ডিলার লাইসেন্স পাওয়ার ছয় মাসের মধ্যে বৈধভাবে প্রথমবার সোনা আমদানি করেছে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড। দুবাই থেকে গত সপ্তাহে ১১ হাজার গ্রাম (৯৪৩ ভরি) পাকা সোনা বা ২৪ ক্যারেট সোনার বার এনেছে প্রতিষ্ঠানটি। লাইসেন্স পাওয়া আরেকটি প্রতিষ্ঠানও সোনা আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খুলেছে। আরও ১৪টি প্রতিষ্ঠান আমদানির অনুমতির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করেছে। কিন্তু আমদানি শুরু হলেও দেশের বাজারে সোনার দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই।
করোনাভাইরাসের কারণে অধিকাংশ আন্তর্জাতিক রুটে যাত্রীবাহী ফ্লাইট চলাচল বন্ধ থাকায় ব্যাগেজ রুলসের আওতায় সোনার বার আসা কমে যায়। এ অজুহাতে সর্বশেষ গত ২৩ জুন ভালো মানের ২২ ক্যারেট সোনার ভরিতে দাম এক লাফে ৫ হাজার ৮২৫ টাকা বৃদ্ধি করে জুয়েলার্স সমিতি। তাতে প্রতি ভরি সোনার দাম গিয়ে দাঁড়ায় ৬৯ হাজার ৭৬৭ টাকা, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। করোনার সঙ্গে সোনার উচ্চ মূল্য যোগ হওয়ায় জুয়েলারি ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে।
দুবাই থেকে সোনার বার আমদানিতে ভরিপ্রতি খরচ পড়েছে ৬১ হাজার টাকার কাছাকাছি—এমন তথ্য দিয়ে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, আমদানিমূল্যের সঙ্গে কমপক্ষে ৫ শতাংশ মুনাফা যোগ করতে হবে। তাতে তাঁতীবাজারের বুলিয়ন মার্কেটে যে দামে সোনার বার বিক্রি হচ্ছে, তার কাছাকাছি চলে যায়। বুলিয়ন মার্কেটে সোনার বারের ভরি ৬৩ হাজার টাকা।
আমদানির কারণে দাম কমবে কি না, জানতে চাইলে দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, ‘মাত্র তো শুরু হলো। দুই-তিন টন সোনা আমদানি হয়ে গেলেই বিশ্ববাজারের সঙ্গে আমাদের দামের ব্যবধান কমবে। কারণ, তখন বুলিয়নদের কাছ থেকে বাজারের নিয়ন্ত্রণ আমদানিকারকদের কাছে চলে আসবে। তবে ব্যাগেজ রুলসের আওতায় বিদেশ থেকে সোনা আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে। কারণ, বৈধভাবে সোনা আমদানিতে প্রক্রিয়াগত কারণে ব্যাগেজ রুলসের চেয়ে ভরিতে ১ হাজার টাকা বেশি লাগছে।’
দেশে সোনার ব্যবসায় স্বচ্ছতা আনতে দীর্ঘদিন ধরে একটি নীতিমালা করার দাবি ছিল। ২০১৭ সালে বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনায় প্রধান আসামি আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে শাফাত আহমেদ গ্রেপ্তার হন। পরে দিলদার আহমেদের অবৈধ সম্পদ খুঁজতে আপন জুয়েলার্সের পাঁচটি বিক্রয়কেন্দ্রে অভিযান চালায় শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ। এ সময় বৈধ কাগজপত্র দেখাতে না পারায় সাড়ে ১৩ মণ সোনার অলংকার ও ৪২৭ গ্রাম ডায়মন্ড জব্দ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের জিম্মায় দেন গোয়েন্দারা। এরপরই স্বর্ণ নীতিমালার বিষয়টি জোরেশোরে আলোচনায় আসে। পরের বছরের নভেম্বরে নীতিমালা চূড়ান্ত করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
নীতিমালা হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক গত বছরের নভেম্বরে একটি ব্যাংকসহ ১৮টি প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেয়। পরে আরও একটি প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স পায়।
জানতে চাইলে জুয়েলার্স সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান আমিনুল ইসলাম গতকাল বলেন, আমদানিকারকেরা কতটুকু মুনাফা করবেন, তার ওপর নির্ভর করছে দাম কমবে কি কমবে না। এক্সচেঞ্জ হাউসের মাধ্যমে কেনাবেচা হলে দাম অবশ্যই কমবে। আমদানির কারণে যেটি হবে, সোনার ব্যবসাটা বৈধ হবে।
জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের বাজারে বছরে ২০ থেকে ৪০ মেট্রিক টন সোনার চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ১০ শতাংশ পুরোনা সোনার অলংকার গলিয়ে সংগ্রহ করা হয়। চাহিদার বাকি ৯০ শতাংশ সোনা এত দিন ব্যাগেজ রুলসের মাধ্যমে আসত।
জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সোনা বেচাকেনার সঙ্গে মুদ্রা ব্যবস্থাপনার সরাসরি যোগাযোগ আছে। তাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে আমদানি ও খুচরা পর্যায়ের সোনা বেচাকেনা সতর্কভাবে তদারক করতে হবে। বিশ্ববাজারের সঙ্গে দেশীয় বাজারের সোনার দামও পর্যালোচনা করতে হবে মন্ত্রণালয়কে।