ঢাকা , শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
রমজানে মাধ্যমিক স্কুল খোলা থাকবে ১৫ দিন, প্রাথমিক স্কুল ১০ দিন খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে টেকনাফ সীমান্তের হোয়াইক্যং এলাকা দিয়ে আজ অস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে মিয়ানমারের সেনা সাদ সাহেব রুজু করার পর দেওবন্দের মাসআলা খতম হয়ে গেছে : মাওলানা আরশাদ মাদানী চলছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিনের বয়ান পুলিশ সদস্যসহ বিশ্ব ইজতেমায় ৭ জনের মৃত্যু বর্তমান সরকারের সঙ্গে সব দেশ কাজ করতে চায়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়পুরহাটে স্কুলছাত্র হত্যায় ১১ জনের মৃত্যুদণ্ড দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু ‘শরীফ থেকে শরীফা’ গল্প পর্যালোচনায় কমিটি গঠন করলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়

জুনে রোগী ব্যাপক বেড়েছে, সংক্রমণ কম ২৭ জেলায়

  • নিউজ ডেস্ক
  • প্রকাশিত : ১০:২৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ জুন ২০২০
  • ১২৯৭ পঠিত

বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলায় গত ৩১ মে পর্যন্ত করোনা শনাক্ত রোগী ছিলেন ২৯৭ জন। ছয়টি জেলাতেই রোগীর সংখ্যা ১০০-এর নিচে ছিল। জুন মাসে এই বিভাগে করোনার সংক্রমণ ব্যাপক হারে বেড়েছে। গতকাল রোববার পর্যন্ত বিভাগে রোগী শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৬০৯ জন। অর্থাৎ গত ২৮ দিনে রোগী বেড়েছে ৭৭৮ শতাংশ।

স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, জুনের শুরু থেকে সংক্রমণের হিসাবটা দ্রুত পাল্টে গেছে। সাধারণ ছুটি শেষে লঞ্চ চলাচল শুরু হওয়ার পর অধিক সংক্রমিত জেলাগুলো থেকে অনেকে বরিশালে এসেছেন। তাঁদের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। হাটবাজার ও পরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলাসহ দেশের ৩১টি জেলায় গত ৩১ মে পর্যন্ত শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা ১০০-এর নিচে ছিল। এখন শুধু লালমনিরহাট, মাগুরা, মেহেরপুর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ—এই ৪ জেলায় শনাক্ত রোগী ১০০-এর নিচে। বাকি ২৭ জেলায় ব্যাপকসংখ্যক রোগী বেড়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটিকে তথ্য বিশ্লেষণে সহযোগিতা করে আসছে চারজনের কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল।
১০০ জনের কম রোগী শনাক্ত হয়েছে, এমন জেলাগুলোকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে বলেছিল বিশেষজ্ঞ দলটি। শহর থেকে গ্রামে এলোমেলো যাওয়া-আসা এবং অফিস-আদালত-দোকানপাট খুলে দেওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকা এবং আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের (কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং) চিহ্নিত করারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।

কারিগরি বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক শাফিউন শিমুল প্রথম আলোকে বলেন, রোগী কম, এমন জেলাগুলোতে শনাক্ত ব্যক্তিকে আইসোলেশনে (বিচ্ছিন্নকরণ) নেওয়া এবং কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং করা সহজ ছিল। সেটা করা সম্ভব হলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা যেত। কিন্তু কাজগুলো ঠিকভাবে হয়নি।

আইইডিসিআরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, কম সংক্রমিত জেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী বেড়েছে খুলনা ও বরিশাল জেলায়। খুলনাতে রোগী বেড়েছে ১ হাজার ৯৪০ শতাংশ, বরিশালে ১ হাজার ৯৩০ শতাংশ।রোগী বেশি বেড়েছে সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, পাবনা ও কুষ্টিয়াতে। অপেক্ষাকৃত কম রোগী বেড়েছে কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড় ও চুয়াডাঙ্গায়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে অনেক জেলায় সংক্রমণ বাড়ছে। কারিগরি কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করতে স্বাস্থ্য বিভাগ ও সিভিল সার্জনদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যেসব জেলায় এখনো সংক্রমণ কম রয়েছে, শুধু সেগুলোতে নয়, অন্যান্য জেলায়ও সংক্রমণ ঠেকাতে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

