আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহার যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাট কর্তৃপক্ষ প্রস্তুতি নিলেও দুর্ভোগের শঙ্কা রয়েই গেছে। বিশেষ করে ফেরিসংকট ও বন্যা যাত্রী ও যানবাহন নির্বিঘ্নে পারাপারের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় হতে পারে। এ ছাড়া জুয়াড়ি চক্রের তৎপরতা, জাল টিকিটে গাড়ি পার করার চেষ্টা, কুলি-মজুরদের বেপরোয়া আচরণ এবং ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্যও বাধা হতে পারে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া কার্যালয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজধানীর সঙ্গে সড়ক যোগাযোগের অন্যতম নৌপথ দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া। প্রতিদিন এ ঘাট দিয়ে কয়েক হাজার যানবাহন পারাপার হয়। ঈদের আগে ও পরে উভয় ঘাটে ঘরমুখী মানুষ ও যানবাহনের চাপ পড়ে। এ সুযোগে কিছু অসাধু চক্র তৎপর হয়ে ওঠে।
গত সোমবার জাল টিকিটে ফেরিতে দূরপাল্লার বাস পার করার চেষ্টাকালে বাসের তত্ত্বাবধায়কসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁদের বিরুদ্ধে টিকিট জালিয়াতির অভিযোগে মামলা হয়।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক আবু আবদুল্লাহ বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ১৩টি ফেরি চালু রয়েছে। এর মধ্যে ৬টি রো রো (বড়), ১টি মাঝারি ও ৬টি ইউটিলিটি (ছোট)। আরেকটি বড় ফেরি হামিদুর রহমান দুই মাস ধরে যান্ত্রিক ত্রুটিতে বিকল হয়ে পাটুরিয়ার ভাসমান কারখানা মধুমতীতে রয়েছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় ডকইয়ার্ড থেকে কেরামত আলী নামের বড় ফেরি বহরে যুক্ত হয়েছে। আজ শনিবার আরেকটি এবং ২৭ বা ২৮ জুলাই আরেকটি বড় ফেরি আসার কথা রয়েছে। তিনটি বড় ফেরি বহরে যুক্ত হলে অনেকটা চাপমুক্ত থাকা যাবে।
ব্যবস্থাপক আবু আবদুল্লাহ আরও বলেন, ‘এই পথে চলাচলরত অধিকাংশ ফেরি পুরোনো। দুর্বল ইঞ্জিনসম্পন্ন ফেরি সহজে স্রোতের বিপরীতে চলতে পারে না। এমন পরিস্থিতিতে বড় ফেরির বিকল্প নেই। বর্তমানে ৭টির সঙ্গে ৩টি বড় ফেরি যুক্ত হয়ে ১০টি হবে। ৯টি বড় ফেরি নিয়মিত চললে তেমন সমস্যা হবে না। আমরা সেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি। শঙ্কার বিষয় হলো বন্যায় ঘাট তলিয়ে গেলে বড় বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) রাজবাড়ীর নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম শেখ বলেন, গোয়ালন্দ পয়েন্টে বিপৎসীমার পরিমাপ হচ্ছে ৮ দশমিক ৬৫ মিটার। ১৯৯৮ সালের বন্যায় গোয়ালন্দ পয়েন্টে পানির স্তর হয়েছিল ১০ দশমিক ২১ সেন্টিমিটার। এ বছর বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র থেকে আভাস দিয়েছে ১৯৯৮ সালের বন্যার চেয়েও বেশি পানি হতে পারে। বিশেষ করে মধ্য আগস্টে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমনটি হলে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দৌলতদিয়া ঘাট এলাকা স্বাভাবিকভাবে তলিয়ে যাবে। তখন যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। তবে এমনটি নাও হতে পারে।
ঘাট রক্ষায় পাউবোর প্রস্তুতি কেমন, তা জানতে চাইলে নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম শেখ বলেন, বন্যা হলে কী করার আছে? ওই সময় মানুষের মধ্যে ত্রাণ সহযোগিতা দেওয়া ছাড়া কিছু করার থাকবে না। তবে বন্যায় তলিয়ে গেলে ভাঙন থাকে না। ফেরিঘাট বা বেড়িবাঁধ ভাঙার আশঙ্কা নেই। সেপ্টেম্বর মাসের দিকে পানি দ্রুত নেমে যাওয়ার পর নদীতে¯স্রোত থাকলে ভাঙন বাড়তে পারে। সে জন্য পাউবোর সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।