ঢাকা , শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ১৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
৩ এপ্রিল ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি বাংলাদেশ সাবমেরিন কেব্‌ল কোম্পানির সব ধরনের ইন্টারনেটের দাম কমছে ১০ শতাংশ। রমজানে মাধ্যমিক স্কুল খোলা থাকবে ১৫ দিন, প্রাথমিক স্কুল ১০ দিন খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে টেকনাফ সীমান্তের হোয়াইক্যং এলাকা দিয়ে আজ অস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে মিয়ানমারের সেনা সাদ সাহেব রুজু করার পর দেওবন্দের মাসআলা খতম হয়ে গেছে : মাওলানা আরশাদ মাদানী চলছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিনের বয়ান পুলিশ সদস্যসহ বিশ্ব ইজতেমায় ৭ জনের মৃত্যু বর্তমান সরকারের সঙ্গে সব দেশ কাজ করতে চায়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়পুরহাটে স্কুলছাত্র হত্যায় ১১ জনের মৃত্যুদণ্ড

ঢাকার ৪০ লাখ মানুষ বন্যাঝুঁকিতে

  • নিউজ ডেস্ক
  • প্রকাশিত : ০৪:৩৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ জুলাই ২০২০
  • ৭০২ পঠিত

ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর পানি এখনো দুকূল ছাপিয়ে যায়নি। এখনো বিপৎসীমার কিছুটা নিচেই আছে। কিন্তু তার আগেই ঢাকার পূর্বাংশের বেশ কয়েকটি নিচু এলাকায় বন্যার পানি চলে এসেছে। নন্দীগ্রাম, ত্রিমোহনী, বেরাইদ, সাঁতারকুলসহ ঢাকার এসব এলাকায় ধীরে ধীরে পানি বাড়ছে। সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে বুড়িগঙ্গা, বালু, তুরাগ, ধলেশ্বরী ও শীতলক্ষ্যার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করবে।

এ সপ্তাহের মধ্যে ঢাকাসহ সারা দেশে বৃষ্টি বাড়তে পারে। ফলে একদিকে শহরের ভেতরে বৃষ্টির পানি জমবে, অন্যদিকে নদীর পানি বন্যা হয়ে শহরে ঢুকবে। এই দুই মিলে আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে ঢাকার পূর্বাংশের ১৬টি ইউনিয়নসহ প্রায় ৪০ লাখ মানুষের বসতি এলাকা বন্যায় ডুবতে পারে। মাসের বাকি সময়ে এই পানি নগরবাসীকে ভোগাতে পারে।

বন্যা ও জলাবদ্ধতার এই আশঙ্কার মধ্যে আরও ভয়ের কারণ হচ্ছে, ঢাকা ওয়াসা ও ঢাকা সিটি করপোরেশন বন্যা মোকাবিলায় এখনো তেমন প্রস্তুতি নেয়নি। জমে থাকা পানি বসতি এলাকা থেকে সরানো, নিম্নবিত্ত মানুষদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা থেকে শুরু করে এ পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে তাদের জন্য খাবার ও অন্যান্য সামগ্রী প্রস্তুত করার কোনো কাজই এখনো সরকারি কোনো সংস্থা শুরু করেনি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে কাউন্সিলরদের সঙ্গে বসব। তাঁদের আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করাসহ বন্যা মোকাবিলার উদ্যোগগুলো নিয়ে কথা বলব।’ তবে বন্যার পানি ঢুকে পড়লে তা বের করার মতো ব্যবস্থা এ বছর করা যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঢাকার নিচু এলাকাগুলোর উন্নয়নে চার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। সেটি বাস্তবায়িত হলে পূর্বাঞ্চলে আর জলাবদ্ধতা থাকবে না।

ঢাকা ওয়াসা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের মোট পাঁচটি পাম্পস্টেশন আছে, যেগুলো দিয়ে ঢাকা থেকে জলাবদ্ধতার পানি বের করে দেওয়া হয়। আর বন্যা এলে সেগুলোর স্লুইসগেটগুলো বন্ধ করে পানি আসা ঠেকানো হয়। ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি চলে যাওয়ায় ওই স্টেশনগুলো চালু করা হয়েছে। কিন্তু ওই স্টেশনগুলো ঢাকার পশ্চিমাংশের পুরোটা ও পূর্বাংশের রামপুরা পর্যন্ত বন্যামুক্ত করতে পারে।

ঢাকার বাড্ডার পাশে বেরাইদ এলাকার অধিবাসী আসকর আলীর সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়। তিনি জানান, তাঁর বাসার সামনে পানি চলে এসেছে। আরও পানি বাড়লে বাড়ির ভেতরেঢুকে পড়বে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আখতার মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকার পূর্বাংশে নিচু এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে ৪০ লাখ মানুষের বসতি গড়ে উঠেছে। কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সেখানে আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠেছে। ফলে বন্যার পানি ঢুকে পড়লে তা নামার মতো কোনো খাল বা নালা সেখানে উন্মুক্ত অবস্থায় নেই। সামনের দিনগুলোতে এ ধরনের বন্যা আরও বাড়তে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে সেখানকার জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে। তা সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে হয়তো ভবিষ্যতে জলাবদ্ধতা কমে আসবে।

