ঢাকা , রবিবার, ০৪ মে ২০২৫, ২১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
৩ এপ্রিল ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি বাংলাদেশ সাবমেরিন কেব্‌ল কোম্পানির সব ধরনের ইন্টারনেটের দাম কমছে ১০ শতাংশ। রমজানে মাধ্যমিক স্কুল খোলা থাকবে ১৫ দিন, প্রাথমিক স্কুল ১০ দিন খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে টেকনাফ সীমান্তের হোয়াইক্যং এলাকা দিয়ে আজ অস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে মিয়ানমারের সেনা সাদ সাহেব রুজু করার পর দেওবন্দের মাসআলা খতম হয়ে গেছে : মাওলানা আরশাদ মাদানী চলছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিনের বয়ান পুলিশ সদস্যসহ বিশ্ব ইজতেমায় ৭ জনের মৃত্যু বর্তমান সরকারের সঙ্গে সব দেশ কাজ করতে চায়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়পুরহাটে স্কুলছাত্র হত্যায় ১১ জনের মৃত্যুদণ্ড

বেড খালি নেই, ফিরিয়ে দিল একাধিক হাসপাতাল, ১১ ঘণ্টা চিকিৎসাহীন থেকে মৃত কিশোর

  • নিউজ ডেস্ক
  • প্রকাশিত : ০৮:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জুলাই ২০২০
  • ৭০০ পঠিত

শুক্রবার ভোর পাঁচটা থেকে বিকেল চারটে— প্রায় ১১ ঘণ্টা ধরে ১৭ বছরের এক কিশোরকে নিয়ে ঘুরে বেড়াল পরিবার। প্রবল শ্বাসকষ্ট, তার মধ্যেই এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতাল। অভিযোগ, কোনও হাসপাতালই ভর্তি নিতে রাজি হয়নি ওই কিশোরকে। শেষ পর্যন্ত মরিয়া হয়ে কিশোরের মা আত্মহত্যার হুমকি দিলে ভর্তি নেয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ। কিন্তু তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মারা যায় ওই কিশোর। পরিবারের আপসোস, একটু আগে চিকিৎসা পেলে হয়তো বেঁচে যেত শুভ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায়

শুভ্রজিৎ উত্তর ২৪ পরগনার ইছাপুরের নেতাজিপল্লির বাসিন্দা ছিল। উত্তর ব্যারাকপুর পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে তার বাড়ি। এ বছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল শুভ্রজিৎ। গত বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই শ্বাসকষ্ট শুরু হয় ওই কিশোরের। রাতে বাড়তে থাকে শ্বাসকষ্ট। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, এমনিতেই শুভ্রজিতের ওজন স্বাভাবিকের থেকে অনেকটাই বেশি ছিল। তার সঙ্গে ছিল সুগার। তাই শুক্রবার সকাল হতেই দেরি না করে ছেলেকে নিয়ে কামারহাটি ইএসআই হাসপাতালে চলে আসেন শুভ্রজিতের বাবা। সেখানে কিশোরের সুগার পরীক্ষা করতে গিয়ে ধরা পড়ে, রক্তে শর্করার পরিমাণ খুবই বেশি। ইএসআই হাসপাতালে আইসিইউ নেই বলে তাকে রেফার করে দেওয়া হয় অন্য হাসপাতালে।

শনিবার ওই কিশোরের দাদা শুভ্রদীপ বলেন, ‘‘কামারহাটিরই একটি নার্সিংহোমে আমরা ভাইকে নিয়ে যাই। শ্বাসকষ্ট শুনেই ওরা ভিতরে ঢুকতে দিল না। আমাদের বলা হল, কোভিড টেস্ট না করলে ভর্তি করা যাবে না।” শুভ্রদীপের দাবি, সেখানে বেশ খানিক সময় কাটানোর পর পরিবারের জোরাজুরিতে কিশোরের র‌্যাপিড টেস্ট করার জন্য রক্ত নেওয়া হয়। সেই রক্তপরীক্ষায় করোনা ভাইরাসের অস্তিত্বর ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এর পর ওই বেসরকারি নার্সিংহোম থেকে কিশোরকে সাগর দত্ত হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয়। শুভ্রদীপের কথায়, ‘‘সাগর দত্ত হাসপাতালে দীর্ঘ ক্ষণ ভাইকে বাইরে রেখে দেওয়া হয়। কোনও চিকিৎসা হয় না। শেষে বলা হয়, বেড ফাঁকা নেই।”

ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য ভবনের সঙ্গে যোগাযোগ করে শুভ্রজিতের পরিবার। কিশোরের দাদার অভিযোগ, ‘‘স্বাস্থ্য ভবন জানিয়ে দেয় যে, তাদের কাছে কিশোরের করোনা পজিটিভ হওয়ার কোনও রিপোর্ট নেই। সেই রিপোর্ট না এলে তারা সাহায্য করতে পারবে না।”

কিন্তু এ দিন ভোরে ফোন করে জানানো হয়, শুক্রবার রাত পৌনে ১০টা নাগাদ মারা গিয়েছে শুভ্রজিৎ। শনিবার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে কিশোরের পরিবারের একটাই আক্ষেপ, যদি সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ভর্তি নিয়ে হয়রানি না হত, আর একটু আগে যদি চিকিৎসা শুরু করা যেত, তা হলে হয়তো বেঁচে যেত ছেলেটা।

কোভিড সন্দেহভাজন হওয়ায় শনিবার কিশোরের দেহ তুলে দেওয়া হয়নি পরিবারের হাতে। এ বিষয়ে মেডিক্যাল কলেজের কোনও কর্তা সরকারি ভাবে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে তাঁরা স্বীকার করেন, আরও আগে চিকিৎসা শুরু করা গেলে প্রাণে বেঁচে যেতে পারত ওই কিশোর। খাতায় কলমে এখনও কোভিড পজিটিভ হিসাবে ওই কিশোরের নাম নেই স্বাস্থ্য দফতরের কাছে। গোটা ঘটনা শুনে এক স্বাস্থ্যকর্তা শুধু বলেন, ‘‘আরও সমন্বয় প্রয়োজন।’’

কিন্তু সেই সমন্বয় তৈরি করার দায়িত্ব কার? রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী, শুক্রবার রাজ্যের ১০ হাজার ৮৩০টি কোভিড বেডের মধ্যে ২৭ শতাংশ ভর্তি। অর্থাৎ বাকি ৭৩ শতাংশ ফাঁকা। তাও বেডের অভাবে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে কেন ঘুরে বেরাতে হল কিশোরের পরিবারকে? জবাব মেলেনি।
Tag :
জনপ্রিয়

৩ এপ্রিল ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি

বেড খালি নেই, ফিরিয়ে দিল একাধিক হাসপাতাল, ১১ ঘণ্টা চিকিৎসাহীন থেকে মৃত কিশোর

প্রকাশিত : ০৮:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জুলাই ২০২০

শুক্রবার ভোর পাঁচটা থেকে বিকেল চারটে— প্রায় ১১ ঘণ্টা ধরে ১৭ বছরের এক কিশোরকে নিয়ে ঘুরে বেড়াল পরিবার। প্রবল শ্বাসকষ্ট, তার মধ্যেই এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতাল। অভিযোগ, কোনও হাসপাতালই ভর্তি নিতে রাজি হয়নি ওই কিশোরকে। শেষ পর্যন্ত মরিয়া হয়ে কিশোরের মা আত্মহত্যার হুমকি দিলে ভর্তি নেয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ। কিন্তু তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মারা যায় ওই কিশোর। পরিবারের আপসোস, একটু আগে চিকিৎসা পেলে হয়তো বেঁচে যেত শুভ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায়

