ঢাকা , সোমবার, ০৫ মে ২০২৫, ২১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
৩ এপ্রিল ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি বাংলাদেশ সাবমেরিন কেব্‌ল কোম্পানির সব ধরনের ইন্টারনেটের দাম কমছে ১০ শতাংশ। রমজানে মাধ্যমিক স্কুল খোলা থাকবে ১৫ দিন, প্রাথমিক স্কুল ১০ দিন খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে টেকনাফ সীমান্তের হোয়াইক্যং এলাকা দিয়ে আজ অস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে মিয়ানমারের সেনা সাদ সাহেব রুজু করার পর দেওবন্দের মাসআলা খতম হয়ে গেছে : মাওলানা আরশাদ মাদানী চলছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিনের বয়ান পুলিশ সদস্যসহ বিশ্ব ইজতেমায় ৭ জনের মৃত্যু বর্তমান সরকারের সঙ্গে সব দেশ কাজ করতে চায়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়পুরহাটে স্কুলছাত্র হত্যায় ১১ জনের মৃত্যুদণ্ড

সংক্রমণের কেন্দ্র মহানগর

  • নিউজ ডেস্ক
  • প্রকাশিত : ০২:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ জুন ২০২০
  • ৮০৫ পঠিত

৪ থেকে ৭ দিনেও মিলছে না করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট। এমনই চিত্র বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার। ল্যাব বন্ধ থাকায় মাঝে টানা ৭২ ঘণ্টা বন্ধ ছিল নমুনা পরীক্ষা। ভোলায় নমুনা সংগ্রহ বন্ধ ছিল ৩ দিন। ফলে করোনা সংক্রমণের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে বরিশাল নগরী। বিভাগের ৬ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ৯৪৪ জন হলেও বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এলাকাতেই কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ৪৮৯ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘বরিশাল নগরীতে যে হারে সংক্রমণ বাড়ছে তা সত্যিই আশঙ্কাজনক। জরুরি ব্যবস্থা নেয়া না হলে পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাবে না।’

বরিশালে প্রথম করোনা শনাক্ত হয় ১২ এপ্রিল। এরপর ১০ মে পর্যন্ত ২৮ দিনে ৬ জেলায় করোনা রোগীর সংখ্যা ছিল ১৫৬ জন, মৃত্যু ছিল ৬। ১০ মে দোকান মার্কেট খুলে দেয়ার পর স্রোতের মতো বাইরে বেরিয়ে আসে মানুষ। ফলে রোগী বাড়তে থাকে হু-হু করে। ঈদেও ঢাকা থেকে মানুষ দলে দলে এলাকায় আসতে থাকে। ৩১ মে থেকে লঞ্চ-বাস চলাচল শুরু হলে সংক্রমণের বিস্ফোরণ ঘটতে থাকে।

৬ জুন পর্যন্ত মাত্র ২৭ দিনে বরিশালের ৬ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা গিয়ে ঠেকেছে ৯৪৪ জনে, মৃত্যু ২০। বরিশালের সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেন জানান, ‘১০ মের আগে নগরীতে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল দিনে ২ জন, বর্তমানে দিনে আক্রান্তের সংখ্যা ৩০-৩৫ জন। সর্বশেষ শুক্রবার বরিশাল জেলায় আক্রান্ত ৪৯ জনের মধ্যে ৪১ জনই বরিশাল নগরীর। নগরীর প্রায় প্রতি এলাকাতেই করোনা রোগী রয়েছে।’ বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, ‘ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা ছাড়াও বরিশাল নগরীকে বিভাগের প্রবেশদ্বারও বলা হয়। ফলে এখানে ব্যাপক হারে সামাজিক সংক্রমণ ঘটছে।’ লকডাউনের নতুন নির্দেশনা সম্পর্কে জানতে চাইলে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার বলেন, ‘শনাক্ত এবং মৃত্যুর রিপোর্ট প্রতিদিনই ঢাকা যাচ্ছে। নির্দেশনা তারাই দেবেন। তবে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া না হলে ক’দিন পর কোনো কিছুই সামাল দেয়া যাবে না।’

