনা রোগ এবং এর চিকিৎসাসহায়ক কিট মানুষের সেবায় কাজে লাগাতে লড়ছেন।

আট মিনিট পর তাঁকে ফোন দিই। দুবারও বাজেনি। ধরলেন তিনি।

অপর প্রান্ত থেকে ভেসে এল: ‘কথা বলতে পারি না।’এটুকু স্পষ্ট বুঝলাম। এর আগের একটি শব্দ অস্পষ্ট। বললাম, অল্প একটু বলুন। আপনার কণ্ঠের বিশ্রাম দরকার। এরপর নীরবতা। আবার বললাম, ‘আমরা জেনেছি, আপনি সেরে উঠছেন। কথা বলতে হবে না। আপনি শুনে যান। আপনি পুরোপুরি সেরে উঠুন। আমরা আপনার জন্য দোয়া করছি। দেশের মানুষ দোয়া করছে। আপনি যে নিজেকে সব থেকে ভাগ্যবান করোনা রোগী বলেছিলেন, সেই ভিডিও প্রায় এক মিলিয়ন মানুষ দেখেছেন। হাজার হাজার মানুষ লাইক দিয়েছেন। আর মন্তব্য করেছেন একবাক্যে: আল্লাহর কাছে দোয়া করছি। তাঁরা বলেছেন, আপনি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুন।’

উল্লেখ্য, দুই সপ্তাহ আগে করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসার পর গত ২৮ এপ্রিল ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, তিনি নিজেকে সব থেকে ভাগ্যবান করোনা রোগী মনে করেন। কারণ, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের মধ্যে মুখ–দেখাদেখি বন্ধ থাকার দেশে উভয় নেত্রী তাঁর খোঁজখবর নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তদারকিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজে তাঁর জন্য একটি কেবিন বরাদ্দ করা হয়েছে। অন্যদিকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তাঁর জন্য ঝুড়িভর্তি ফল পাঠিয়েছেন। শনিবার মধ্যরাত পর্যন্ত ওই ভিডিওটি প্রথম আলোর ফেসবুক পেজে ৯ লাখ ২ হাজার মানুষ দেখেছেন। প্রায় ৪ হাজার শেয়ার, ১ হাজার ৩০০ মন্তব্য এবং ৩৮ হাজার মানুষ লাইক কিংবা ভালোবাসা জানিয়েছেন।

এসব তথ্য জেনে তিনি ঈষৎ জড়ানো, কিন্তু স্পষ্ট কণ্ঠেই বললেন: ‘অনেক ভালো হয়েছে।’

এরপর তাঁকে জানালাম: আপনার স্বপ্নের অ্যান্টিবডি টেস্ট কিটের ফলাফল আসন্ন। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপাচার্য ডা. কনক কান্তি বড়ুয়াকে ফোন দিয়েছিলাম। তিনি বলেছেন, তিন-চার দিনের মধ্যে চূড়ান্ত হবে।

‘হোয়াট আ শেম’(কী লজ্জা)’। ‘হোয়াট আ শেম’। দুবার বললেন। এর পরের আরেকটি কথা অস্পষ্ট। সম্ভবত বলেছেন, জাতি বঞ্চিত।

এরপর আর দুটি শব্দ। দুবার বললেন, ‘ভালো থাকো।’ এরপর নীরবতা। কিন্তু লাইন কাটেননি। কিছুক্ষণ পর বিচ্ছিন্ন করে দিই।

এই টেলিফোন আলাপের একটু আগেই তাঁর স্বাস্থ্য বিষয়ে দীর্ঘক্ষণ কথা হলো ডা. মুহিব উল্লাহ খন্দকারের সঙ্গে। তিনি গণস্বাস্থ্য সামাজিক মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ। বলেছিলাম, তাঁর সঙ্গে কি কথা বলতে পারি? তিনি বলেছিলেন, তাঁকে ফোন দেওয়া হয়নি। কারণ, তাঁর ভয়েস রেস্ট দরকার।

অতঃপর অনেকেরই পরিচিত তাঁর ফোন নম্বরটি থেকেই ফোন আসে। বুঝলাম, ডাক্তারের চোখ ফাঁকি দিয়ে কী করে ফোন করায়ত্ত করা যায়, সেটা তার থেকে আর কে ভালো জানবে?

