ঢাকা , রবিবার, ০৪ মে ২০২৫, ২১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
৩ এপ্রিল ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি বাংলাদেশ সাবমেরিন কেব্‌ল কোম্পানির সব ধরনের ইন্টারনেটের দাম কমছে ১০ শতাংশ। রমজানে মাধ্যমিক স্কুল খোলা থাকবে ১৫ দিন, প্রাথমিক স্কুল ১০ দিন খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে টেকনাফ সীমান্তের হোয়াইক্যং এলাকা দিয়ে আজ অস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে মিয়ানমারের সেনা সাদ সাহেব রুজু করার পর দেওবন্দের মাসআলা খতম হয়ে গেছে : মাওলানা আরশাদ মাদানী চলছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিনের বয়ান পুলিশ সদস্যসহ বিশ্ব ইজতেমায় ৭ জনের মৃত্যু বর্তমান সরকারের সঙ্গে সব দেশ কাজ করতে চায়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়পুরহাটে স্কুলছাত্র হত্যায় ১১ জনের মৃত্যুদণ্ড

করোনা ভাইরাস কি শক্তি হারাচ্ছে? জল্পনায় জল ঢাললেন চিকিৎসকরা

  • নিউজ ডেস্ক
  • প্রকাশিত : ০৮:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জুলাই ২০২০
  • ৭৭৯ পঠিত

নভেল  করোনা ভাইরাসের দাপট বাড়ছে। নিত্যদিনই বেড়ে চলেছে আক্রান্তের সংখ্যা। ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধ করতে নতুন করে লকডাউন শুরু হলেও চিকিৎসকদের মধ্যে কিছুটা আশা জেগেছে। অতি সম্প্রতি এক রাজনীতিবিদ অভিনেত্রী এক সপ্তাহের মধ্যেই কোভিড-১৯ মুক্ত হয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরলেন।

নভেল করোনা ভাইরাস ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে? নাকি ভারতীয়দের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সঙ্গে যুঝতে গিয়ে পিছু হঠছে? এই প্রসঙ্গে হার্ট সার্জন কুণাল সরকার জানালেন, ”কয়েকটা ঘটনা দেখে এই বিষয়টি জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। তবে মহামারির ইতিহাস পড়লে জানা যায় যে কয়েক মাস দাপিয়ে মানুষকে আক্রমণ করার পর জীবাণুদের মারাত্মক ক্ষমতার সঙ্গে আমাদের শরীর কিছুটা আপস করে নেওয়ায় মৃত্যুর হার কমে।” কুণাল বাবু বললেন, ”মহামারি সৃষ্টিকারী ভাইরাসের ক্ষমতাকে খাটো করে দেখলে নিয়ম-কানুন ডকে তুলে দিতে হবে।”

ফুসফুস বিশেষজ্ঞ অশোক সেনগুপ্তর মত, ‘’এখনই কোভিড-১৯ ভাইরাসের ক্ষমতা যাচাই করার সময় আসেনি। আরও সপ্তাহ খানেক গেলে ব্যাপারটা সম্পর্কে কিছুটা আঁচ পাওয়া যেতে পারে। অশোক বাবুর মত, মার্চ-এপ্রিল মাসে কোভিড ১৯ নামের এই সদ্য চেনা ভাইরাসকে নিয়ে আমরা চিকিৎসকরা যে রকম দিশাহারা ছিলাম, এখন সেই পরিস্থিতি আর নেই। ভাইরাসটির  চরিত্রের মারাত্মক দিক ফুসফুসকে বিকল করে দেওয়া, তাই সংক্রমণের শুরুর দিকে অতিমারি ছড়িয়ে পড়ার সময় ভেন্টিলেটরে ভরসা করা ছাড়া আমাদের হাতে বিশেষ কোনও অস্ত্র ছিল না।‘’

এখনই ভাইরাসের ক্ষমতা কমে গেছে বললে সাধারণ মানুষ সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি শিকেয় তুলে দিলে সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে অরিন্দম বিশ্বাস এও জানান, ‘‘যাঁদের কো-মর্বিডিটি অর্থাৎ উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবিটিস, ক্রনিক কিডনির অসুখ বা হার্টের অসুখ আছে এবং বয়স ৬০ বছরের বেশি, তাঁদের এই ভাইরাসের সংক্রমণ হলে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে এবং প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে।’’