ঢাকাসহ দেশের ১৮ জেলায় এখন বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। সরকারের দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের হিসাবে প্রায় ২৫ লাখ লাখ মানুষ এখন পানিবন্দী। প্রায় ৪০ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে, বাকিরা সড়ক ও বাঁধের ওপর অবস্থান করছে। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, সুনামগঞ্জ ও বগুড়া জেলা।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, মৌসুমি বায়ু আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ভারতের চেরাপুঞ্জি, বাংলাদেশের সিলেট ও সুনামগঞ্জ এবং উত্তরাঞ্চলে গতকাল সারা দিন প্রায় ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও আগের দুই-তিন দিনের তুলনায় বেশি বৃষ্টি বেড়েছে। আগামী দুই-তিন দিনে বৃষ্টি ধারাবাহিকভাবে বাড়তে পারে।

Tag :
জনপ্রিয়

৩ এপ্রিল ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি

ঢাকার ৪০ লাখ মানুষ বন্যাঝুঁকিতে

প্রকাশিত : ০৪:৩৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ জুলাই ২০২০

ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর পানি এখনো দুকূল ছাপিয়ে যায়নি। এখনো বিপৎসীমার কিছুটা নিচেই আছে। কিন্তু তার আগেই ঢাকার পূর্বাংশের বেশ কয়েকটি নিচু এলাকায় বন্যার পানি চলে এসেছে। নন্দীগ্রাম, ত্রিমোহনী, বেরাইদ, সাঁতারকুলসহ ঢাকার এসব এলাকায় ধীরে ধীরে পানি বাড়ছে। সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে বুড়িগঙ্গা, বালু, তুরাগ, ধলেশ্বরী ও শীতলক্ষ্যার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করবে।

এ সপ্তাহের মধ্যে ঢাকাসহ সারা দেশে বৃষ্টি বাড়তে পারে। ফলে একদিকে শহরের ভেতরে বৃষ্টির পানি জমবে, অন্যদিকে নদীর পানি বন্যা হয়ে শহরে ঢুকবে। এই দুই মিলে আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে ঢাকার পূর্বাংশের ১৬টি ইউনিয়নসহ প্রায় ৪০ লাখ মানুষের বসতি এলাকা বন্যায় ডুবতে পারে। মাসের বাকি সময়ে এই পানি নগরবাসীকে ভোগাতে পারে।

বন্যা ও জলাবদ্ধতার এই আশঙ্কার মধ্যে আরও ভয়ের কারণ হচ্ছে, ঢাকা ওয়াসা ও ঢাকা সিটি করপোরেশন বন্যা মোকাবিলায় এখনো তেমন প্রস্তুতি নেয়নি। জমে থাকা পানি বসতি এলাকা থেকে সরানো, নিম্নবিত্ত মানুষদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা থেকে শুরু করে এ পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে তাদের জন্য খাবার ও অন্যান্য সামগ্রী প্রস্তুত করার কোনো কাজই এখনো সরকারি কোনো সংস্থা শুরু করেনি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে কাউন্সিলরদের সঙ্গে বসব। তাঁদের আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করাসহ বন্যা মোকাবিলার উদ্যোগগুলো নিয়ে কথা বলব।’ তবে বন্যার পানি ঢুকে পড়লে তা বের করার মতো ব্যবস্থা এ বছর করা যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঢাকার নিচু এলাকাগুলোর উন্নয়নে চার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। সেটি বাস্তবায়িত হলে পূর্বাঞ্চলে আর জলাবদ্ধতা থাকবে না।

ঢাকা ওয়াসা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের মোট পাঁচটি পাম্পস্টেশন আছে, যেগুলো দিয়ে ঢাকা থেকে জলাবদ্ধতার পানি বের করে দেওয়া হয়। আর বন্যা এলে সেগুলোর স্লুইসগেটগুলো বন্ধ করে পানি আসা ঠেকানো হয়। ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি চলে যাওয়ায় ওই স্টেশনগুলো চালু করা হয়েছে। কিন্তু ওই স্টেশনগুলো ঢাকার পশ্চিমাংশের পুরোটা ও পূর্বাংশের রামপুরা পর্যন্ত বন্যামুক্ত করতে পারে।

ঢাকার বাড্ডার পাশে বেরাইদ এলাকার অধিবাসী আসকর আলীর সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়। তিনি জানান, তাঁর বাসার সামনে পানি চলে এসেছে। আরও পানি বাড়লে বাড়ির ভেতরেঢুকে পড়বে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আখতার মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকার পূর্বাংশে নিচু এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে ৪০ লাখ মানুষের বসতি গড়ে উঠেছে। কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সেখানে আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠেছে। ফলে বন্যার পানি ঢুকে পড়লে তা নামার মতো কোনো খাল বা নালা সেখানে উন্মুক্ত অবস্থায় নেই। সামনের দিনগুলোতে এ ধরনের বন্যা আরও বাড়তে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে সেখানকার জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে। তা সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে হয়তো ভবিষ্যতে জলাবদ্ধতা কমে আসবে।

ঢাকাসহ দেশের ১৮ জেলায় এখন বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। সরকারের দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের হিসাবে প্রায় ২৫ লাখ লাখ মানুষ এখন পানিবন্দী। প্রায় ৪০ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে, বাকিরা সড়ক ও বাঁধের ওপর অবস্থান করছে। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, সুনামগঞ্জ ও বগুড়া জেলা।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, মৌসুমি বায়ু আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ভারতের চেরাপুঞ্জি, বাংলাদেশের সিলেট ও সুনামগঞ্জ এবং উত্তরাঞ্চলে গতকাল সারা দিন প্রায় ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও আগের দুই-তিন দিনের তুলনায় বেশি বৃষ্টি বেড়েছে। আগামী দুই-তিন দিনে বৃষ্টি ধারাবাহিকভাবে বাড়তে পারে।