কিমাশ্চর্যম! তাঁকে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। তা হলে তিনি বেঁচেই আছেন? সামনে
দেখা যাচ্ছে না! তা হলে তিনি মৃত? ‘দিল বেচারা’ ছবি দেখতে দেখতে তাক লেগে যায় জীবিত আর না-থাকা মানুষের অস্তিত্ব নিয়ে। ছবি দেখা শেষ হলেও ল্যাপটপ স্ক্রিনে আলোর মাঝে ঝলসে ওঠে তাঁর টিকালো নাক, নরম বলিষ্ঠ চোখ, তাকিয়ে আছে দূরের সীমানায়। চোখের আড়াল হয়ে গেলেও এখন বিনোদন বিশ্বে সবচেয়ে থেকে যাওয়া মুখ কখনও মৃত্যুর মধ্যে, কখনও জীবনের মধ্যে।দু’দিকেই তিনি আছেন।
অভিনয়: সুশান্ত সিংহ রাজপুত, সঞ্জনা সাংভি, সেফ আলি খান, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়
সঙ্গীত: এ আর রহমান |
কিন্তু সময়? সে তো এই ছবির মধ্যে দিয়ে বলে যাচ্ছে… সে বলছে, তোমরা আজ দেখতে চাও তো, সুশান্ত প্রেমের কাছে কেমন করে নিজেকে সমর্পণ করে? কেমন করে প্রেমিকাকে কাছে টেনে নিলে তার মৃত্যুর কথা মনে পড়ে! তার নাকের ওপর থেকে মাথা অবধি ফুলে ওঠে শিরা যন্ত্রণায় কাঁপতে থাকে? সে সান্ত্বনা চায় মাথা নত করে… দুমড়ে মুচড়ে ওঠে দর্শকের মন! মন বলতে থাকে, সুশান্ত তুমি কেন চলে গেলে?

আবার আশ্চর্য ঘটনা। এই সাধারণ দর্শকের কেউ হয় না সুশান্ত! অথচ তাকে যত বার ভেঙে পড়তে, জিততে, লড়াই করতে, ক্যানসারে আক্রান্ত নায়িকার জীবনে রং ভরতে দেখা যায়, আমার মতো থাক! সুশান্ত নিজেই নিজেকে উড়িয়ে দিতে, ছড়িয়ে দিতে, গুঁড়িয়ে দিতে জানে। তারা ভরা রাত তাঁর অপেক্ষায়… ছেড়ে যেতে হয়, সুশান্ত জানে।
জন গ্রিনের বেস্ট সেলিং উপন্যাস ‘ফল্ট ইন আওয়ার স্টারস’-এর উপর ভিত্তি করে আগেই তো হলিউডে এই গল্প নিয়ে সিনেমা হয়েছে। জস বুনের ছবিতে অভিনয় করেছিলেন শেইলেন উডলি, এনসেল এলগর্ত। তবে মুকেশ ছাবরার এটাই প্রথম সিনেমা। স্বল্প দৈর্ঘ্যের এই ছবির বুনোট কথা বলে ওঠে। সুশান্তের শেষ সিনেমায় সহ-অভিনেত্রী সঞ্জনা সাংভি। স্বাভাবিক অভিনয়ে তিনি নজর কাড়েন।

স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় আবার চমৎকার অভিনয় করলেন সঞ্জনার মায়ের চরিত্রে। সইফ আলি খান এবং জাভেদ জাফরির উপস্থিতি ছবিতে অল্প সময়ের জন্য হলেও এক ভিন্ন মাত্রা দেয়।
রহমান ফিরে এসেছেন সুশান্তের ছন্দোময় শরীরে। সঞ্জনার সঙ্গে ক্ষণিক জীবনের আবছায়া সুরে। আর ফিরেছেন সুশান্ত সিংহ রাজপুত তাঁর জীবন আর মৃত্যুর সবটা নিয়ে। এ ছবি দেখতে দেখতে এক বারও মনে হয় না তিনি কোথাও অভিনয় করছেন। মনে হয় না তাঁর চরিত্রের নাম ‘ইম্যানুয়েল রাজকুমার বা ম্যানি’। লিখতে গিয়েও তো সুশান্ত নিজেই চরিত্র হয়ে ধরা দেন। কী বা করতে পারতেন তিনি? তারা হয়ে জন্মে তারা খুঁজে বেড়ানো মানুষ! তাঁকে ধরে রাখা যায় না। আজ খুঁজতে খুঁজতে তিনি সাতটি তারার দেশে। যেখানে মৃত্যুর মধ্যে ক্ষোভ নেই। ‘দিল বেচারা’-ও তাই ক্ষোভ নয়, মৃত্যুকে ছাপিয়ে এই অতিমারির কালে মুহূর্তকে খুশির মুঠোয় ভরে দিতে চায়। ঠিক যেমন সুশান্ত, তাঁর দর্শককে ‘বেচারা’ দেখতে মোটেই রাজি নন তিনি, তারা হয়ে আলো দেখান তাঁদের।