ঢাকা , মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
৩ এপ্রিল ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি বাংলাদেশ সাবমেরিন কেব্‌ল কোম্পানির সব ধরনের ইন্টারনেটের দাম কমছে ১০ শতাংশ। রমজানে মাধ্যমিক স্কুল খোলা থাকবে ১৫ দিন, প্রাথমিক স্কুল ১০ দিন খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে টেকনাফ সীমান্তের হোয়াইক্যং এলাকা দিয়ে আজ অস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে মিয়ানমারের সেনা সাদ সাহেব রুজু করার পর দেওবন্দের মাসআলা খতম হয়ে গেছে : মাওলানা আরশাদ মাদানী চলছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিনের বয়ান পুলিশ সদস্যসহ বিশ্ব ইজতেমায় ৭ জনের মৃত্যু বর্তমান সরকারের সঙ্গে সব দেশ কাজ করতে চায়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়পুরহাটে স্কুলছাত্র হত্যায় ১১ জনের মৃত্যুদণ্ড

গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিলেন রাজা, ৩৫ বছর পর দোষী সাব্যস্ত পুলিশ

  • নিউজ ডেস্ক
  • প্রকাশিত : ০৬:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জুলাই ২০২০
  • ৬৯০ পঠিত

অপরাধ জগতে ওঠাবসা ছিল না কখনওই। বরং ‘রাজপাট’ সামলাতেই ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু রাজনীতির ময়দানে পা রাখতে গিয়েই বিপদ ডেকে এনেছিলেন তিনি। আর তাতেই পুলিশের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যেতে হয়েছিল তাঁকে। ৩৫ বছর আগের রাজস্থানের ভরতপুরের রাজা মান সিংহের সেই হত্যাকাণ্ডে, এত দিনে দোষী সাব্যস্ত হলেন ১১ জন পুলিশকর্মী। বুধবার তাঁদের সাজা ঘোষণা করবে আদালত।

১৯৮৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। তার জেরে মরুরাজ্যের রাজনীতি উথালপাথাল হয়ে যায়। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে রাজ্যে তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের মুখ্যমন্ত্রী শিবচরণ মাথুরকে ইস্তফা পর্যন্ত দিতে হয়। তার পর বিগত ৩৫ বছর ধরে মামলাটির শুনানি চলছিল। শেষমেশ মঙ্গলবার উত্তরপ্রদেশের মথুরা আদালত এই মামলায় রায় শোনাল।

শোনা যায়, সেইসময় রাজনীতিতে পা রাখতে যাচ্ছিলেন রাজা মান সিংহ। ’৮৫-র বিধানসভা নির্বাচনে ভরতপুরের ডিগ নির্বাচনী কেন্দ্র থেকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ানোর কথা ছিল তাঁর। এ নিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনাও হয় তাঁর। তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী দেবেন না বলে কংগ্রেস তাঁকে আশ্বস্ত করে। তা সত্ত্বেও অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসার ব্রিজেন্দ্র সিংহকে ওই কেন্দ্রের প্রার্থী করেন মুখ্যমন্ত্রী শিবচরণ।

২০ ফেব্রুয়ারি ব্রিজেন্দ্রর হয়ে ভরতপুরে প্রচারে যান শিবচরণ। তাতেই মেজাজ হারান রাজা মান সিংহ। জিপ চালিয়ে সভাস্থলে হাজির হন তিনি। যে হেলিকপ্টারে চেপে শিবচরণের ফিরে যাওয়ার কথা ছিল, জিপ নিয়ে সেটিতে দু’বার সজোরে ধাক্কা মারেন তিনি। তাতে হেলিকপ্টারটি মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

কপ্টারে ধাক্কা মেরে ফিরে যান তিনি। কিন্তু তত ক্ষণে এই ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে ভরতপুরের পরিস্থিতি। তাঁকে গ্রেফতার করতে সক্রিয় হয় পুলিশ। তার মধ্যেই ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে সহযোগীদের নিয়ে জিপে চেপে ফের বাইরে বেরোন তিনি। তিনি থানায় আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছিলেন বলে দাবি রাজা মান সিংহের পরিবারের।

