ঢাকা , রবিবার, ০৪ মে ২০২৫, ২১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
৩ এপ্রিল ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি বাংলাদেশ সাবমেরিন কেব্‌ল কোম্পানির সব ধরনের ইন্টারনেটের দাম কমছে ১০ শতাংশ। রমজানে মাধ্যমিক স্কুল খোলা থাকবে ১৫ দিন, প্রাথমিক স্কুল ১০ দিন খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে টেকনাফ সীমান্তের হোয়াইক্যং এলাকা দিয়ে আজ অস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে মিয়ানমারের সেনা সাদ সাহেব রুজু করার পর দেওবন্দের মাসআলা খতম হয়ে গেছে : মাওলানা আরশাদ মাদানী চলছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিনের বয়ান পুলিশ সদস্যসহ বিশ্ব ইজতেমায় ৭ জনের মৃত্যু বর্তমান সরকারের সঙ্গে সব দেশ কাজ করতে চায়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়পুরহাটে স্কুলছাত্র হত্যায় ১১ জনের মৃত্যুদণ্ড

কোয়ারেন্টিনের চিরকুট

  • নিউজ ডেস্ক
  • প্রকাশিত : ০৮:২৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ জুন ২০২০
  • ৭৪৫ পঠিত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি দুই মাসও হয়নি। ক্যাম্পাসের প্রাচুর্য কেবল দেখতে শুরু করেছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের নতুন বন্ধুদের নিয়ে দিনগুলো ভালোই কাটছিল। হঠাৎই শুরু হলো করোনাভাইরাসের প্রকোপ।

যত দিন যাচ্ছে, ছুটি যেন আরও দীর্ঘ হচ্ছে। শুরুতে বেশ অস্থির লাগছিল। পত্রিকা পড়তে পারছিলাম না, খবর দেখতে পারছিলাম না। খবর দেখলেই মনের মধ্যে নানা আশঙ্কা ভর করে। মনে হয়, আগের মতো রঙিন দিনগুলো কি আর ফিরে পাব? টিভি সিরিজ দেখে, বই পড়ে জেগে জেগে স্বপ্ন দেখার অভ্যাস আমার অনেক আগে থেকেই।

একদিন সন্ধ্যায় অভ্যাসবশত একটা অ্যানিমেশন ছবি দেখছিলাম, নাম ক্লাউস।ছবিটার কাহিনি ছিল এ রকম—বাচ্চারা ক্লাউসকে চিঠি লিখলেই ক্লাউস রাতে তাদের বাসায় গিয়ে খেলনা দিয়ে আসত। চিঠিকে কেন্দ্র করে এগোনো ছবির গল্পটা ছিল অসাধারণ। এই ছবি দেখে হঠাৎ মাথায় একটা বুদ্ধি এল। কোয়ারেন্টিনের দিনগুলোতে সবার সঙ্গে যোগাযোগ তো প্রায় বন্ধই হয়ে গেছে। তাই একটা বাক্স নিলাম। নাম দিলাম কোয়ারেন্টিন মনের বাক্স। প্রতিদিন অনেকের কথা মনে পড়ে, আর অনেক কথাও বলতে ইচ্ছা করে। ছোট ছোট চিরকুটে তা লিখে বাক্সে রাখতে শুরু করলাম।

এই চিরকুট নিয়ে বাসায় অনেক কাহিনি হয়ে গেল। একটা মজার ঘটনা বলি। একদিন মার সঙ্গে বিছানার বালিশ নিয়ে ঝগড়া হলো। অনেক অভিমান হচ্ছিল, তাই একটা চিরকুটে মাকে অনেক কথা লিখলাম। চিরকুটটা মনের বাক্সে রাখা হয়নি, অজান্তেই পড়ে ছিল টেবিলে। হঠাৎ ঘরে ঢুকে দেখি মা চিরকুট পড়ে হাসছেন। তারপর বারান্দায় বসে মা-মেয়ে মিলে একটা বড় আড্ডা দিলাম। মা বললেন, এখন থেকে তাকেও চিরকুট লিখতে। যান্ত্রিক জীবনের ব্যস্ততায় মার সঙ্গে কথা হতো ঠিকই, কিন্তু মনের যোগাযোগ আর হয়ে উঠছিল না। চিরকুট সেই সমস্যার সমাধান করে দিল।