সংক্রমণ বেড়েছে কয়েক শ শতাংশ

গত ৯ এপ্রিল বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলার দুই ব্যক্তির করোনা পজিটিভ হওয়ার মধ্য দিয়ে বরিশাল বিভাগে করোনা রোগী শনাক্ত হয়। মে মাসের শেষ পর্যন্ত বরিশাল বিভাগে সংক্রমণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে ছিল।

গত ৩১ মে বরিশাল জেলায় আক্রান্ত ছিলেন ৭০ জন। গতকাল রোববার জেলায় আক্রান্ত দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪২২ জনে। পটুয়াখালীতে শনাক্ত ছিলেন ৮২ জন, গতকাল তা দাঁড়িয়েছে ৩২৬ জনে। বরগুনা, ভোলা, ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলায়ও আক্রান্ত বেড়েছে।

তবে আক্রান্ত বাড়লেও বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় মাত্র একটি করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের এই কেন্দ্রে দৈনিক ১৮৮টি নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা আছে। ফলে করোনা পরীক্ষা করাতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে ওই ছয় জেলার বাসিন্দাদের।

বরিশাল স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক বাসুদেব কুমার দাস প্রথম আলোকে বলেন, গত ২৫ মে রোজার ঈদের সময় ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জের মতো বেশি সংক্রমিত জেলা থেকে অনেকে বরিশাল বিভাগে এসেছেন। লঞ্চ চলাচলে কোনো ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়নি। পরীক্ষার সংখ্যাও আগের থেকে কিছুটা বেড়েছে। ফলে সংক্রমণে উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে। পরীক্ষা বাড়াতে ভোলায় একটি আরটিপিসিআর যন্ত্র বসানো হয়েছে।

খুলনা বিভাগের ১০টি জেলার মধ্যে যশোর বাদে বাকি ৯ জেলাতেই ৩১ মে পর্যন্ত শনাক্ত রোগী ১০০-এর নিচে ছিল। গতকাল পর্যন্ত মাগুরা ও মেহেরপুর বাদে বাকি সব জেলায়ই আক্রান্ত বেড়েছে কয়েক গুণ। সবচেয়ে বেশি রোগী বেড়েছে খুলনা জেলায়। ৩১ মে পর্যন্ত খুলনা জেলায় রোগী ছিলেন ৭৬ জন। এখন রোগী বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৫১ জনে।

পাবনায় গতকাল পর্যন্ত করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৪৩০ জন। ৩১ মে এই জেলায় রোগী ছিলেন ৪৫ জন। রোগী বেড়েছে ৮৫৫ শতাংশ। জেলার সিভিল সার্জন মেহেদী ইকবাল প্রথম আলোকে বলেন, ঈদের পর থেকে পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে। অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করতে চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে স্বাস্থ্য বিভাগের লোকবল-সংকট রয়েছে।

ঢাকা বিভাগের রাজবাড়ী ও টাঙ্গাইল জেলায় গত ২৮ দিনে করোনা শনাক্ত রোগী বেড়েছে যথাক্রমে ১৭৬ শতাংশ ও ৯১৫ শতাংশ। তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতেও বেড়েছে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা।

১০০-এর কম রোগী চার জেলায়

করোনা রোগী সবচেয়ে কম শনাক্ত হয়েছে মেহেরপুর জেলায়। গতকাল পর্যন্ত মেহেরপুরে ৫৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, যেটি গত ৩১ মে ছিল ২৫ জন। এখন পর্যন্ত লালমনিরহাটে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৭৬ জনের, মাগুরাতে ৯৭ জনের আর চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৯৯ জনের। দেশের এই ৪ জেলাতেই শনাক্ত রোগী ১০০-এর নিচে রয়েছে।

মেহেরপুরের সিভিল সার্জন নাসির উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে সবাই যেন মাস্ক পরে চলাচল করেন, সেটি নিশ্চিত করতে প্রশাসন ও পুলিশ সহযোগিতা করছে। মেহেরপুরে যতজন আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশই অন্য জেলা থেকে আসা ব্যক্তিদের সংস্পর্শে এসেছিলেন। তাই অন্য জেলা থেকে কেউ এলে তাঁদের বাধ্যতামূলকভাবে কোয়ারেন্টিনে রাখা হচ্ছে।

জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, সংক্রমণ এখনো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। দেশজুড়ে হটস্পটগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো ১৪ থেকে ২৮ দিন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি নিশ্চিত করতেই হবে। আর এটি করতে হলে স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও অন্য অংশীজনদের আটঘাট বেঁধে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।

Tag :
জনপ্রিয়

রমজানে মাধ্যমিক স্কুল খোলা থাকবে ১৫ দিন, প্রাথমিক স্কুল ১০ দিন

জুনে রোগী ব্যাপক বেড়েছে, সংক্রমণ কম ২৭ জেলায়

প্রকাশিত : ১০:২৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ জুন ২০২০

বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলায় গত ৩১ মে পর্যন্ত করোনা শনাক্ত রোগী ছিলেন ২৯৭ জন। ছয়টি জেলাতেই রোগীর সংখ্যা ১০০-এর নিচে ছিল। জুন মাসে এই বিভাগে করোনার সংক্রমণ ব্যাপক হারে বেড়েছে। গতকাল রোববার পর্যন্ত বিভাগে রোগী শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৬০৯ জন। অর্থাৎ গত ২৮ দিনে রোগী বেড়েছে ৭৭৮ শতাংশ।

স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, জুনের শুরু থেকে সংক্রমণের হিসাবটা দ্রুত পাল্টে গেছে। সাধারণ ছুটি শেষে লঞ্চ চলাচল শুরু হওয়ার পর অধিক সংক্রমিত জেলাগুলো থেকে অনেকে বরিশালে এসেছেন। তাঁদের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। হাটবাজার ও পরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলাসহ দেশের ৩১টি জেলায় গত ৩১ মে পর্যন্ত শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা ১০০-এর নিচে ছিল। এখন শুধু লালমনিরহাট, মাগুরা, মেহেরপুর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ—এই ৪ জেলায় শনাক্ত রোগী ১০০-এর নিচে। বাকি ২৭ জেলায় ব্যাপকসংখ্যক রোগী বেড়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটিকে তথ্য বিশ্লেষণে সহযোগিতা করে আসছে চারজনের কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল।
১০০ জনের কম রোগী শনাক্ত হয়েছে, এমন জেলাগুলোকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে বলেছিল বিশেষজ্ঞ দলটি। শহর থেকে গ্রামে এলোমেলো যাওয়া-আসা এবং অফিস-আদালত-দোকানপাট খুলে দেওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকা এবং আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের (কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং) চিহ্নিত করারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।

কারিগরি বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক শাফিউন শিমুল প্রথম আলোকে বলেন, রোগী কম, এমন জেলাগুলোতে শনাক্ত ব্যক্তিকে আইসোলেশনে (বিচ্ছিন্নকরণ) নেওয়া এবং কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং করা সহজ ছিল। সেটা করা সম্ভব হলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা যেত। কিন্তু কাজগুলো ঠিকভাবে হয়নি।

আইইডিসিআরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, কম সংক্রমিত জেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী বেড়েছে খুলনা ও বরিশাল জেলায়। খুলনাতে রোগী বেড়েছে ১ হাজার ৯৪০ শতাংশ, বরিশালে ১ হাজার ৯৩০ শতাংশ।রোগী বেশি বেড়েছে সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, পাবনা ও কুষ্টিয়াতে। অপেক্ষাকৃত কম রোগী বেড়েছে কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড় ও চুয়াডাঙ্গায়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে অনেক জেলায় সংক্রমণ বাড়ছে। কারিগরি কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করতে স্বাস্থ্য বিভাগ ও সিভিল সার্জনদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যেসব জেলায় এখনো সংক্রমণ কম রয়েছে, শুধু সেগুলোতে নয়, অন্যান্য জেলায়ও সংক্রমণ ঠেকাতে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

সংক্রমণ বেড়েছে কয়েক শ শতাংশ

গত ৯ এপ্রিল বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলার দুই ব্যক্তির করোনা পজিটিভ হওয়ার মধ্য দিয়ে বরিশাল বিভাগে করোনা রোগী শনাক্ত হয়। মে মাসের শেষ পর্যন্ত বরিশাল বিভাগে সংক্রমণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে ছিল।