সেইসময় ভরতপুরে একটি বাজারের মধ্যে রাজা মান সিংহের লোকজনের সঙ্গে তৎকালীন ডেপুটি সুপার কান সিংহ ভাটির নেতৃত্বাধীন পুলিশ বাহিনীর সংঘর্ষ বাধে। দু’পক্ষই একে অপরকে লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তে শুরু করে। তাতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় রাজা মান সিংহ এবং তাঁর সহযোগীদের।

প্রকাশ্য দিনের আলোয় পুলিশের গুলিতে রাজার মৃত্যুতে তেতে ওঠে ভরতপুর-সহ গোটা রাজস্থান। তাঁর আঁচ পৌঁছয় দিল্লিতেও। তার জেরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে রাজা মান সিংহের মৃত্যু দু’দিন পরই মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে হয় শিবচরণ মাথুরকে। ২৮ ফেব্রুয়ারি সিবিআইয়ের হাতে গোটা ঘটনার তদন্তভার গিয়ে পড়ে। ১৪ জন পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়।

শুরুতে রাজস্থানের আদালতেই এই মামলার শুনানি চলছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে পরে তা মথুরায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে এই মামলায় ১৭০০-র বেশি শুনানি হয়েছে। তার পর এ দিন কান সিংহ-সহ এই ঘটনায় যুক্ত ১১ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। প্রমাণের অভাবে মুক্তি দেওয়া হয় তিন জনকে। আগামী কাল দোষীদের সাজা শোনানো হবে।

উল্লেখযোগ্য ভাবে, রাজা মান সিংহ হত্যাকাণ্ডের রায় এমন সময় এল, যখন রাজস্থানে কংগ্রেসের সরকার টিকিয়ে রাখা নিয়ে টানাপড়েন চলছে। মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে নিজের অনুগামী ১৮ জন বিধায়ককে নিয়ে রাজ্য থেকে সরে গিয়েছেন সচিন পাইলট। এই বিদ্রোহী বিধায়কদের মধ্যে রয়েছেন বিশ্বেন্দ্র সিংহও, যিনি সম্পর্কে রাজা মান সিংহের ভাইপো। দলবিরোধী কাজে লিপ্ত থাকার অভিযোগে তাঁকে ইতিমধ্যে সাসপেন্ডও করেছে কংগ্রেস।

Tag :
জনপ্রিয়

৩ এপ্রিল ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি

গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিলেন রাজা, ৩৫ বছর পর দোষী সাব্যস্ত পুলিশ

প্রকাশিত : ০৬:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জুলাই ২০২০

অপরাধ জগতে ওঠাবসা ছিল না কখনওই। বরং ‘রাজপাট’ সামলাতেই ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু রাজনীতির ময়দানে পা রাখতে গিয়েই বিপদ ডেকে এনেছিলেন তিনি। আর তাতেই পুলিশের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যেতে হয়েছিল তাঁকে। ৩৫ বছর আগের রাজস্থানের ভরতপুরের রাজা মান সিংহের সেই হত্যাকাণ্ডে, এত দিনে দোষী সাব্যস্ত হলেন ১১ জন পুলিশকর্মী। বুধবার তাঁদের সাজা ঘোষণা করবে আদালত।

১৯৮৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। তার জেরে মরুরাজ্যের রাজনীতি উথালপাথাল হয়ে যায়। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে রাজ্যে তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের মুখ্যমন্ত্রী শিবচরণ মাথুরকে ইস্তফা পর্যন্ত দিতে হয়। তার পর বিগত ৩৫ বছর ধরে মামলাটির শুনানি চলছিল। শেষমেশ মঙ্গলবার উত্তরপ্রদেশের মথুরা আদালত এই মামলায় রায় শোনাল।