চিরকুটগুলো লিখতে লিখতে আমি নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করলাম। আমি যে এত কথা লিখতে পারি, আগে জানতাম না। চিরকুট দিয়ে শুরু হলেও, এখন আমি ছোট গল্প, কবিতা, গানের কথা ইত্যাদি লিখতে শুরু করেছি। দিনগুলো মন্দ কাটছে না। হয়তো এই চিরকুটগুলো তার প্রাপকের কাছে পৌঁছাবেও না। তারপরও কোয়ারেন্টিনের দিনগুলোতে এই চিরকুটই আমার ছোট্ট যোগাযোগের মাধ্যম।

Tag :
জনপ্রিয়

৩ এপ্রিল ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি

কোয়ারেন্টিনের চিরকুট

প্রকাশিত : ০৮:২৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ জুন ২০২০

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি দুই মাসও হয়নি। ক্যাম্পাসের প্রাচুর্য কেবল দেখতে শুরু করেছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের নতুন বন্ধুদের নিয়ে দিনগুলো ভালোই কাটছিল। হঠাৎই শুরু হলো করোনাভাইরাসের প্রকোপ।

যত দিন যাচ্ছে, ছুটি যেন আরও দীর্ঘ হচ্ছে। শুরুতে বেশ অস্থির লাগছিল। পত্রিকা পড়তে পারছিলাম না, খবর দেখতে পারছিলাম না। খবর দেখলেই মনের মধ্যে নানা আশঙ্কা ভর করে। মনে হয়, আগের মতো রঙিন দিনগুলো কি আর ফিরে পাব? টিভি সিরিজ দেখে, বই পড়ে জেগে জেগে স্বপ্ন দেখার অভ্যাস আমার অনেক আগে থেকেই।

একদিন সন্ধ্যায় অভ্যাসবশত একটা অ্যানিমেশন ছবি দেখছিলাম, নাম ক্লাউস।ছবিটার কাহিনি ছিল এ রকম—বাচ্চারা ক্লাউসকে চিঠি লিখলেই ক্লাউস রাতে তাদের বাসায় গিয়ে খেলনা দিয়ে আসত। চিঠিকে কেন্দ্র করে এগোনো ছবির গল্পটা ছিল অসাধারণ। এই ছবি দেখে হঠাৎ মাথায় একটা বুদ্ধি এল। কোয়ারেন্টিনের দিনগুলোতে সবার সঙ্গে যোগাযোগ তো প্রায় বন্ধই হয়ে গেছে। তাই একটা বাক্স নিলাম। নাম দিলাম কোয়ারেন্টিন মনের বাক্স। প্রতিদিন অনেকের কথা মনে পড়ে, আর অনেক কথাও বলতে ইচ্ছা করে। ছোট ছোট চিরকুটে তা লিখে বাক্সে রাখতে শুরু করলাম।

এই চিরকুট নিয়ে বাসায় অনেক কাহিনি হয়ে গেল। একটা মজার ঘটনা বলি। একদিন মার সঙ্গে বিছানার বালিশ নিয়ে ঝগড়া হলো। অনেক অভিমান হচ্ছিল, তাই একটা চিরকুটে মাকে অনেক কথা লিখলাম। চিরকুটটা মনের বাক্সে রাখা হয়নি, অজান্তেই পড়ে ছিল টেবিলে। হঠাৎ ঘরে ঢুকে দেখি মা চিরকুট পড়ে হাসছেন। তারপর বারান্দায় বসে মা-মেয়ে মিলে একটা বড় আড্ডা দিলাম। মা বললেন, এখন থেকে তাকেও চিরকুট লিখতে। যান্ত্রিক জীবনের ব্যস্ততায় মার সঙ্গে কথা হতো ঠিকই, কিন্তু মনের যোগাযোগ আর হয়ে উঠছিল না। চিরকুট সেই সমস্যার সমাধান করে দিল।

চিরকুটগুলো লিখতে লিখতে আমি নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করলাম। আমি যে এত কথা লিখতে পারি, আগে জানতাম না। চিরকুট দিয়ে শুরু হলেও, এখন আমি ছোট গল্প, কবিতা, গানের কথা ইত্যাদি লিখতে শুরু করেছি। দিনগুলো মন্দ কাটছে না। হয়তো এই চিরকুটগুলো তার প্রাপকের কাছে পৌঁছাবেও না। তারপরও কোয়ারেন্টিনের দিনগুলোতে এই চিরকুটই আমার ছোট্ট যোগাযোগের মাধ্যম।