ঢাকা , মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
৩ এপ্রিল ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি বাংলাদেশ সাবমেরিন কেব্‌ল কোম্পানির সব ধরনের ইন্টারনেটের দাম কমছে ১০ শতাংশ। রমজানে মাধ্যমিক স্কুল খোলা থাকবে ১৫ দিন, প্রাথমিক স্কুল ১০ দিন খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে টেকনাফ সীমান্তের হোয়াইক্যং এলাকা দিয়ে আজ অস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে মিয়ানমারের সেনা সাদ সাহেব রুজু করার পর দেওবন্দের মাসআলা খতম হয়ে গেছে : মাওলানা আরশাদ মাদানী চলছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিনের বয়ান পুলিশ সদস্যসহ বিশ্ব ইজতেমায় ৭ জনের মৃত্যু বর্তমান সরকারের সঙ্গে সব দেশ কাজ করতে চায়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়পুরহাটে স্কুলছাত্র হত্যায় ১১ জনের মৃত্যুদণ্ড

সংস্কৃত পড়তে পড়তে উধাও… প্রজ্ঞা থেকে নব্য জেএমবি-নেত্রী আয়েশা!

  • নিউজ ডেস্ক
  • প্রকাশিত : ০৬:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ জুলাই ২০২০
  • ৭০০ পঠিত

সংস্কৃত নিয়ে ধনিয়াখালি কলেজে পড়ছিল মেয়ে। দিনটা এখনও স্পষ্ট মনে আছে গীতা দেবনাথের। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬। বাড়ি থেকে বেরনোর সময় কলকাতা যাবে বলে বেরোয় মেয়ে। তার পর থেকে বেপাত্তা। বেশ কয়েক দিন পরে ফোন আসে অচেনা নম্বর থেকে। মাকে মেয়ে জানায়, সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। বিয়েও করেছে সেই ধর্মের এক ছেলেকে। তার পর থেকেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। কিন্তু মেয়ে যে জঙ্গি দলে নাম লিখিয়েছে, তা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি বাবা-মা-আত্মীয় স্বজন থেকে শুরু করে পাড়া প্রতিবেশীরাও।

শনিবার সকালে কাগজে ছবি দেখে সবাই চিনতে পারেন, আইএস ভাবধারায় গড়ে ওঠা নব্য জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) জঙ্গি গোষ্ঠীর মহিলা ব্রিগেডের নেত্রী আয়েশা জন্নত মোহনা আসলে হুগলির ধনিয়াখালির কেশবপুর গ্রামের প্রজ্ঞা দেবনাথ। বৃহস্পতিবার তাকে ঢাকা থেকে পাকড়াও করে বাংলাদেশ পুলিশের সন্ত্রাস দমন শাখা।

শনিবার প্রজ্ঞার মা গীতা বলেন, ‘‘পড়াশোনায় খারাপ ছিল না মেয়ে। মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকে ভালই রেজাল্ট করেছিল। সংস্কৃত নিয়ে ভর্তি হয়েছিল ধনিয়াখালি কলেজে। তবে পড়া শেষ করার আগেই বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় প্রজ্ঞা।” বাবা প্রদীপ দেবনাথ দিনমজুরের কাজ করেন। মা গীতা বাড়িতেই সেলাই করে ফেরি করেন সস্তার জামাকাপড়। দিন আনা দিন খাওয়া অবস্থা। তার মধ্যেই ছেলে এবং মেয়ের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন প্রদীপ-গীতা।

বাংলাদেশ পুলিশ দাবি করেছে, প্রজ্ঞা নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় ২০০৯ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। অনলাইনে জিহাদিরা প্রজ্ঞাকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করে বলে দাবি করেছেন গোয়েন্দারা। কিন্তু গীতা বা প্রদীপ সে কথা মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, সে সময়ে মেয়ের কোনও পরিবর্তন তাঁদের চোখে পড়েনি। তবে কলেজ যাওয়ার পর থেকে যে বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে মেয়ে জড়িয়ে পড়েছিল তা তাঁরা স্বীকার করেন। এলাকার বাসিন্দারাও বলেন, ‘‘প্রজ্ঞা কলেজে পড়ার সময় থেকেই বাইরের লোকজন আসা যাওয়া শুরু করে ওদের বাড়িতে। তার পর আমরা প্রতিবাদ করলে বাইরের লোকের আসা যাওয়া বন্ধ হয়।”

গীতা এ দিন বলেন, ‘‘আমার স্বামী দীর্ঘ দিন ধরে বেকার। ছেলে একটা বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থায় চাকরি করত। কিন্তু সেই চাকরিও লকডাউনের সময়ে চলে গিয়েছে।”

২০১৬ সালে যখন ফোন করে প্রজ্ঞা ইসলাম ধর্ম নেওয়ার কথা বলে, সেই সময়ে সে জানিয়েছিল যে, বাংলাদেশে রয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের এই গ্রেফতারির পর প্রশ্ন উঠছে, আইএস এবং সম মনোভাবাপন্ন সংগঠনগুলির নিয়োগ রোখা বা নজরদারির দায়িত্বে থাকা গোয়েন্দা সংগঠনগুলোর ভূমিকা নিয়েও। একটি মেয়ে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশ চলে গেল এবং ইসলাম ধর্ম নিল, সেই খবর গোয়েন্দাদের কাছে কেন পৌঁছল না তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে পুলিশেরই একাংশ।

প্রজ্ঞার ঘটনা প্রমাণ করছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তেই জমি তৈরি করছে এই ধরনের সংগঠন। বাড়ি থেকে পালিয়ে সেই সংগঠনে যোগ দিচ্ছে তরুণ-তরুণীরা। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক আধিকারিকের দাবি, ‘‘ভারতে প্রজ্ঞাই প্রথম কোনও মহিলা, যে ধর্ম পরিবর্তন করে আইএস মদতপুষ্ট সংগঠনে যোগ দিয়েছে।” আর এই প্রবণতা যে যথেষ্ট চিন্তার তা স্বীকার করেন তিনি।

Tag :
জনপ্রিয়

৩ এপ্রিল ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি

সংস্কৃত পড়তে পড়তে উধাও… প্রজ্ঞা থেকে নব্য জেএমবি-নেত্রী আয়েশা!