শনিবার রাত ১০টার একটু আগে ডা. মুহিব উল্লাহ খন্দকারের কাছ থেকে একটি খুদে বার্তা পাই। তাতে লেখা: ‘আল্লাহর রহমতে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী করোনা অ্যান্টিজেন নেগেটিভ এবং অ্যান্টিবডি ফর কোভিড–১৯ পজিটিভ। উনি আজ সারাদিন কোনোপ্রকার বাড়তি অক্সিজেন ছাড়া স্যাচুরেশন ৯৫ শতাংশ রাখতে পেরেছেন।’ তাঁকে ফোন দিতেই তিনি জানিয়েছিলেন, ‘ডা. জাফরুল্লাহকে দেখতে শনিবার সন্ধ্যায় গিয়েছিলাম। তখন তিনি তাঁর করোনা নেগেটিভ হওয়ার বিষয়টি আপনাকে জানাতে বললেন।’

জাফরুল্লাহ চৌধুরী নিজের প্রতিষ্ঠিত গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাঁর বিষয়ে শনিবার দিনে তাঁর স্ত্রী শিরিন হক বলেছিলেন, ‘ধীরে ধীরে ওর উন্নতি হচ্ছে। তবে কথা বেশি বলতে পারে না, খুব ক্ষীণ আওয়াজ। একটু একটু কথা এখন বলতে শুরু করেছে। সবাইকে নাকি চিরকুট দিচ্ছে, ডাক্তারদেরও চিরকুট দেয়।’

তিনি যে একটু কথা বলেন, তার প্রমাণ তো পেলামই। ফোনও যে করতে পারেন, তারও প্রমাণ মিলল। আরও প্রমাণ মিলল, জীবন–মৃত্যুর সন্ধিক্ষণেও কত অকপট হতে পারেন ৭৯ বছর বয়সী একজন মুক্তিযোদ্ধা জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

Tag :
জনপ্রিয়

৩ এপ্রিল ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি

হোয়াট আ শেম, বললেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী

প্রকাশিত : ০১:২৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ জুন ২০২০

সাতবার বেজে ফোনটা থেমে গেল রাত ১১টা ৩৬ সেকেন্ডে। কার ফোন, দেখে অবাকই হলাম। ফোন করেছেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ৭৯ বছর বয়সী এই মুক্তিযোদ্ধা চিকিৎসক একত্রে নিজের, স্ত্রী ও সন্তানের করোনা রোগ এবং এর চিকিৎসাসহায়ক কিট মানুষের সেবায় কাজে লাগাতে লড়ছেন।

আট মিনিট পর তাঁকে ফোন দিই। দুবারও বাজেনি। ধরলেন তিনি।

অপর প্রান্ত থেকে ভেসে এল: ‘কথা বলতে পারি না।’এটুকু স্পষ্ট বুঝলাম। এর আগের একটি শব্দ অস্পষ্ট। বললাম, অল্প একটু বলুন। আপনার কণ্ঠের বিশ্রাম দরকার। এরপর নীরবতা। আবার বললাম, ‘আমরা জেনেছি, আপনি সেরে উঠছেন। কথা বলতে হবে না। আপনি শুনে যান। আপনি পুরোপুরি সেরে উঠুন। আমরা আপনার জন্য দোয়া করছি। দেশের মানুষ দোয়া করছে। আপনি যে নিজেকে সব থেকে ভাগ্যবান করোনা রোগী বলেছিলেন, সেই ভিডিও প্রায় এক মিলিয়ন মানুষ দেখেছেন। হাজার হাজার মানুষ লাইক দিয়েছেন। আর মন্তব্য করেছেন একবাক্যে: আল্লাহর কাছে দোয়া করছি। তাঁরা বলেছেন, আপনি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুন।’

উল্লেখ্য, দুই সপ্তাহ আগে করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসার পর গত ২৮ এপ্রিল ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, তিনি নিজেকে সব থেকে ভাগ্যবান করোনা রোগী মনে করেন। কারণ, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের মধ্যে মুখ–দেখাদেখি বন্ধ থাকার দেশে উভয় নেত্রী তাঁর খোঁজখবর নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তদারকিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজে তাঁর জন্য একটি কেবিন বরাদ্দ করা হয়েছে। অন্যদিকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তাঁর জন্য ঝুড়িভর্তি ফল পাঠিয়েছেন। শনিবার মধ্যরাত পর্যন্ত ওই ভিডিওটি প্রথম আলোর ফেসবুক পেজে ৯ লাখ ২ হাজার মানুষ দেখেছেন। প্রায় ৪ হাজার শেয়ার, ১ হাজার ৩০০ মন্তব্য এবং ৩৮ হাজার মানুষ লাইক কিংবা ভালোবাসা জানিয়েছেন।

