মাস কয়েক আগে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজস্ব ভঙ্গিতে ‘ভবিষ্যদ্বাণী’ করেছিলেন, ‘‘ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এক লাখের আশপাশে করোনার মৃত্যুমিছিল থামবে!’’ আমেরিকায় মৃতের সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়েছে কবেই। পেরিয়েছে দেড় লাখের গণ্ডিও। আজ একদল বিশেষজ্ঞ তাঁদের রিপোর্টে দাবি করলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বেপরোয়া পথ অনুসরণ করলে ডিসেম্বরের মধ্যে অন্তত তিন লক্ষ মানুষ প্রাণ হারাবেন আমেরিকায়!
একটি আন্তর্জাতিক সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী আমেরিকায় এ পর্যন্ত ১,৬২,৮৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ‘ইনস্টিটিউট ফর হেল্থ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন’ (আইএইচএমই)-এর রিপোর্টে জানানো হয়েছে, ‘ডিসেম্বরের মধ্যে আমেরিকায় ২,৯৫,০১১ জনের মারা যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’ আইএইচএমই-র অধিকর্তা ক্রিস্টোফার মুরি বলেন, ‘‘এই মডেল যে সত্যি প্রমাণ হবে, তা নয়। এ ক্ষেত্রে, ভাইরাস সংক্রমণের সঙ্গে মানুষের দৈনন্দিন ব্যবহারের সরাসরি যোগ রয়েছে। আর সংক্রমণের উপরে নির্ভর করছে মৃত্যু।’’ সংস্থার দেওয়া বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, আমেরিকার ৯৫ শতাংশ বাসিন্দা যদি মাস্ক পরেন, মৃতের সংখ্যা কমে ২,২৮,২৭১ হবে। অর্থাৎ কি না, ৬৬ হাজার মানুষের জীবন বেঁচে যাবে।
আজই আমেরিকার ‘সেন্টারস ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’ জানিয়েছে, তাদের অনুমান ২৯ অগস্টের মধ্যে দেশে মৃতের সংখ্যা ১,৮১,০৩১ ছোঁবে। তাদের সাইটে বলা হয়েছে, ‘‘সমস্ত প্রদেশের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা গিয়েছে, এখন প্রতি সপ্তাহে যা মৃত্যুহার, আগামী চার সপ্তাহে তা আরও বাড়তে পারে হাওয়াই এবং পুয়ের্তো রিকোয়। সাপ্তাহিক মৃত্যুহার কমার সম্ভাবনা রয়েছে ফ্লরিডা, মিসিসিপি, নিউ মেক্সিকো, নর্দার্ন মারিয়ানা আইল্যান্ডস, ওহায়ো, টেক্সাস, ভারমন্ট এবং ভার্জিন আইল্যান্ডে।’’
বিশ্বে করোনায় মৃত – ৭,২০,৬৯৭ আক্রান্ত – ১,৯৪,২১,৩৫৬ সুস্থ – ১,২৪,৬০,৮২৮ |
এই অবস্থায় ভোট কী করে হবে? আজ এর জবাবে ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজ়িজ়েস’-এর ডিরেক্টর অ্যান্টনি ফাউচি বলেন, ‘‘আমরা যদি সঠিক পথে চলি আজ এখন থেকেই, নভেম্বরে পরিস্থিতি অনেক ভাল হয়ে যাবে।’’
অন্তত ২ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর পরে ইউরোপে এখন পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে তারা। স্পেনে যাওয়া নিয়ে সতর্কতা জারি করেছে অস্ট্রিয়া। খারাপ অবস্থা স্পেনের। বেলজিয়ামকেও রেড-জ়োন হিসেবে দেখছে ফিনল্যান্ড, ব্রিটেন।
এর মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) আজ জানিয়েছে, অল্পবয়সিরা একেবারেই বিপন্মুক্ত নন। তাদের সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণ— সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ২৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সিরা। কিশোর-তরুণদের মধ্যে সংক্রমণের প্রবণতা ছ’গুণ বেড়ে গিয়েছে। বাচ্চা ও শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও বেড়েছে সাত গুণ। এ কথা জানানোর পাশাপাশি হু আজ এই সতর্কবার্তাও দিয়েছে যে— ভবিষ্যতে ভ্যাকসিন আবিষ্কার হলে, বড় দেশগুলো যদি তা কুক্ষিগত করে রাখে, গরিব দেশুগুলো যদি প্রতিষেধক না-পায়, ভুগতে হবে ধনীদেরও।