গত ৩১ মে বরিশাল জেলায় আক্রান্ত ছিলেন ৭০ জন। গতকাল রোববার জেলায় আক্রান্ত দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪২২ জনে। পটুয়াখালীতে শনাক্ত ছিলেন ৮২ জন, গতকাল তা দাঁড়িয়েছে ৩২৬ জনে। বরগুনা, ভোলা, ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলায়ও আক্রান্ত বেড়েছে।

তবে আক্রান্ত বাড়লেও বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় মাত্র একটি করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের এই কেন্দ্রে দৈনিক ১৮৮টি নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা আছে। ফলে করোনা পরীক্ষা করাতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে ওই ছয় জেলার বাসিন্দাদের।

বরিশাল স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক বাসুদেব কুমার দাস প্রথম আলোকে বলেন, গত ২৫ মে রোজার ঈদের সময় ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জের মতো বেশি সংক্রমিত জেলা থেকে অনেকে বরিশাল বিভাগে এসেছেন। লঞ্চ চলাচলে কোনো ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়নি। পরীক্ষার সংখ্যাও আগের থেকে কিছুটা বেড়েছে। ফলে সংক্রমণে উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে। পরীক্ষা বাড়াতে ভোলায় একটি আরটিপিসিআর যন্ত্র বসানো হয়েছে।

খুলনা বিভাগের ১০টি জেলার মধ্যে যশোর বাদে বাকি ৯ জেলাতেই ৩১ মে পর্যন্ত শনাক্ত রোগী ১০০-এর নিচে ছিল। গতকাল পর্যন্ত মাগুরা ও মেহেরপুর বাদে বাকি সব জেলায়ই আক্রান্ত বেড়েছে কয়েক গুণ। সবচেয়ে বেশি রোগী বেড়েছে খুলনা জেলায়। ৩১ মে পর্যন্ত খুলনা জেলায় রোগী ছিলেন ৭৬ জন। এখন রোগী বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৫১ জনে।

পাবনায় গতকাল পর্যন্ত করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৪৩০ জন। ৩১ মে এই জেলায় রোগী ছিলেন ৪৫ জন। রোগী বেড়েছে ৮৫৫ শতাংশ। জেলার সিভিল সার্জন মেহেদী ইকবাল প্রথম আলোকে বলেন, ঈদের পর থেকে পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে। অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করতে চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে স্বাস্থ্য বিভাগের লোকবল-সংকট রয়েছে।

ঢাকা বিভাগের রাজবাড়ী ও টাঙ্গাইল জেলায় গত ২৮ দিনে করোনা শনাক্ত রোগী বেড়েছে যথাক্রমে ১৭৬ শতাংশ ও ৯১৫ শতাংশ। তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতেও বেড়েছে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা।

১০০-এর কম রোগী চার জেলায়

করোনা রোগী সবচেয়ে কম শনাক্ত হয়েছে মেহেরপুর জেলায়। গতকাল পর্যন্ত মেহেরপুরে ৫৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, যেটি গত ৩১ মে ছিল ২৫ জন। এখন পর্যন্ত লালমনিরহাটে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৭৬ জনের, মাগুরাতে ৯৭ জনের আর চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৯৯ জনের। দেশের এই ৪ জেলাতেই শনাক্ত রোগী ১০০-এর নিচে রয়েছে।

মেহেরপুরের সিভিল সার্জন নাসির উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে সবাই যেন মাস্ক পরে চলাচল করেন, সেটি নিশ্চিত করতে প্রশাসন ও পুলিশ সহযোগিতা করছে। মেহেরপুরে যতজন আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশই অন্য জেলা থেকে আসা ব্যক্তিদের সংস্পর্শে এসেছিলেন। তাই অন্য জেলা থেকে কেউ এলে তাঁদের বাধ্যতামূলকভাবে কোয়ারেন্টিনে রাখা হচ্ছে।

জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, সংক্রমণ এখনো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। দেশজুড়ে হটস্পটগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো ১৪ থেকে ২৮ দিন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি নিশ্চিত করতেই হবে। আর এটি করতে হলে স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও অন্য অংশীজনদের আটঘাট বেঁধে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।