এসব তথ্য জেনে তিনি ঈষৎ জড়ানো, কিন্তু স্পষ্ট কণ্ঠেই বললেন: ‘অনেক ভালো হয়েছে।’

এরপর তাঁকে জানালাম: আপনার স্বপ্নের অ্যান্টিবডি টেস্ট কিটের ফলাফল আসন্ন। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপাচার্য ডা. কনক কান্তি বড়ুয়াকে ফোন দিয়েছিলাম। তিনি বলেছেন, তিন-চার দিনের মধ্যে চূড়ান্ত হবে।

‘হোয়াট আ শেম’(কী লজ্জা)’। ‘হোয়াট আ শেম’। দুবার বললেন। এর পরের আরেকটি কথা অস্পষ্ট। সম্ভবত বলেছেন, জাতি বঞ্চিত।

এরপর আর দুটি শব্দ। দুবার বললেন, ‘ভালো থাকো।’ এরপর নীরবতা। কিন্তু লাইন কাটেননি। কিছুক্ষণ পর বিচ্ছিন্ন করে দিই।

এই টেলিফোন আলাপের একটু আগেই তাঁর স্বাস্থ্য বিষয়ে দীর্ঘক্ষণ কথা হলো ডা. মুহিব উল্লাহ খন্দকারের সঙ্গে। তিনি গণস্বাস্থ্য সামাজিক মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ। বলেছিলাম, তাঁর সঙ্গে কি কথা বলতে পারি? তিনি বলেছিলেন, তাঁকে ফোন দেওয়া হয়নি। কারণ, তাঁর ভয়েস রেস্ট দরকার।

অতঃপর অনেকেরই পরিচিত তাঁর ফোন নম্বরটি থেকেই ফোন আসে। বুঝলাম, ডাক্তারের চোখ ফাঁকি দিয়ে কী করে ফোন করায়ত্ত করা যায়, সেটা তার থেকে আর কে ভালো জানবে?

শনিবার রাত ১০টার একটু আগে ডা. মুহিব উল্লাহ খন্দকারের কাছ থেকে একটি খুদে বার্তা পাই। তাতে লেখা: ‘আল্লাহর রহমতে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী করোনা অ্যান্টিজেন নেগেটিভ এবং অ্যান্টিবডি ফর কোভিড–১৯ পজিটিভ। উনি আজ সারাদিন কোনোপ্রকার বাড়তি অক্সিজেন ছাড়া স্যাচুরেশন ৯৫ শতাংশ রাখতে পেরেছেন।’ তাঁকে ফোন দিতেই তিনি জানিয়েছিলেন, ‘ডা. জাফরুল্লাহকে দেখতে শনিবার সন্ধ্যায় গিয়েছিলাম। তখন তিনি তাঁর করোনা নেগেটিভ হওয়ার বিষয়টি আপনাকে জানাতে বললেন।’

জাফরুল্লাহ চৌধুরী নিজের প্রতিষ্ঠিত গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাঁর বিষয়ে শনিবার দিনে তাঁর স্ত্রী শিরিন হক বলেছিলেন, ‘ধীরে ধীরে ওর উন্নতি হচ্ছে। তবে কথা বেশি বলতে পারে না, খুব ক্ষীণ আওয়াজ। একটু একটু কথা এখন বলতে শুরু করেছে। সবাইকে নাকি চিরকুট দিচ্ছে, ডাক্তারদেরও চিরকুট দেয়।’

তিনি যে একটু কথা বলেন, তার প্রমাণ তো পেলামই। ফোনও যে করতে পারেন, তারও প্রমাণ মিলল। আরও প্রমাণ মিলল, জীবন–মৃত্যুর সন্ধিক্ষণেও কত অকপট হতে পারেন ৭৯ বছর বয়সী একজন মুক্তিযোদ্ধা জাফরুল্লাহ চৌধুরী।