শোনা যায়, সেইসময় রাজনীতিতে পা রাখতে যাচ্ছিলেন রাজা মান সিংহ। ’৮৫-র বিধানসভা নির্বাচনে ভরতপুরের ডিগ নির্বাচনী কেন্দ্র থেকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ানোর কথা ছিল তাঁর। এ নিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনাও হয় তাঁর। তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী দেবেন না বলে কংগ্রেস তাঁকে আশ্বস্ত করে। তা সত্ত্বেও অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসার ব্রিজেন্দ্র সিংহকে ওই কেন্দ্রের প্রার্থী করেন মুখ্যমন্ত্রী শিবচরণ।

২০ ফেব্রুয়ারি ব্রিজেন্দ্রর হয়ে ভরতপুরে প্রচারে যান শিবচরণ। তাতেই মেজাজ হারান রাজা মান সিংহ। জিপ চালিয়ে সভাস্থলে হাজির হন তিনি। যে হেলিকপ্টারে চেপে শিবচরণের ফিরে যাওয়ার কথা ছিল, জিপ নিয়ে সেটিতে দু’বার সজোরে ধাক্কা মারেন তিনি। তাতে হেলিকপ্টারটি মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

কপ্টারে ধাক্কা মেরে ফিরে যান তিনি। কিন্তু তত ক্ষণে এই ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে ভরতপুরের পরিস্থিতি। তাঁকে গ্রেফতার করতে সক্রিয় হয় পুলিশ। তার মধ্যেই ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে সহযোগীদের নিয়ে জিপে চেপে ফের বাইরে বেরোন তিনি। তিনি থানায় আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছিলেন বলে দাবি রাজা মান সিংহের পরিবারের।

সেইসময় ভরতপুরে একটি বাজারের মধ্যে রাজা মান সিংহের লোকজনের সঙ্গে তৎকালীন ডেপুটি সুপার কান সিংহ ভাটির নেতৃত্বাধীন পুলিশ বাহিনীর সংঘর্ষ বাধে। দু’পক্ষই একে অপরকে লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তে শুরু করে। তাতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় রাজা মান সিংহ এবং তাঁর সহযোগীদের।

প্রকাশ্য দিনের আলোয় পুলিশের গুলিতে রাজার মৃত্যুতে তেতে ওঠে ভরতপুর-সহ গোটা রাজস্থান। তাঁর আঁচ পৌঁছয় দিল্লিতেও। তার জেরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে রাজা মান সিংহের মৃত্যু দু’দিন পরই মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে হয় শিবচরণ মাথুরকে। ২৮ ফেব্রুয়ারি সিবিআইয়ের হাতে গোটা ঘটনার তদন্তভার গিয়ে পড়ে। ১৪ জন পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়।

শুরুতে রাজস্থানের আদালতেই এই মামলার শুনানি চলছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে পরে তা মথুরায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে এই মামলায় ১৭০০-র বেশি শুনানি হয়েছে। তার পর এ দিন কান সিংহ-সহ এই ঘটনায় যুক্ত ১১ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। প্রমাণের অভাবে মুক্তি দেওয়া হয় তিন জনকে। আগামী কাল দোষীদের সাজা শোনানো হবে।

উল্লেখযোগ্য ভাবে, রাজা মান সিংহ হত্যাকাণ্ডের রায় এমন সময় এল, যখন রাজস্থানে কংগ্রেসের সরকার টিকিয়ে রাখা নিয়ে টানাপড়েন চলছে। মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে নিজের অনুগামী ১৮ জন বিধায়ককে নিয়ে রাজ্য থেকে সরে গিয়েছেন সচিন পাইলট। এই বিদ্রোহী বিধায়কদের মধ্যে রয়েছেন বিশ্বেন্দ্র সিংহও, যিনি সম্পর্কে রাজা মান সিংহের ভাইপো। দলবিরোধী কাজে লিপ্ত থাকার অভিযোগে তাঁকে ইতিমধ্যে সাসপেন্ডও করেছে কংগ্রেস।