শুভ্রজিৎ উত্তর ২৪ পরগনার ইছাপুরের নেতাজিপল্লির বাসিন্দা ছিল। উত্তর ব্যারাকপুর পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে তার বাড়ি। এ বছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল শুভ্রজিৎ। গত বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই শ্বাসকষ্ট শুরু হয় ওই কিশোরের। রাতে বাড়তে থাকে শ্বাসকষ্ট। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, এমনিতেই শুভ্রজিতের ওজন স্বাভাবিকের থেকে অনেকটাই বেশি ছিল। তার সঙ্গে ছিল সুগার। তাই শুক্রবার সকাল হতেই দেরি না করে ছেলেকে নিয়ে কামারহাটি ইএসআই হাসপাতালে চলে আসেন শুভ্রজিতের বাবা। সেখানে কিশোরের সুগার পরীক্ষা করতে গিয়ে ধরা পড়ে, রক্তে শর্করার পরিমাণ খুবই বেশি। ইএসআই হাসপাতালে আইসিইউ নেই বলে তাকে রেফার করে দেওয়া হয় অন্য হাসপাতালে।

শনিবার ওই কিশোরের দাদা শুভ্রদীপ বলেন, ‘‘কামারহাটিরই একটি নার্সিংহোমে আমরা ভাইকে নিয়ে যাই। শ্বাসকষ্ট শুনেই ওরা ভিতরে ঢুকতে দিল না। আমাদের বলা হল, কোভিড টেস্ট না করলে ভর্তি করা যাবে না।” শুভ্রদীপের দাবি, সেখানে বেশ খানিক সময় কাটানোর পর পরিবারের জোরাজুরিতে কিশোরের র‌্যাপিড টেস্ট করার জন্য রক্ত নেওয়া হয়। সেই রক্তপরীক্ষায় করোনা ভাইরাসের অস্তিত্বর ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এর পর ওই বেসরকারি নার্সিংহোম থেকে কিশোরকে সাগর দত্ত হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয়। শুভ্রদীপের কথায়, ‘‘সাগর দত্ত হাসপাতালে দীর্ঘ ক্ষণ ভাইকে বাইরে রেখে দেওয়া হয়। কোনও চিকিৎসা হয় না। শেষে বলা হয়, বেড ফাঁকা নেই।”

ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য ভবনের সঙ্গে যোগাযোগ করে শুভ্রজিতের পরিবার। কিশোরের দাদার অভিযোগ, ‘‘স্বাস্থ্য ভবন জানিয়ে দেয় যে, তাদের কাছে কিশোরের করোনা পজিটিভ হওয়ার কোনও রিপোর্ট নেই। সেই রিপোর্ট না এলে তারা সাহায্য করতে পারবে না।”

কিন্তু এ দিন ভোরে ফোন করে জানানো হয়, শুক্রবার রাত পৌনে ১০টা নাগাদ মারা গিয়েছে শুভ্রজিৎ। শনিবার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে কিশোরের পরিবারের একটাই আক্ষেপ, যদি সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ভর্তি নিয়ে হয়রানি না হত, আর একটু আগে যদি চিকিৎসা শুরু করা যেত, তা হলে হয়তো বেঁচে যেত ছেলেটা।

কোভিড সন্দেহভাজন হওয়ায় শনিবার কিশোরের দেহ তুলে দেওয়া হয়নি পরিবারের হাতে। এ বিষয়ে মেডিক্যাল কলেজের কোনও কর্তা সরকারি ভাবে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে তাঁরা স্বীকার করেন, আরও আগে চিকিৎসা শুরু করা গেলে প্রাণে বেঁচে যেতে পারত ওই কিশোর। খাতায় কলমে এখনও কোভিড পজিটিভ হিসাবে ওই কিশোরের নাম নেই স্বাস্থ্য দফতরের কাছে। গোটা ঘটনা শুনে এক স্বাস্থ্যকর্তা শুধু বলেন, ‘‘আরও সমন্বয় প্রয়োজন।’’

কিন্তু সেই সমন্বয় তৈরি করার দায়িত্ব কার? রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী, শুক্রবার রাজ্যের ১০ হাজার ৮৩০টি কোভিড বেডের মধ্যে ২৭ শতাংশ ভর্তি। অর্থাৎ বাকি ৭৩ শতাংশ ফাঁকা। তাও বেডের অভাবে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে কেন ঘুরে বেরাতে হল কিশোরের পরিবারকে? জবাব মেলেনি।