প্রকাশিত : ০৬:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ জুলাই ২০২০

সংস্কৃত নিয়ে ধনিয়াখালি কলেজে পড়ছিল মেয়ে। দিনটা এখনও স্পষ্ট মনে আছে গীতা দেবনাথের। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬। বাড়ি থেকে বেরনোর সময় কলকাতা যাবে বলে বেরোয় মেয়ে। তার পর থেকে বেপাত্তা। বেশ কয়েক দিন পরে ফোন আসে অচেনা নম্বর থেকে। মাকে মেয়ে জানায়, সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। বিয়েও করেছে সেই ধর্মের এক ছেলেকে। তার পর থেকেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। কিন্তু মেয়ে যে জঙ্গি দলে নাম লিখিয়েছে, তা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি বাবা-মা-আত্মীয় স্বজন থেকে শুরু করে পাড়া প্রতিবেশীরাও।

শনিবার সকালে কাগজে ছবি দেখে সবাই চিনতে পারেন, আইএস ভাবধারায় গড়ে ওঠা নব্য জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) জঙ্গি গোষ্ঠীর মহিলা ব্রিগেডের নেত্রী আয়েশা জন্নত মোহনা আসলে হুগলির ধনিয়াখালির কেশবপুর গ্রামের প্রজ্ঞা দেবনাথ। বৃহস্পতিবার তাকে ঢাকা থেকে পাকড়াও করে বাংলাদেশ পুলিশের সন্ত্রাস দমন শাখা।

শনিবার প্রজ্ঞার মা গীতা বলেন, ‘‘পড়াশোনায় খারাপ ছিল না মেয়ে। মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকে ভালই রেজাল্ট করেছিল। সংস্কৃত নিয়ে ভর্তি হয়েছিল ধনিয়াখালি কলেজে। তবে পড়া শেষ করার আগেই বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় প্রজ্ঞা।” বাবা প্রদীপ দেবনাথ দিনমজুরের কাজ করেন। মা গীতা বাড়িতেই সেলাই করে ফেরি করেন সস্তার জামাকাপড়। দিন আনা দিন খাওয়া অবস্থা। তার মধ্যেই ছেলে এবং মেয়ের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন প্রদীপ-গীতা।

বাংলাদেশ পুলিশ দাবি করেছে, প্রজ্ঞা নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় ২০০৯ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। অনলাইনে জিহাদিরা প্রজ্ঞাকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করে বলে দাবি করেছেন গোয়েন্দারা। কিন্তু গীতা বা প্রদীপ সে কথা মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, সে সময়ে মেয়ের কোনও পরিবর্তন তাঁদের চোখে পড়েনি। তবে কলেজ যাওয়ার পর থেকে যে বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে মেয়ে জড়িয়ে পড়েছিল তা তাঁরা স্বীকার করেন। এলাকার বাসিন্দারাও বলেন, ‘‘প্রজ্ঞা কলেজে পড়ার সময় থেকেই বাইরের লোকজন আসা যাওয়া শুরু করে ওদের বাড়িতে। তার পর আমরা প্রতিবাদ করলে বাইরের লোকের আসা যাওয়া বন্ধ হয়।”

গীতা এ দিন বলেন, ‘‘আমার স্বামী দীর্ঘ দিন ধরে বেকার। ছেলে একটা বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থায় চাকরি করত। কিন্তু সেই চাকরিও লকডাউনের সময়ে চলে গিয়েছে।”

২০১৬ সালে যখন ফোন করে প্রজ্ঞা ইসলাম ধর্ম নেওয়ার কথা বলে, সেই সময়ে সে জানিয়েছিল যে, বাংলাদেশে রয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের এই গ্রেফতারির পর প্রশ্ন উঠছে, আইএস এবং সম মনোভাবাপন্ন সংগঠনগুলির নিয়োগ রোখা বা নজরদারির দায়িত্বে থাকা গোয়েন্দা সংগঠনগুলোর ভূমিকা নিয়েও। একটি মেয়ে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশ চলে গেল এবং ইসলাম ধর্ম নিল, সেই খবর গোয়েন্দাদের কাছে কেন পৌঁছল না তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে পুলিশেরই একাংশ।

প্রজ্ঞার ঘটনা প্রমাণ করছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তেই জমি তৈরি করছে এই ধরনের সংগঠন। বাড়ি থেকে পালিয়ে সেই সংগঠনে যোগ দিচ্ছে তরুণ-তরুণীরা। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক আধিকারিকের দাবি, ‘‘ভারতে প্রজ্ঞাই প্রথম কোনও মহিলা, যে ধর্ম পরিবর্তন করে আইএস মদতপুষ্ট সংগঠনে যোগ দিয়েছে।” আর এই প্রবণতা যে যথেষ্ট চিন্তার তা স্বীকার করেন তিনি।