এখন আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে বিলম্বে রিপোর্ট পাওয়া নিয়ে। নমুনা দেয়ার পর রিপোর্ট পেতে ৫-৭ দিন এমনকি ৮ দিনও লেগে যাচ্ছে। ফলে বেশি বেশি সংক্রমিত হচ্ছে। ভোলা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাড. শংকর কুমার গাঙ্গুলী বলেছেন, ৩০ মে আমি নমুনা দিই, ৫ জুন জানতে পারি আমি করোনায় আক্রান্ত। বর্তমানে ওই আইনজীবীর বাড়ি লকডাউন, তবে পরিবারের বাকি ১০ সদস্যের নমুনা নেয়া হলেও সোমবার পর্যন্ত রিপোর্ট মেলেনি। জানতে চাইলে ভোলার সিভিল সার্জন ডা. রতন কুমার ঢালী বলেন, ‘বরিশালে পিসিআর ল্যাবে সমস্যা থাকায় মাঝে ৩ দিন নমুনা সংগ্রহ বন্ধ ছিল। ফলে জট তৈরি হয়েছে এবং তাছাড়া মাঝে বরিশালের ল্যাবও একদিন বন্ধ ছিল। সোমবার থেকে ফের নমুনা সংগ্রহ শুরু হয়েছে।’ বরগুনা জেলার সিভিল সার্জন ডা. হুমায়ুন কবির শাহিন বলেন, ‘ঢাকায় নমুনা পাঠালে করোনা শনাক্তের রিপোর্ট পেতে আমাদের ৭-৮ দিন পর্যন্ত লেগে যায়।

তবে বরিশালের ল্যাবে সময় খানিকটা কম লাগে।’ পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলমও প্রায় একই কথা বলেছেন। রিপোর্ট পেতে দেরি হওয়ার কারণে সংক্রমণের ভয়াবহতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ‘বর্তমানে খুব দ্রুত ছড়াচ্ছে। রিপোর্ট পেতে ৬-৭ দিন সময় লাগলে ভয়াবহতা ঠেকানো যাবে না।’ বরিশাল শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ডা. অসীত ভূষণ বলেন, ‘শুরুর দিকে দৈনিক ৯৪টি নমুনা পরীক্ষা হতো। এখন ২৮২টি হচ্ছে। জেলা-উপজেলা থেকে সোয়াব যেদিন আসে সেদিনই পরীক্ষা সম্পন্ন করে আমরা ঢাকায় পাঠিয়ে দিই। ঢাকা থেকে সমন্বয় করে ফলাফল আসতে ১-২ দিন সময় লাগে। এখানে তো আমাদের কিছু করার নেই।’ মাঝে একদিন পিসিআর ল্যাব বন্ধ থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ল্যাব জীবাণুমুক্ত করার প্রয়োজনে রোববার সেটি বন্ধ রাখা হয়।’

Tag :
জনপ্রিয়

৩ এপ্রিল ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি

সংক্রমণের কেন্দ্র মহানগর

প্রকাশিত : ০২:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ জুন ২০২০

৪ থেকে ৭ দিনেও মিলছে না করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট। এমনই চিত্র বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার। ল্যাব বন্ধ থাকায় মাঝে টানা ৭২ ঘণ্টা বন্ধ ছিল নমুনা পরীক্ষা। ভোলায় নমুনা সংগ্রহ বন্ধ ছিল ৩ দিন। ফলে করোনা সংক্রমণের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে বরিশাল নগরী। বিভাগের ৬ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ৯৪৪ জন হলেও বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এলাকাতেই কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ৪৮৯ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘বরিশাল নগরীতে যে হারে সংক্রমণ বাড়ছে তা সত্যিই আশঙ্কাজনক। জরুরি ব্যবস্থা নেয়া না হলে পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাবে না।’

বরিশালে প্রথম করোনা শনাক্ত হয় ১২ এপ্রিল। এরপর ১০ মে পর্যন্ত ২৮ দিনে ৬ জেলায় করোনা রোগীর সংখ্যা ছিল ১৫৬ জন, মৃত্যু ছিল ৬। ১০ মে দোকান মার্কেট খুলে দেয়ার পর স্রোতের মতো বাইরে বেরিয়ে আসে মানুষ। ফলে রোগী বাড়তে থাকে হু-হু করে। ঈদেও ঢাকা থেকে মানুষ দলে দলে এলাকায় আসতে থাকে। ৩১ মে থেকে লঞ্চ-বাস চলাচল শুরু হলে সংক্রমণের বিস্ফোরণ ঘটতে থাকে।