অতিমারির জন্য দায়ী কোভিড-১৯ ভাইরাসের মারাত্মক ক্ষমতা কিছুটা কমেছে কি? এই প্রসঙ্গে কুণাল সরকার জানান, বিগত এক হাজার বছরে যত অতিমারি বা  মহামারি হয়েছে, প্রথমদিকে তার ভয়ানক দাপট বজায় থাকে, মানুষও মারা পড়ে। কিন্তু ধীরে ধীরে ভাইরাস কিছুটা কমজোর হয়ে পড়ে, আবার মানুষের শরীর ভাইরাসের বিরুদ্ধে কিছুটা প্রতিরোধ তৈরি করে। যদিও এখনও এবিষয়ে নিশ্চিত ভাবে কিছুই বলার সময় আসেনি তবে হয়তো বা নভেল করোনা ভাইরাস সেই পর্যায়ে পৌঁছতে চলেছে।

 

কুণাল বাবু বলেন, ‘‘কোভিড ১৯ অতিমারির শুরুতে চিকিৎসকরা কী করবেন বুঝে ওঠার আগেই হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছিলেন ও মারা পড়ছিলেন। সেই ব্যাপারটা অনেকাংশে কমেছে। ভাইরাসকে দমিয়ে রাখার কিছু অস্ত্রশস্ত্র আমাদের হাতে এসেছে। একই সঙ্গে ভাইরাসও বদলে ফেলছে নিজেদের চরিত্র।’’

অরিন্দম বিশ্বাস জানালেন, ‘‘করোনা সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা আগের থেকে অনেক বেড়েছে। ফলে অল্প স্বল্প উপসর্গ দেখা গেলেই মানুষ চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন। এছাড়া মাস্ক ব্যবহারের কারণে ভাইরাস লোড কম থাকায় বেশ কিছু মানুষের উপসর্গ আর পাঁচটা ভাইরাল ফিভারের থেকে বিশেষ বাড়ছে না।’’ তবে প্রত্যেক চিকিৎসকই এই বিষয়ে একমত যে ভাইরাসের ক্ষমতা কমেছে বলে মাস্ক না পরে যত্রতত্র যাওয়া বা ভিড় বাড়ানো একেবারেই অনুচিত। সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার ও নিয়ম মেনে মাস্ক পরার মত সাধারণ স্বাস্থ্য বিধি মেনে চললে নভেল করোনা ভাইরাস ছাড়াও অন্যান্য সংক্রমণও প্রতিরোধ করা সহজ হবে। সুতরাং ভাইরাসকে খাটো করে না দেখে লড়াই বজায় রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।

Tag :
জনপ্রিয়

৩ এপ্রিল ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি

করোনা ভাইরাস কি শক্তি হারাচ্ছে? জল্পনায় জল ঢাললেন চিকিৎসকরা

প্রকাশিত : ০৮:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জুলাই ২০২০

নভেল  করোনা ভাইরাসের দাপট বাড়ছে। নিত্যদিনই বেড়ে চলেছে আক্রান্তের সংখ্যা। ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধ করতে নতুন করে লকডাউন শুরু হলেও চিকিৎসকদের মধ্যে কিছুটা আশা জেগেছে। অতি সম্প্রতি এক রাজনীতিবিদ অভিনেত্রী এক সপ্তাহের মধ্যেই কোভিড-১৯ মুক্ত হয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরলেন।

নভেল করোনা ভাইরাস ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে? নাকি ভারতীয়দের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সঙ্গে যুঝতে গিয়ে পিছু হঠছে? এই প্রসঙ্গে হার্ট সার্জন কুণাল সরকার জানালেন, ”কয়েকটা ঘটনা দেখে এই বিষয়টি জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। তবে মহামারির ইতিহাস পড়লে জানা যায় যে কয়েক মাস দাপিয়ে মানুষকে আক্রমণ করার পর জীবাণুদের মারাত্মক ক্ষমতার সঙ্গে আমাদের শরীর কিছুটা আপস করে নেওয়ায় মৃত্যুর হার কমে।” কুণাল বাবু বললেন, ”মহামারি সৃষ্টিকারী ভাইরাসের ক্ষমতাকে খাটো করে দেখলে নিয়ম-কানুন ডকে তুলে দিতে হবে।”

ফুসফুস বিশেষজ্ঞ অশোক সেনগুপ্তর মত, ‘’এখনই কোভিড-১৯ ভাইরাসের ক্ষমতা যাচাই করার সময় আসেনি। আরও সপ্তাহ খানেক গেলে ব্যাপারটা সম্পর্কে কিছুটা আঁচ পাওয়া যেতে পারে। অশোক বাবুর মত, মার্চ-এপ্রিল মাসে কোভিড ১৯ নামের এই সদ্য চেনা ভাইরাসকে নিয়ে আমরা চিকিৎসকরা যে রকম দিশাহারা ছিলাম, এখন সেই পরিস্থিতি আর নেই। ভাইরাসটির  চরিত্রের মারাত্মক দিক ফুসফুসকে বিকল করে দেওয়া, তাই সংক্রমণের শুরুর দিকে অতিমারি ছড়িয়ে পড়ার সময় ভেন্টিলেটরে ভরসা করা ছাড়া আমাদের হাতে বিশেষ কোনও অস্ত্র ছিল না।‘’

এখনই ভাইরাসের ক্ষমতা কমে গেছে বললে সাধারণ মানুষ সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি শিকেয় তুলে দিলে সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে অরিন্দম বিশ্বাস এও জানান, ‘‘যাঁদের কো-মর্বিডিটি অর্থাৎ উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবিটিস, ক্রনিক কিডনির অসুখ বা হার্টের অসুখ আছে এবং বয়স ৬০ বছরের বেশি, তাঁদের এই ভাইরাসের সংক্রমণ হলে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে এবং প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে।’’

অতিমারির জন্য দায়ী কোভিড-১৯ ভাইরাসের মারাত্মক ক্ষমতা কিছুটা কমেছে কি? এই প্রসঙ্গে কুণাল সরকার জানান, বিগত এক হাজার বছরে যত অতিমারি বা  মহামারি হয়েছে, প্রথমদিকে তার ভয়ানক দাপট বজায় থাকে, মানুষও মারা পড়ে। কিন্তু ধীরে ধীরে ভাইরাস কিছুটা কমজোর হয়ে পড়ে, আবার মানুষের শরীর ভাইরাসের বিরুদ্ধে কিছুটা প্রতিরোধ তৈরি করে। যদিও এখনও এবিষয়ে নিশ্চিত ভাবে কিছুই বলার সময় আসেনি তবে হয়তো বা নভেল করোনা ভাইরাস সেই পর্যায়ে পৌঁছতে চলেছে।

 

কুণাল বাবু বলেন, ‘‘কোভিড ১৯ অতিমারির শুরুতে চিকিৎসকরা কী করবেন বুঝে ওঠার আগেই হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছিলেন ও মারা পড়ছিলেন। সেই ব্যাপারটা অনেকাংশে কমেছে। ভাইরাসকে দমিয়ে রাখার কিছু অস্ত্রশস্ত্র আমাদের হাতে এসেছে। একই সঙ্গে ভাইরাসও বদলে ফেলছে নিজেদের চরিত্র।’’

অরিন্দম বিশ্বাস জানালেন, ‘‘করোনা সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা আগের থেকে অনেক বেড়েছে। ফলে অল্প স্বল্প উপসর্গ দেখা গেলেই মানুষ চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন। এছাড়া মাস্ক ব্যবহারের কারণে ভাইরাস লোড কম থাকায় বেশ কিছু মানুষের উপসর্গ আর পাঁচটা ভাইরাল ফিভারের থেকে বিশেষ বাড়ছে না।’’ তবে প্রত্যেক চিকিৎসকই এই বিষয়ে একমত যে ভাইরাসের ক্ষমতা কমেছে বলে মাস্ক না পরে যত্রতত্র যাওয়া বা ভিড় বাড়ানো একেবারেই অনুচিত। সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার ও নিয়ম মেনে মাস্ক পরার মত সাধারণ স্বাস্থ্য বিধি মেনে চললে নভেল করোনা ভাইরাস ছাড়াও অন্যান্য সংক্রমণও প্রতিরোধ করা সহজ হবে। সুতরাং ভাইরাসকে খাটো করে না দেখে লড়াই বজায় রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।