৬ জুন পর্যন্ত মাত্র ২৭ দিনে বরিশালের ৬ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা গিয়ে ঠেকেছে ৯৪৪ জনে, মৃত্যু ২০। বরিশালের সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেন জানান, ‘১০ মের আগে নগরীতে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল দিনে ২ জন, বর্তমানে দিনে আক্রান্তের সংখ্যা ৩০-৩৫ জন। সর্বশেষ শুক্রবার বরিশাল জেলায় আক্রান্ত ৪৯ জনের মধ্যে ৪১ জনই বরিশাল নগরীর। নগরীর প্রায় প্রতি এলাকাতেই করোনা রোগী রয়েছে।’ বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, ‘ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা ছাড়াও বরিশাল নগরীকে বিভাগের প্রবেশদ্বারও বলা হয়। ফলে এখানে ব্যাপক হারে সামাজিক সংক্রমণ ঘটছে।’ লকডাউনের নতুন নির্দেশনা সম্পর্কে জানতে চাইলে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার বলেন, ‘শনাক্ত এবং মৃত্যুর রিপোর্ট প্রতিদিনই ঢাকা যাচ্ছে। নির্দেশনা তারাই দেবেন। তবে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া না হলে ক’দিন পর কোনো কিছুই সামাল দেয়া যাবে না।’

এখন আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে বিলম্বে রিপোর্ট পাওয়া নিয়ে। নমুনা দেয়ার পর রিপোর্ট পেতে ৫-৭ দিন এমনকি ৮ দিনও লেগে যাচ্ছে। ফলে বেশি বেশি সংক্রমিত হচ্ছে। ভোলা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাড. শংকর কুমার গাঙ্গুলী বলেছেন, ৩০ মে আমি নমুনা দিই, ৫ জুন জানতে পারি আমি করোনায় আক্রান্ত। বর্তমানে ওই আইনজীবীর বাড়ি লকডাউন, তবে পরিবারের বাকি ১০ সদস্যের নমুনা নেয়া হলেও সোমবার পর্যন্ত রিপোর্ট মেলেনি। জানতে চাইলে ভোলার সিভিল সার্জন ডা. রতন কুমার ঢালী বলেন, ‘বরিশালে পিসিআর ল্যাবে সমস্যা থাকায় মাঝে ৩ দিন নমুনা সংগ্রহ বন্ধ ছিল। ফলে জট তৈরি হয়েছে এবং তাছাড়া মাঝে বরিশালের ল্যাবও একদিন বন্ধ ছিল। সোমবার থেকে ফের নমুনা সংগ্রহ শুরু হয়েছে।’ বরগুনা জেলার সিভিল সার্জন ডা. হুমায়ুন কবির শাহিন বলেন, ‘ঢাকায় নমুনা পাঠালে করোনা শনাক্তের রিপোর্ট পেতে আমাদের ৭-৮ দিন পর্যন্ত লেগে যায়।

তবে বরিশালের ল্যাবে সময় খানিকটা কম লাগে।’ পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলমও প্রায় একই কথা বলেছেন। রিপোর্ট পেতে দেরি হওয়ার কারণে সংক্রমণের ভয়াবহতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ‘বর্তমানে খুব দ্রুত ছড়াচ্ছে। রিপোর্ট পেতে ৬-৭ দিন সময় লাগলে ভয়াবহতা ঠেকানো যাবে না।’ বরিশাল শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ডা. অসীত ভূষণ বলেন, ‘শুরুর দিকে দৈনিক ৯৪টি নমুনা পরীক্ষা হতো। এখন ২৮২টি হচ্ছে। জেলা-উপজেলা থেকে সোয়াব যেদিন আসে সেদিনই পরীক্ষা সম্পন্ন করে আমরা ঢাকায় পাঠিয়ে দিই। ঢাকা থেকে সমন্বয় করে ফলাফল আসতে ১-২ দিন সময় লাগে। এখানে তো আমাদের কিছু করার নেই।’ মাঝে একদিন পিসিআর ল্যাব বন্ধ থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ল্যাব জীবাণুমুক্ত করার প্রয়োজনে রোববার সেটি বন্ধ রাখা হয়।’